Samakal:
2025-05-01@00:11:33 GMT

৭৩ শতাংশের দেহে মেলেনি আলামত

Published: 8th, April 2025 GMT

৭৩ শতাংশের দেহে মেলেনি আলামত

ঝিনাইদহ সদরের এক নারী গত ১০ মার্চ ধর্ষণ ও অপহরণ মামলা করেন। পুলিশ অভিযুক্ত টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের যুবক ও তার পরিবারের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। ওই নারীকে ঝিনাইদহে ফিরিয়ে আনে। পরে ডাক্তারি পরীক্ষায় তাঁর শরীরে ধর্ষণের কোনো আলামত মেলেনি বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. রোকনুজ্জামান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই নারী প্রবাসীর স্ত্রী। সম্পর্ক করে গত বছর ২০ নভেম্বর টাঙ্গাইলে অভিযুক্ত যুবকের বাড়িতে ওঠেন। চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি মেয়েটির বাবা সদর থানায় জিডি করলে পুলিশ টাঙ্গাইল থেকে তাঁকে উদ্ধার করে। এর প্রায় দেড় মাস পর তিনি মামলা করেন। জানতে চাইলে মেয়েটির বাবা বলেন, ‘ছেলেটি ফুসলিয়ে আমার মেয়েকে নিয়ে যায়। তার কাছে আমাদের কিছু গহনা, টাকাসহ দামি সরঞ্জাম রয়েছে। ফেরত না দেওয়ায় মামলা করেছি। এগুলো দিলে মামলা তুলে নেওয়া হবে।’
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত ১৫ মাসে ধর্ষণের অভিযোগে হাসপাতালে ১৫৩ নারী-শিশুর ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে। এতে প্রায় ৭৩ শতাংশের দেহে কোনো আলামত মেলেনি। যাদের মিলেছে, তাদের প্রায় ৭৩ শতাংশ শিশু-কিশোরী।
জেলার ছয় থানায় গত বছর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৫৯টি মামলা হয়। আর চলতি বছর জানুয়ারিতে ৪, ফেব্রুয়ারিতে ২ ও মার্চে ১০টি ধর্ষণ মামলা রেকর্ড হয়। পুলিশের ভাষ্য, জেলায় যে হারে ধর্ষণের মামলা হয়, প্রকৃত ঘটনা তত নয়। আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে বয়স ১৮ বছরের কম হলেই অভিভাবকদের অভিযোগ মামলা হিসেবে নিতে হয়।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ধর্ষণ মামলায় ২১ অপ্রাপ্ত বয়স্কসহ ৩২ জনকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ভর্তি করা হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯ জনকে পরীক্ষা করে দুই শিশুসহ পাঁচজনের শরীরে স্প্যাম পজিটিভ মেলে। এর আগে গত বছর ১২১ জন ভর্তি হলেও ডাক্তারি পরীক্ষা হয় ৮০ নারী-শিশুর। তাদের মধ্যে ২২ জনের শরীরে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে আবার ১৬ জনেরই বয়স ১৮ বছরের নিচে। পরীক্ষার ফলাফল বিবেচনায়, চলতি বছরের তিন মাসে ৭৪ এবং গত বছর ৭৩ শতাংশ নারীর ক্ষেত্রে ধর্ষণের আলামত মেলেনি। চলতি বছর পরীক্ষায় যারা পজিটিভ, তাদের ৪০ ভাগ শিশু, যা গত বছর ছিল প্রায় ৭৩ শতাংশ।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ গাইনি বিশেষজ্ঞ মো.

আলাউদ্দিন বলেন, হাসপাতালে আসা ৪০ ভাগ নারীর ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না। ধর্ষণের আলামত নষ্ট হলে ডিএনএ টেস্ট প্রয়োজন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে করা হয় না।
অবশ্য চিকিৎসকরা বলছেন, ঘটনার পর ৭২ ঘণ্টা পার হলে, ভুক্তভোগী গোসল করলে, পোশাক পরিবর্তনসহ নানা কারণে ধর্ষণের আলামত নষ্ট হয়। ফলে পরীক্ষায় সঠিক চিত্র পাওয়া যায় না। ডিএনএ পরীক্ষা করানো গেলে সঠিক তথ্য মিলবে। এ জন্য আদালতের নির্দেশনা প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ছেলেমেয়েরা পরিবারের অমতে সম্পর্ক করে শারীরিক সম্পর্কে জড়াচ্ছে। পরে প্রতারণার শিকার কিংবা পরিবারের চাপে ধর্ষণের মামলা করছে। প্রাপ্তবয়স্ক নারীরাও স্বেচ্ছায় শারীরিক সম্পর্ক করে বনিবনা না হলে মামলা করছেন। পারিবারিক বা গ্রাম্য বিরোধেও প্রতিপক্ষকে হেয় করতে ঠুকে দেওয়া হচ্ছে ধর্ষণের মামলা।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা ঝিনাইদহের সভাপতি আমিনুর রহমান টুকু বলেন, ‘প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য এখন হরহামেশা ধর্ষণের অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এ জন্য তদন্তে পুলিশ ও ডাক্তারি পরীক্ষার সময় চিকিৎসকদের সতর্ক থাকা জরুরি।’
ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মনজুর মোরশেদ জানান, তারা মামলার তদন্ত ও মেডিকেল রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়ার চেষ্টা করেন। এর পর আদালত বিচারিক কার্যক্রম চালিয়ে নেন। ধর্ষণের ঘটনা প্রতিরোধে সামাজিক ও পারিবারিক সচেতনতা বেশি দরকার বলে মনে করেন তিনি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঝ ন ইদহ সদর পর ক ষ য় গত বছর বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

করিডোরের জন্য দু’দেশের সম্মতি লাগবে: জাতিসংঘ 

রাখাইন রাজ্যের বেসামরিক নাগরিকের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠাতে করিডোরের বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সম্মতি প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। 

ঢাকার জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় সমকালকে এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশে জাতিসংঘ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি নিয়েও উদ্বিগ্ন তারা।

জাতিসংঘ অন্য অংশীদারকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন জোরদার করবে। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে যে কোনো মানবিক সহায়তা বা সরবরাহের জন্য প্রথমে দুই সরকারের মধ্যে সম্মতি প্রয়োজন। সীমান্ত অতিক্রম করে সহায়তা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর অনুমতি নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি ছাড়া জাতিসংঘের সরাসরি ভূমিকা সীমিত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত রোববার এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোরের ব্যাপারে সম্মত। কারণ এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সেই শর্ত যদি পালন করা হয়, অবশ্যই আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’ 

এ খবর চাউর হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নের শঙ্কা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সরকার কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

তথাকথিত মানবিক করিডোর স্থাপন নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কারও সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনা হয়নি বলে দাবি করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

গত অক্টোবরে জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্প (ইউএনডিপি) রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে ১২ পাতার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে রাখাইনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়। রাখাইনের পণ্য প্রবেশের জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে, আয়ের কোনো উৎস নেই। ভয়াবহ মূল্যস্থিতি, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনে ধস, জরুরি সেবা এবং সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা করছে জাতিসংঘ। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ