চার দশক আগের কথা। ১৯৮৫ সালের ১৪ এপ্রিল (বাংলা ১৩৯২ সালের প্রথম দিন) ভোরে যশোর শহরে বের হয় বর্ণিল শোভাযাত্রা। এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীর পক্ষে তখন অনুমান করা সম্ভব ছিল না, পরের বছরগুলোয় এটা কীভাবে দ্রুত জেলার সীমানা ডিঙিয়ে যাবে এবং বাংলা বর্ষবরণের এক প্রধান ঐতিহ্যের জন্ম দেবে। বাংলাদেশের মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন জাতিসংঘের ইউনেস্কো স্বীকৃত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এর সূচনা চারুপীঠ যশোরে। ওই শোভাযাত্রার অন্যতম উদ্যোক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করে নিজ জেলায় ফেরা মাহবুব জামাল শামীম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বন্ধু শিল্পী হীরণ্ময় চন্দসহ কয়েকজন। 
গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে সংবাদ সম্মেলন করে মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ ঘোষণা করা হয়। সেই সময় শোভাযাত্রার অন্যতম উদ্যোক্তা শামীম তাঁর প্রিয় প্রাঙ্গণ যশোর পৌর পার্কে অবস্থিত চারুপীঠ আর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটে শোভাযাত্রার প্রস্তুতির কাজ করছিলেন। তিনি ওই ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ।
আলাপকালে শামীম জানান, যশোরের এবারের শোভাযাত্রায় বিধ্বংসী নানা কর্মকাণ্ড থেকে পরিবেশ, প্রতিবেশ আর প্রাণিকুলকে রক্ষায় সচেতনতার বার্তা তুলে ধরা হবে। যেখানে থাকবে বন, বনের প্রাণী যেমন বাঘ, হরিণ, হাতি, ঘোড়া, পাহাড়, নদী ইত্যাদি। শুরুর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে দলমত নির্বিশেষে যশোরের সর্বস্তরের মানুষ এতে অংশ নেবেন।
তাঁর কাজের মধ্যে প্রশ্ন করা হলো– কীভাবে শুরু হয়েছিল বৈশাখের শোভাযাত্রা? একটু মৃদু হেসে তিনি জানালেন, একুশের প্রভাতফেরি থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রার চিন্তা মাথায় আসে। বাংলা ভাষার রাষ্ট্রের আন্দোলনে তারুণ্যের রক্তে গড়া একুশের পথ ধরে আমাদের ভাষা স্বাধীনতা। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবার মিলন। একুশের প্রভাতফেরিকেই যেন ফেলে আসা সব শিল্প ঐতিহ্যের সম্ভারে সাজিয়ে এ উৎসব রচনা করা হয়েছিল।
শামীম জানান, ১৯৮৫ সালের প্রথম ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ যশোরবাসীর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এমন সাড়া ফেলেছিল, সেটা আর চারুপীঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। ঠিক পরের বছর এখানে সম্মিলিতভাবে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামে তা উদযাপন করা হয়। তখন স্বৈরাচার ক্ষমতায় ছিল। সেই অপশাসনসহ সব অমঙ্গলকে হটিয়ে একটি সুন্দর দিনের প্রত্যাশাকে সামনে এনে শোভাযাত্রার এমন নামকরণ করা হয়। সেবারও শোভাযাত্রার জন্য যাবতীয় উপকরণ তৈরি করেছিলেন চারুপীঠ যশোরের শিল্পীরা। অন্যদিকে, দলমত নির্বিশেষে সব পর্যায়ের মানুষ এ আয়োজনে যুক্ত হয়েছিলেন। ফলে মঙ্গল শোভাযাত্রা সত্যিকার অর্থেই মাঙ্গলিক এক বিনোদনের অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে। 
১৯৮৮ সালে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের জন্য মাহবুব জামাল শামীম এবং হিরণ্ময় চন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় ভর্তি হন। তাদের প্রচেষ্টায় ১৯৮৯ সালে চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা বের করেন আনন্দ শোভাযাত্রা। বাংলা নববর্ষে ঢাকায় এটাই ছিল প্রথম শোভাযাত্রা। পরে নব্বইয়ের দশকে এটার নাম বদলে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ করা হয়।
নাম পরিবর্তন হওয়ায় কিছু করার নেই উল্লেখ করে শামীম বলেন, আমরা যখন প্রথম শুরু করি, তখনই বলেছিলাম, বিভিন্ন অঞ্চল বিভিন্ন নাম রাখতে পারবে এই শোভাযাত্রার। শোভাযাত্রা যে উদ্দেশ্যে করা, আঞ্চলিক সংস্কৃতি উঠে আসার। এই সংস্কৃতির কৃষ্টি-কালচার চর্চার অংশ হবে। 
তিনি আরও বলেন, গ্রাম্য মানুষের মাঝে লালিত দেশজ কৃষ্টি তুলে ধরা হয় শোভাযাত্রায়। এটা আমাদের শিল্প মর্যাদা। এখন যে নামই হোক না কেন, এটার যে লক্ষ্য ছিল সেটা থেকে লক্ষ্যচ্যুত না হই আমরা, আমাদের শিল্প মর্যাদা ঐতিহ্যে যাতে বন্ধ না হয়, সেটাই আমার কাম্য।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব শ খ উৎসব চ র কল প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

তাজউদ্দীন আহমদ দলমতের ঊর্ধ্বে একজন রাষ্ট্রনায়ক: শারমিন আহমদ

স্বাধীনতাযুদ্ধকে যখন শুধু আওয়ামী লীগিকরণ করা হচ্ছিল, তখন তাজউদ্দীন আহমদ সেটার বিরোধিতা করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন তাঁর কন্যা শারমিন আহমদ। তিনি বলেন, তাজউদ্দীন আহমদ শুধু আওয়ামী লীগের নয়। উনি পুরো জাতির। তাজউদ্দীন আহমদ দলমতের ঊর্ধ্বে একজন রাষ্ট্রনায়ক।

আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘তাজউদ্দীন আহমদ স্মারক বক্তৃতা-২০২৫’ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন শারমিন আহমদ। সেখানেই তিনি এ কথাগুলো বলেন।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি নিয়ে কথা বলেন শারমিন আহমদ। তিনটি শর্তের ওপর ভিত্তি করে এই চুক্তি হয় বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, সে সময় তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম ইন্দিরা গান্ধীকে বলেছিলেন, স্বীকৃতি বাদে বন্ধুত্ব হয় না। সেই স্বীকৃতি হতে হবে সমতার ভিত্তিতে। সে সময় তাজউদ্দীন আহমদ ভারতীয় সেনাবহিনীর একক কমান্ডে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চাওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ‘না, এটি যৌথ কমান্ডের ভিত্তিতে হবে। এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ।’

আরও পড়ুনজন্মদিনে ডায়েরিতে যা লিখেছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ২৩ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনতাজউদ্দীন আহমদ দেশের স্বাধীনতার প্রধান পুরুষ২৮ জুলাই ২০২৫

শারমিন আহমদ বলেন, তাজউদ্দীন আহমদ প্রতিরোধ না করলে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের চুক্তিপত্রে লেখা থাকত ভারতের কাছে পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার যখনই মনে করবে, তখনই ভারতীয় বাহিনীকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে, এটিই ছিল তৃতীয় শর্ত বলে জানান শারমিন আহমদ। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ওই শর্তের ভিত্তিতেই ভারতীয় বাহিনীকে প্রত্যাবর্তনের জন্য বলেন।

আরও পড়ুনতাজউদ্দীন আহমদ: রোজনামচার মানুষটিকে বোঝা২৩ জুলাই ২০২৫

অনুষ্ঠানে হতাশা প্রকাশ করে শারমিন আহমদ বলেন, এসব ইতিহাস পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এসব ইতিহাস সংরক্ষণ করা হয়নি বলেই ভারতীয়রা এ দেশ স্বাধীন করেছে, এমন বয়ান তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, এটা খুব লজ্জার ব্যাপার। এই তথ্যগুলো নিয়ে ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করতে হবে। কেননা, গৌরবমণ্ডিত ইতিহাস সংরক্ষণ না করা হলে জাতি আরও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যাবে।

অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। স্মারক বক্তা ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। তাঁর বর্ক্তৃতার শিরোণাম ছিল ‘তাজউদ্দীন আহমদের ডায়েরি : ঐতিহাসিকতা ও রাজনৈতিকতা।’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তাজউদ্দীন আহমদ দলমতের ঊর্ধ্বে একজন রাষ্ট্রনায়ক: শারমিন আহমদ