মুঠোফোন, ল্যাপটপ, ট্যাব ও স্মার্টওয়াচের মতো জনপ্রিয় সব প্রযুক্তিপণ্য কিনতে গিয়ে চড়া মূল্যের কবলে পড়তে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তারা। এই পণ্যের বড় একটি অংশ তৈরি হয় চীনে। দেশটি থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১৪৫ শতাংশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

উচ্চ এই শুল্কের প্রভাব পড়তে পারে মার্কিন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান অ্যাপলের তৈরি আইফোনের ওপরও। বিশ্লেষকদের অনেকের ধারণা, চীনে উৎপাদনের পর আইফোন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অ্যাপলকে যে বাড়তি শুল্ক দিতে হবে, তার বোঝা এসে পড়বে ভোক্তাদের কাঁধে। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রে আইফোনের দাম কয়েক শ ডলার বাড়তে পারে।

আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের প্রভাব যদি ডলারের ওপর পড়ে, তাহলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আইফোন আমদানি করা আরও ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে। বাজার গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সিসিএস ইনসাইটের বেন উড বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক যদি বহাল থাকে, তাহলে পরবর্তী চালানে বিশ্বব্যাপী আইফোনের দাম বাড়াতে পারে অ্যাপল।

আইফোন কোথায় তৈরি হয়

আইফোনসহ অ্যাপলের অন্যান্য পণ্যের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। প্রযুক্তিবাজার নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অর্ধেকের বেশি আইফোন বিক্রি করেছিল অ্যাপল। আর যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য প্রায় ৮০ শতাংশ আইফোন তৈরি করা হয়েছিল চীনে। বাকি ২০ শতাংশ ভারতে।
তবে স্যামসাংসহ অন্যান্য মুঠোফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মতো অ্যাপলও বিগত বছরগুলোয় চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর পথ ধরেছে। মুঠোফোনের নতুন উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে ভারতের পাশাপাশি উঠে এসেছে ভিয়েতনামও। পাল্টা শুল্ক আরোপের পর কয়েক দিনে ভারতে আইফোনের উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর নজর দিয়েছে অ্যাপল।

অ্যাপলের ওপর কতটা পড়বে শুল্কের প্রভাব

ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টারা বলেছেন, নতুন করে যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তার লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য উৎপাদনে উৎসাহী করা। তবে পণ্যের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও পণ্য সংযোজনের জন্য বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার একটি নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করতে হয় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোকে। এ ছাড়া এশিয়ায় পণ্য উৎপাদনের জন্য কর্মীদের কম পারিশ্রমিক দিতে হয়।

গত ফেব্রুয়ারিতে অ্যাপল প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রে তারা ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। ট্রাম্প প্রশাসনের বিশ্বাস—এই বিনিয়োগের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন আরও বাড়বে। তবে এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক ড্যান ইভস। ৩ এপ্রিল তিনি বলেন, বাস্তবতা হলো এশিয়া থেকে সরবরাহ ব্যবস্থার ১০ শতাংশও যুক্তরাষ্ট্রে সরিয়ে নিতে তিন বছর ও ৩০ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন পড়বে।

আইফোনের কি দাম বাড়বে

যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা শুল্কের বোঝা যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে কি না এবং দাম বাড়ানো হবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট করেনি অ্যাপল।

বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন, অ্যাপল অন্যদের তুলনায় বেশ ভাগ্যবান। কারণ, তারা পণ্য তৈরিতে যত অর্থ ব্যয় করেছে, তার চেয়ে বেশি অর্থ ভোক্তাদের পকেট থেকে বের করে নিয়েছে।

বাজার গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ফরেস্টারের প্রধান বিশ্লেষক দ্বীপাঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, অ্যাপল তাদের পণ্যের ওপর আকর্ষণীয় মুনাফা করে। তাই শুল্কের কারণে পণ্য উৎপাদনে যে বাড়তি খরচ হবে, তা সামলে নিতে পারবে প্রতিষ্ঠানটি—অন্তত স্বল্প মেয়াদে হলেও।

এ ছাড়া অ্যাপলের আইফোনের বড় জনপ্রিয়তা রয়েছে। ফলে স্মার্টফোনটির দাম কিছুটা বৃদ্ধি করা হলেও ভোক্তারা তেমন একটা প্রতিক্রিয়া জানাবেন না বলে মনে করেন দ্বীপাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে আইফোন ব্র্যান্ডের ওপর ভোক্তাদের আস্থা বেশি। এটা মনে হয় না যে গ্রহণযোগ্য হারে দাম বাড়ালে ভোক্তারা আইফোন ছেড়ে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের দিকে ঝুঁকবেন।

অনেকে আবার বলছেন শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আইফোনের দাম তিন গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে। বিনিয়োগ ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ইউবিএসের তথ্য অনুযায়ী, শুল্ক বৃদ্ধির কারণে চীনে উৎপাদন করা ২৫৬ গিগাবাইট স্টোরেজের আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্সের দাম ১ হাজার ১৯৯ ডলার থেকে বেড়ে ১ হাজার ৯৯৯ ডলার পর্যন্ত হতে পারে। আর ভারতে উৎপাদন করা ১২৮ গিগাবাইট স্টোরেজের আইফোন ১৬ প্রোর দাম ৯৯৯ ডলার থেকে বেড়ে হতে পারে ১ হাজার ৪৬ ডলার।  

তবে ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক ড্যান ইভসের মতে, আইফোন যদি যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি করা হয়, তাহলে স্মার্টফোনটির দাম তিন গুণ বেড়ে হতে পারে ৩ হাজার ৫০০ ডলার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইফ ন র দ ম অ য পল র র আইফ ন র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

বিদ্যুৎ না থাকায় ডিইপিজেডে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ

ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) আজ সোমবার দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দুপুরের পর ডিইপিজেডের সব কারখানায় শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। ডিইপিজেডের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড পাওয়ারের ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রকল্পটিতে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে তারা উৎপাদন করতে না পারায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে ডিইপিজেডে প্রায় ৯০টি কারখানার এক লাখের মতো শ্রমিককে ছুটি দেওয়া হয়।

বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে উল্লেখ করে মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার যদি এটি অব্যাহত থাকে, তবে সংকট আরও বাড়বে। শ্রমিকেরা কাজ না করতে পেরে বিক্ষুব্ধ হলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠবে। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়া এ ধরনের ঘটনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘তিতাস বলছে, ইউনাইটেড পাওয়ারের কাছে বিল বকেয়া রয়েছে। তারা বকেয়া পরিশোধ করেনি। এ ব্যাপারে আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে, বেপজাকে কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ করে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ ধরনের পদক্ষেপের আগে ডিইপিজেডের গুরুত্ব বিবেচনা করে আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টির সমাধান করা উচিত ছিল।’

এ বিষয়ে ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক মো. মমতাজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্যাসের কোনো প্রেশার নেই। প্রেশার শূন্য। কিন্তু কেন তিতাস কর্তৃপক্ষ এমনটি করল, সে ব্যাপারে এখানকার (আশুলিয়া অঞ্চলের) তিতাসের লোকজন কিছু বলতে পারেননি। আমরা নিজেরাও বিষয়টি নিয়ে জানি না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, বকেয়া নিয়ে কোনো ধরনের মামলা নেই। তিতাস কেন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিল, সেটি জানা নেই।’

জানতে চাইলে তিতাসের আশুলিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু ছালেহ মুহাম্মদ খাদেমুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের বিল বকেয়া থাকায় গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এটি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্ত। দুপুরের দিকে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আদানির সঙ্গে চুক্তি ক‌রে শুল্ক ফাঁকি
  • শিল্প খাতের উৎপাদন যেন ব্যাহত না হয়
  • কারাগারে গাঁজা সরবরাহ করতে গিয়ে নিজেই কারাগারে
  • ‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা কী
  • ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ নেই, ৯০ কারখানায় ছুটি
  • মঙ্গলবার ৭ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব জায়গায়
  • পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে আরও ২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কিনছে ভারত
  • পর্তুগাল ও স্পেনে নজিরবিহীন বিদ্যুৎ বিপর্যয়, পর্যুদস্তু জনজীবন
  • হাসপাতালে ডায়রিয়ার প্রকোপ শয্যা ও স্যালাইন সংকট
  • বিদ্যুৎ না থাকায় ডিইপিজেডে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ