সাভারে আবারও চলন্ত বাসে যাত্রীদের টাকা-মোবাইল-স্বর্ণালংকার লুট
Published: 11th, April 2025 GMT
সাভারে একইদিনে দুটি যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইকারীরা অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে মোবাইল ফোন, নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়।
শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ব্যাংকটাউন ব্রিজের উপরে সাভার পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসে এ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়াও দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মহাসড়কের সিএনবির আগে রাজধানী পরিবহনে তিন ছিনতাইকারী যাত্রীবাহী বাসে ওঠে ধারালো ছুরি দিয়ে ভয় দেখিয়ে যাত্রীদের কাছে থেকে নগদ টাকা পয়সা ও স্বর্ণালংকার লুটে নিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী বাসযাত্রী সাভার প্রেস ক্লাবের সদস্য তায়েফুর রহমান জানান, আমি সাভার পরিবহনের একটি বাসে করে পরিবার নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলাম। বাসটি ব্যাংক টাউন বাসস্ট্যান্ডে থামানো হলে তিনজন যুবক বাসটিতে ওঠে। পরে বাসটি ব্যাংকটাউন ব্রিজের উপর পৌঁছালে নারী যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন, গলার চেইন, কানের দুলসহ স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে নেমে যায়।
তিনি আরও বলেন, ছিনতাইকারীরা আমার স্ত্রীর গলায় থাকা লক্ষাধিক টাকা মূল্যের লকেটসহ এক ভরি ওজনের সোনার চেইন নিয়ে গেছে। এ সময় অন্যান্য নারী যাত্রীদের কাছ থেকে একইভাবে নগদ টাকা স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। আমার ধারণা বাসটির চালক এবং সহকারী ছিনতাইকারীদের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনা হলে ছিনতাইকারীদের তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
সিএনবি এলাকায় যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে ছিনতাইয়ের ঘটনায় বাসযাত্রী আনোয়ার হোসেন জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা আরিচা মহাসড়কের সিএনবির আগে রাজধানী পরিবহনে তিন যুবক বাসে ওঠে ধারালো ছুরির ভয় দেখিয়ে যাত্রীদের কাছে থেকে নগদ টাকা পয়সা ও স্বর্ণালংকার লুটে নিয়ে যায়।
এছাড়াও ঢাকা আরিচা মহাসড়কের ব্যাংক টাউন এলাকায় বেশ কয়েকটি যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
দিনেদুপুরে চলন্ত বাসে বারবার ছিনতাইয়ের ঘটনায় মহাসড়কে চলাচলরত যাত্রীদের মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যাত্রীবাহী বাসে উঠতে ভয় পাচ্ছেন অনেকে। যাত্রীরা মহাসড়কে পুলিশের টহল জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এর আগে গত ২ মার্চ দুপুরে দিকে সাভারের ব্যাংকটাউন এলাকায় রাজধানী পরিবহনের একটি চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এরপর ৪ এপ্রিল একই এলাকায় ইতিহাস পরিবহনের আরেকটি চলন্ত বাসে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
একইস্থানে বার বার এরকম ছিনতাইয়ের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুয়েল মিঞা জানান, ছিনতাইকারীদের ধরতে আমাদের সার্বক্ষণিক টহল টিম কাজ করছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। ঘটনার সময়ও গেন্ডা এলাকায় আমাদের পুলিশের টহল সদস্যরা কাজ করছিল। সাভার পরিবহনের বাসে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি জানতে পেরেছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ছ নত ই স বর ণ ল ক র ল ট চলন ত ব স পর বহন র নগদ ট ক এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করেছে ৬৮% কারখানা
দেশের তৈরি পোশাক খাতের ৩৮৫টি কারখানার ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন ন্যূনতম মজুরি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করেছে ৬৮ শতাংশ কারখানা। বাকি ৩২ শতাংশ বিভিন্ন কারণে সরকারের সর্বশেষ ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এসব কারখানার মধ্যে ২২ শতাংশ আগের চেয়ে মজুরি বাড়িয়েছে।
সাসটেইনেবল টেক্সটাইল ইনিশিয়েটিভ: টুগেদার ফর চেঞ্জ (স্টিচ) এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে এ গবেষণা করে। গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে জরিপ করা হয়। স্টিচ একটি বহুদেশভিত্তিক কর্মসূচি, যা তৈরি পোশাক এবং বস্ত্র খাতের সরবরাহ চেইনে থাকা শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়নে কাজ করে। নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে এথিকাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভ, মনডিয়া এফএনভি এবং ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশন।
শ্রমিক সংখ্যা বিবেচনায় ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের হার বেশি। জরিপে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন ১ হাজার ১১৩ জন শ্রমিক। তাদের মধ্যে ৮১ শতাংশ ন্যূনতম মজুরি পান বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) থাকা সব কারখানা এবং ইপিজেডের বাইরে থাকা বড় কারখানাগুলো ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করেছে। যেসব কারখানা বাস্তবায়ন করেছে, তাদের ৮০ শতাংশ তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর সদস্য।
জরিপের ফল নিয়ে গত মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে শ্রমিক সংগঠন, উদ্যোক্তা, সরকার ও শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করেন। তারা পোশাকশিল্পের ব্যয়, শ্রমিকদের জীবনমান, তাদের ব্যয়ের ওপর মূল্যস্ফীতির প্রভাবসহ বিভিন্ন বিষয়ে আরও গবেষণার সুপারিশ করেন। তারা ন্যূনতম মজুরির ওপর শিল্পের অংশীজন নিয়ে সংলাপেরও পরামর্শ দেন।
জরিপে ঢাকার ১৩৫টি, গাজীপুরের ১২৮টি, নারায়ণগঞ্জের ৭১টি, চট্টগ্রামের ৪৬টি, ময়মনসিংহের ৪টি এবং কুমিল্লার ১টি কারখানাকে নমুনা হিসেবে নেওয়া হয়। শ্রমিকদের মধ্যে ৬০ শতাংশ নারী এবং ৪০ শতাংশ পুরুষ। শ্রমিকের বাইরে সরকার, শ্রমিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, উদ্যোক্তা, বাণিজ্য সংগঠন এবং নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে তৈরি পোশাক খাতের ওপর সরকার গঠিত ন্যূনতম মজুরি বোর্ড ইপিজেডের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৮০০ টাকা নির্ধারণ করে। ইপিজেডের বাইরের কারখানার জন্য নির্ধারণ করা হয় ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এর আগে ২০১৮ সালে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয় ৮ হাজার টাকা। উল্লেখ্য, সব গ্রেডে আলাদা ন্যূনতম মজুরি রয়েছে। তৈরি পোশাক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিল্প খাত। এ খাতে শ্রমিকের সংখ্যা ৪০ লাখের বেশি, যার অর্ধেকের বেশি নারী। কারখানার সংখ্যা চার হাজারের বেশি। এর মধ্যে প্রায় তিন হাজার বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর সদস্য।
গবেষণার ফলাফলের বিষয়ে এথিকাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভের পরিচালক (কর্মসূচি ও গবেষণা) মুনীর উদ্দীন শামীম সমকালকে বলেন, নমুনাভুক্ত যেসব কারখানা ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি তার বেশির ভাগই মাঝারি বা ছোট কারখানা। অন্যদিকে ইপিজেডভুক্ত এবং বড় কারখানার বেশির ভাগ অতি অল্পসময়ে বাস্তবায়ন শুরু করতে পেরেছে। বাস্তবায়নকারী কারখানার ৮০ শতাংশ বিজিএমইএ অথবা বিকেএমইএর সদস্য। এর মানে তারা সরাসরি রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত। এ প্রবণতার একটি অর্থ হচ্ছে– কারখানাগুলোর বিদ্যমান সক্ষমতা মজুরি বাস্তবায়নে একটি বড় ফ্যাক্টর।
তিনি বলেন, গবেষণায় ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ উঠে এসেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো–পরিচালন ও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়া, মজুরি বাড়ার হারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ক্রেতাগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে পণ্যের দাম না বাড়ানো, প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাব, পর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ব্যবস্থা না থাকা, সরকারি সহযোগিতার অভাব, কিছু ক্ষেত্রে মালিকদের অনিচ্ছা, নিয়মিত ও ধারাবাহিক কার্যাদেশ না থাকা ইত্যাদি। অনেকে বলেছেন, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ সেবা খাতে ক্রমাগত মূল্যস্ফীতির কারণে তাদের পরিচালন ও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিকভাবে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নে অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। অংশীজনরা আরও কিছু বিষয় উল্লেখ করেছেন। অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনায় এমন মত এসেছে যে, ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নে তদারকি সংস্থাগুলোর তেমন কার্যকর উদ্যোগও দেখা যায় না। এছাড়া কার্যকর শ্রমিক প্রতিনিধিত্বের অভাব রয়েছে। কারখানা পর্যায়ে একটি কার্যকর শ্রমিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা গেলে এবং মালিক-শ্রমিক পক্ষের মধ্যে কার্যকর সামাজিক সংলাপের সংস্কৃতি তৈরি করতে পারলে পারস্পরিক জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন আরও সহজতর হয়ে উঠবে বলে তারা মনে করেন।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সমকালকে বলেন, যারা ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করতে পারছে না, তাদের ক্ষেত্রে প্রধান কারণ হলো– ক্রেতা ন্যায্য দাম দিচ্ছে না। তিনি জানান, কোনো কোনো কারখানার মালিক শ্রমিকদের নিয়োগের সময় ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের অক্ষমতার কথা আগেই বলে নেন। তবে ন্যূনতম মজুরি সব কারখানার বাস্তবায়ন করা উচিত। এ কারণে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা এবং ব্র্যান্ড–ক্রেতাদের সংগঠনগুলোকে পোশাকের দাম বাড়ানোর জন্য মধ্যস্ততা করতে হবে।
জরিপে পাওয়া আরও কিছু তথ্য
ন্যূনতম মজুরি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন না করা কারখানার ৩৩ শতাংশ জানিয়েছে, তাদের পরিচালন ব্যয় আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ২৪ শতাংশ জানিয়েছে, তারা ব্র্যান্ড ক্রেতাদের কাছ থেকে তেমন সহযোগিতা পাননি। যারা বাস্তবায়ন করেছেন, তাদের ৭৫ শতাংশ খরচ বাড়ার কথা জানিয়েছেন। জরিপের আওতায় থাকা ৮৩ শতাংশ কারখানা জানিয়েছে, নতুন মজুরি বাস্তবায়নে তারা সরকার কিংবা ক্রেতার সহযোগিতা পাননি। ইপিজেডের ১৮ শতাংশ এবং ইপিজেডের বাইরের ৩৩ শতাংশ কারখানা ক্রেতারা কিছুটা দাম বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তাদের মজুরি বাড়লেও ক্রয়ক্ষমতা বাড়েনি। কেননা বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে বেশি হারে। অন্যদিকে অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে নারীর বেতনের বৈষম্য রয়েছে।