শারীরিক অসুস্থতা

বয়স বাড়লে পাকস্থলী ও অন্ত্রের বিভিন্ন রকম জটিলতা শুরু হয়। অ্যাসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম ও পেট ফাঁপার মতো সমস্যাগুলো অহরহই হয়। আর পেটের সমস্যা হলে তো একদম খেতেই ইচ্ছা করে না।

ডায়াবেটিস, ক্রনিক কিডনির রোগ, লিভারের অসুখ, ক্যানসার, আর্থ্রাইটিস বা যেকোনো ব্যথা ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে খাওয়ার রুচি কমে যায়।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন কমতে থাকে। আবার বয়স বেড়ে গেলে শরীরে মেটাবলিজম কমে যায়, ফলে খাবারের আগ্রহ কমে।

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধে আর অনেক রকমের ওষুধ খেতে হয়। এর মধ্যে অনেক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ক্ষুধামান্দ্য হতে পারে।

বেশির ভাগ মানুষের বয়স হয়ে গেলে দাঁতে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। দাঁত পড়ে যাওয়া, মাড়ি ফুলে যাওয়া, দাঁতব্যথা অন্যতম। এমন সমস্যায় খাবার চিবানো ও খেতে অসুবিধা হয়।

বয়স হয়ে গেলে খাবারের স্বাদ ও গন্ধ নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে খাবারের আগ্রহ কমে।

নিউরোলজিক্যাল সমস্যা, যেমন স্ট্রোক, পারকিনসনস ডিজিজ ও ডিমেনশিয়ায় খাওয়ার রুচি কমে যায়।

আরও পড়ুনবয়স্কদের পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমাতে কী করবেন০১ জানুয়ারি ২০২৫মানসিক কারণ

একাকিত্ব, ডিপ্রেশন ও অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে ক্ষুধামান্দ্য হতে পারে। আবার মানসিক রোগের ওষুধের কারণেও খাবারে অরুচি হয়।

ডিমেনশিয়া বা আলঝেইমারস ডিজিজের কারণে বয়স্ক মানুষেরা অনেক সময় না খেয়েও মনে করেন খেয়েছেন বা খাওয়ার কথা ভুলে যান।

সামাজিক কারণ

বয়স্কদের খাবারে আগ্রহ কমে যাওয়ার একটা বড় কারণ জীবনসঙ্গী হারানো বা একাকিত্ব। আবার এখন একক পরিবার হওয়ার কারণে পরিবারের সবার সঙ্গে না খেতে পারার কারণেও অনেক বয়স্ক মানুষের খেতে ইচ্ছা করে না। খাবারে বৈচিত্র্য আনতে না পারলেও এই সমস্যা দেখা দেয়। একই খাবার খেতে খেতে বয়স্ক মানুষেরা বিরক্ত হয়ে যান।

অর্থনৈতিক কারণে পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাবার কিনতে না পারাটাও একটা কারণ।

সমাধান কী

প্রথমেই দেখতে হবে খাবারে অরুচি কোনো রোগের কারণে হচ্ছে কি না। অরুচির সঙ্গে যদি ওজন কমে যায়, তাহলে অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে।

একবারে অনেক খাবার না দিয়ে বারবার অল্প অল্প করে খাবার দিতে হবে।

পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে খেতে পারলে বয়স্করা সবার সঙ্গে গল্প করতে করতেই খাবেন। মাঝেমধ্যে বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনেরা মিলে খাবারের আয়োজন করা যেতে পারে।

একই খাবার না দিয়ে খাবারে বৈচিত্র্য আনুন। চেষ্টা করুন বয়স্কদের নতুন কোনো পদ বানিয়ে খাওয়াতে।

চিকিত্সকের পরামর্শে মাল্টিভিটামিন বা পুষ্টিকর সাপ্লিমেন্ট দেওয়া যেতে পারে।

সম্ভব হলে প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটির অভ্যাস করাতে হবে।

ডা.

আফলাতুন আকতার জাহান, জুনিয়র কনসালট্যান্ট, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা

আরও পড়ুনবার্ধক্যের বিষণ্নতা কাটিয়ে উঠতে যা করা জরুরি২০ মার্চ ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সমস য বয়স ক

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ