টাকা আত্মসাৎকারীকে জামিন দেওয়ায় গ্রাহকদের ক্ষোভ
Published: 10th, April 2025 GMT
উপজেলার রামশালা গ্রামের মিতু আক্তারের প্রবাসী স্বামী আক্কেলপুর ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট শাখায় পাঠান। সে টাকা কৌশলে আত্মসাৎ করে জমি-বাড়ি করেছে ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা। টাকার জন্য মিতুর সংসারে অশান্তি শুরু হয়েছে। টাকা না পেলে সংসার ভেঙে যাবে তাঁর।
একই ব্যাংকে আমানতকারী জামাল উদ্দীনের প্রবাসী তিন ছেলে নিয়মিত টাকা পাঠান। ওই ব্যাংকের ক্যাশিয়ার তাদের কষ্টার্জিত ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গোপীনাথপুরের লিপি বেগম এ শাখায় স্থায়ী আমানত রেখেছিলেন। তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ১১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় মিতু আক্তার, জামাল উদ্দিন, লিপি বেগমসহ অসংখ্য গ্রাহক বুধবার সকাল থেকে ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট শাখা ও উপজেলা পরিষদের সামনে সড়কে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন করেছেন। ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচিতে প্রতারিত গ্রাহক ছাড়াও দারুল কোরআন মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এর আগে তারা প্রতারকদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। কর্মসূচি থেকে ১৩ এপ্রিল একই দাবিতে ইসলামী ব্যাংক জয়পুরহাট শাখার সামনে মানববন্ধন করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা জানান, ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট শাখার ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা কৌশলে গ্রাহকদের আঙুলের ছাপ নিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিতেন। তিনি বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদসহ ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে দেড় কোটি টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন। ২৩ মার্চ ঘটনাটি জানাজানি হলে গ্রাহকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়ে মাসুদ রানাকে অবরুদ্ধ করেন। তিনি সাংবাদিকসহ সবার সামনে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করেন। ওইদিনই আক্কেলপুর দারুল কোরআন মাদ্রাসার মুহতামিম (প্রধান শিক্ষক) ফিরোজ আহম্মেদ বাদী হয়ে থানায় মামলা করলে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এক দিন পর আদালত থেকে তারা জামিনে ছাড়া পান। তিনি বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এতে গ্রাহকরা আমানতের টাকা পাওয়া ও জড়িতদের শাস্তির বিষয়টি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। তারা জামিন বাতিল করে আসামিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
মানববন্ধনে আক্কেলপুর দারুল কোরআন মাদ্রাসার মুহতামিম ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট শাখায় মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য এতিম ছাত্রদের দান-খয়রাতের টাকা রাখা ছিল। ডিজিটাল প্রতারণার মাধ্যমে কর্মকর্তারা মাদ্রাসার সাড়ে ৩৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এখন মাদ্রাসা পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এতিমদের টাকা দ্রুত ফেরত চাই।
ইসলামী ব্যাংক জয়পুরহাট শাখার ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত দেড় কোটি টাকারও বেশি আত্মসাতের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এ ঘটনায় ব্যাংকের পক্ষ থেকে গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত করা হচ্ছে। আপাতত ওই শাখায় লেনদেন বন্ধ রাখা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
না’গঞ্জে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মানববন্ধন : হুশিয়ারী
বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে নারায়ণগঞ্জে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা। সমাবেশ শেষে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়।
বুধবার (৩০ জুলাই) সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সিদ্ধিরগঞ্জ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত এই কর্মসুচিতে সিদ্ধিরগঞ্জের দেড় শতাধিক কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অংশ নেয়। শিক্ষার্থীদের হাতে " প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫ এ বৈষম্য কেন? শিক্ষা উপদেষ্টা জবাব চাই" সহ বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্লেকার্ড শোভা পায়।
সিদ্ধিরগঞ্জ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা বিল্লাল হোসেন রবিন, ঢাকা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের সভাপতি জি এইচ ফারুক, বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন পরিচালক ঐক্য পরিষদের সভাপতি মো: সামসুজ্জামান, প্রধান সমন্বয়ক মো: সাইফুল ইসলাম রুবেল, মহাসচিব মো: সাখাওয়াত হোসেন খান, সিদ্ধিরগঞ্জ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ হোসেন ঢালী, শিক্ষক কাওসার আহমেদ, এসএম বিজয়, আল মামুন , তরিকুল ইসলাম, বাহাউদ্দিন সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত ১৭ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের জারি করা প্রজ্ঞাপনে শুধুমাত্র সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে। এতে দীর্ঘদিন ধরে এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া বেসরকারি, কিন্ডারগার্টেন ও এমপিও-বহির্ভূত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত ও হতাশ হয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, “আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। অথচ কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত কোমলমতি শিশুদের বৃত্তি পরীক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে তাদের মৌলিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে।”
তারা বলেন, দেশের প্রায় ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেনে প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে, যাদের একটি বড় অংশ দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আশায় এগিয়ে এসেছে। এখন এই সিদ্ধান্ত তাদের স্বপ্ন ও শ্রমের প্রতি অবিচার।
বক্তারা অভিযোগ করেন, সরকার বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ার অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে এই প্রজ্ঞাপন সেই প্রতিশ্রুতির পরিপন্থী। তারা প্রশ্ন তোলেন, “ই আই আই এন নম্বরধারী নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যদি এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়, তবে কেন নিবন্ধিত কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না?”
বক্তারা আরও বলেন ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন, প্রতিবাদ ও স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে এই বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
সমাবেশ থেকে অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন বাতিল করে সরকারি ও বেসরকারি সব প্রাথমিক শিক্ষার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়। অন্যথায় কঠোর আন্দোলন গড়ে তোরা হবে।
মানববন্ধন ও সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, ১নং ওয়ার্ড প্রতিনিধি নেজাম উদ্দিন শাহীন, ২নং ওয়ার্ড প্রতিনিধি জাকির উল্লাহ সুজুন, ৩নং ওয়ার্ড প্রতিনিধি মো: আজহারুল ইসলাম, ৫নং ওয়ার্ড প্রতিনিধি মো: শামীম, ৬নং ওয়ার্ড প্রতিনিধি মো: জাবের হোসেন, ৮নং ওয়ার্ড প্রতিনিধি মো: আল আমিন, ১০ নং ওয়ার্ড প্রতিনিধি এড: মো: খোরশেদ আলম প্রমুখ।