তিনটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসা বাড়ানো ও বিনিয়োগের কথা জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে স্পেনের খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিটেক্স, সিমেন্ট খাতের কোম্পানি লাফার্জহোলসিম ও চীনের অ্যাপারেল কোম্পানি হান্ডা ইন্ডাস্ট্রিজ।

রাজধানী ঢাকায় চার দিনের বিনিয়োগ সম্মেলনের তৃতীয় দিনে আজ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনা দেখতে আগামী মাসে ২০০ বিনিয়োগকারীসহ বাংলাদেশ সফরে আসার কথা জানিয়েছেন চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী।

বিডার আয়োজনে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০২৫’ শীর্ষক চার দিনের বিনিয়োগ সম্মেলন গত সোমবার শুরু হয়। আজ বৃহস্পতিবার সম্মেলনের শেষ দিন। এই সম্মেলনে বিশ্বের ৫০টি দেশের ৫৫০ জনের বেশি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, চীনের তৈরি পোশাক কোম্পানি হান্ডা ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশে ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছে। তারা অর্থনৈতিক অঞ্চলে টেক্সটাইল ও ডাইং খাতে ১০০ মিলিয়ন ডলার এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে পোশাকশিল্পে ৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এ লক্ষ্যে আজ বিডা ও হান্ডা (ঢাকা) টেক্সটাইল কোম্পানি একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আজ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ইনডিটেক্স ও হোলসিম গ্রুপের শীর্ষ নির্বাহীরা সাক্ষাৎ করেন। এ সময় ইনডিটেক্সের কর্মকর্তারা তাঁদের জন্য বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ (পণ্য) সরবরাহকারী হিসেবে উল্লেখ করে এখান থেকে পণ্য নেওয়ার পরিমাণ আরও বাড়ানোর কথা জানায়। হোলসিমের কর্মকর্তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কার্বন ক্যাপচার প্রকল্প চালুর কথাও জানায়।

এক প্রশ্নের জবাবে আশিক চৌধুরী জানান, আগামী মাসে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী প্রায় ২০০ জন বিনিয়োগকারী নিয়ে বাংলাদেশে আসবেন। তাঁরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চান। পর্যাপ্ত সহায়তা দিতে পারলে তাঁরা দ্রুত বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

দুবাইভিত্তিক বৈশ্বিক সরবরাহ ও বন্দর উন্নয়ন কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ড গ্রুপের চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ বিন সুলায়েম প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ সময় ডিপি ওয়ার্ল্ড প্রধান চট্টগ্রামের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানান বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান জানান, বাংলাদেশ সফররত যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য দূত ব্যারোনেস রোজি উইন্টারটন দেশের স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা খাতে প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি বিনিময় ও দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারত্বের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

এ ছাড়া টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উন্নয়নের লক্ষ্যে বিডা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) একটি অভিপত্র সই করেছে বলে জানান আশিক চৌধুরী।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘বিনিয়োগ সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, বাংলাদেশকে নিয়ে এত দিন ধরে যে নেতিবাচক প্রচারণা চলে আসছে, সেটিকে ইতিবাচক করা। বিনিয়োগ সম্মেলনে যেসব ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী এসেছেন, তাঁরা এখানে শ্রমঘন শিল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। আমরাও এই দিকটিকে গুরুত্ব দিই।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা

কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।

‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।

পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।

দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।

শিল্পে নতুন সংযোগে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।

জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।

সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে

পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।

গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা

পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
  • ইরানের ভুলে আজারবাইজান যেভাবে ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকে পড়ল
  • গাজায় দুর্ভিক্ষের অংক
  • গ্যাস সংকট
  • ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতে যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে
  • ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
  • কাফকো সার কারখানায় গ্যাস বিক্রির চুক্তি সই
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • পাবনায় আগাম পাটের বাজার চড়া, বেশি দাম পেয়ে কৃষক খুশি
  • নবায়নযোগ্য জ্বালানির যুগ কড়া নাড়ছে দরজায়