যুক্তরাষ্ট্র-চীন শুল্কযুদ্ধে কতটা বাড়বে আইফোনের দাম
Published: 11th, April 2025 GMT
মুঠোফোন, ল্যাপটপ, ট্যাব ও স্মার্টওয়াচের মতো জনপ্রিয় সব প্রযুক্তিপণ্য কিনতে গিয়ে চড়া মূল্যের কবলে পড়তে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তারা। এই পণ্যের বড় একটি অংশ তৈরি হয় চীনে। দেশটি থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১৪৫ শতাংশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
উচ্চ এই শুল্কের প্রভাব পড়তে পারে মার্কিন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান অ্যাপলের তৈরি আইফোনের ওপরও। বিশ্লেষকদের অনেকের ধারণা, চীনে উৎপাদনের পর আইফোন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অ্যাপলকে যে বাড়তি শুল্ক দিতে হবে, তার বোঝা এসে পড়বে ভোক্তাদের কাঁধে। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রে আইফোনের দাম কয়েক শ ডলার বাড়তে পারে।
আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের প্রভাব যদি ডলারের ওপর পড়ে, তাহলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আইফোন আমদানি করা আরও ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে। বাজার গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সিসিএস ইনসাইটের বেন উড বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক যদি বহাল থাকে, তাহলে পরবর্তী চালানে বিশ্বব্যাপী আইফোনের দাম বাড়াতে পারে অ্যাপল।
আইফোন কোথায় তৈরি হয়আইফোনসহ অ্যাপলের অন্যান্য পণ্যের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। প্রযুক্তিবাজার নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অর্ধেকের বেশি আইফোন বিক্রি করেছিল অ্যাপল। আর যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য প্রায় ৮০ শতাংশ আইফোন তৈরি করা হয়েছিল চীনে। বাকি ২০ শতাংশ ভারতে।
তবে স্যামসাংসহ অন্যান্য মুঠোফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মতো অ্যাপলও বিগত বছরগুলোয় চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর পথ ধরেছে। মুঠোফোনের নতুন উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে ভারতের পাশাপাশি উঠে এসেছে ভিয়েতনামও। পাল্টা শুল্ক আরোপের পর কয়েক দিনে ভারতে আইফোনের উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর নজর দিয়েছে অ্যাপল।
ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টারা বলেছেন, নতুন করে যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তার লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য উৎপাদনে উৎসাহী করা। তবে পণ্যের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও পণ্য সংযোজনের জন্য বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার একটি নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করতে হয় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোকে। এ ছাড়া এশিয়ায় পণ্য উৎপাদনের জন্য কর্মীদের কম পারিশ্রমিক দিতে হয়।
গত ফেব্রুয়ারিতে অ্যাপল প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রে তারা ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। ট্রাম্প প্রশাসনের বিশ্বাস—এই বিনিয়োগের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন আরও বাড়বে। তবে এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক ড্যান ইভস। ৩ এপ্রিল তিনি বলেন, বাস্তবতা হলো এশিয়া থেকে সরবরাহ ব্যবস্থার ১০ শতাংশও যুক্তরাষ্ট্রে সরিয়ে নিতে তিন বছর ও ৩০ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন পড়বে।
আইফোনের কি দাম বাড়বেযুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা শুল্কের বোঝা যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে কি না এবং দাম বাড়ানো হবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট করেনি অ্যাপল।
বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন, অ্যাপল অন্যদের তুলনায় বেশ ভাগ্যবান। কারণ, তারা পণ্য তৈরিতে যত অর্থ ব্যয় করেছে, তার চেয়ে বেশি অর্থ ভোক্তাদের পকেট থেকে বের করে নিয়েছে।
বাজার গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ফরেস্টারের প্রধান বিশ্লেষক দ্বীপাঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, অ্যাপল তাদের পণ্যের ওপর আকর্ষণীয় মুনাফা করে। তাই শুল্কের কারণে পণ্য উৎপাদনে যে বাড়তি খরচ হবে, তা সামলে নিতে পারবে প্রতিষ্ঠানটি—অন্তত স্বল্প মেয়াদে হলেও।
এ ছাড়া অ্যাপলের আইফোনের বড় জনপ্রিয়তা রয়েছে। ফলে স্মার্টফোনটির দাম কিছুটা বৃদ্ধি করা হলেও ভোক্তারা তেমন একটা প্রতিক্রিয়া জানাবেন না বলে মনে করেন দ্বীপাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে আইফোন ব্র্যান্ডের ওপর ভোক্তাদের আস্থা বেশি। এটা মনে হয় না যে গ্রহণযোগ্য হারে দাম বাড়ালে ভোক্তারা আইফোন ছেড়ে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের দিকে ঝুঁকবেন।
অনেকে আবার বলছেন শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আইফোনের দাম তিন গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে। বিনিয়োগ ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ইউবিএসের তথ্য অনুযায়ী, শুল্ক বৃদ্ধির কারণে চীনে উৎপাদন করা ২৫৬ গিগাবাইট স্টোরেজের আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্সের দাম ১ হাজার ১৯৯ ডলার থেকে বেড়ে ১ হাজার ৯৯৯ ডলার পর্যন্ত হতে পারে। আর ভারতে উৎপাদন করা ১২৮ গিগাবাইট স্টোরেজের আইফোন ১৬ প্রোর দাম ৯৯৯ ডলার থেকে বেড়ে হতে পারে ১ হাজার ৪৬ ডলার।
তবে ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক ড্যান ইভসের মতে, আইফোন যদি যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি করা হয়, তাহলে স্মার্টফোনটির দাম তিন গুণ বেড়ে হতে পারে ৩ হাজার ৫০০ ডলার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইফ ন র দ ম অ য পল র র আইফ ন র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে, নিম্নমুখী চালের দাম
ঈদের বন্ধের আমেজ কাটতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলো। ক্রেতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারগুলোতে বেড়েছে সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কয়েক দিনের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে সবজির দাম। পেঁয়াজ, রসুন ও চালের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও নিম্নমুখী।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পর নগরের কাঁচাবাজারে সবজির সরবরাহ কমে যায়। ফলে দাম ছিল কিছুটা বাড়তি। গত রোববার ও সোমবারের দিকে নগরের আড়তগুলোতে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে। অধিকাংশ সবজির দামও ৪০ টাকার আশপাশে ছিল। তবে গত মঙ্গলবার থেকে আবারও বাজারে পুরোদমে সবজির সরবরাহ শুরু হয়েছে। যার কারণে দাম কমতে শুরু করেছে।
আজ শুক্রবার নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি আড়তে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২০ থেকে ৪০ টাকা দরে। বেশির ভাগ সবজির দাম প্রতি কেজি ১০ থেকে ৩৫ টাকা। তবে খুচরা বাজারগুলোতে প্রায় দ্বিগুণ দামে সবজি বিক্রি হতে দেখা যায়। নগরের বহদ্দারহাট, চকবাজার, সাব এরিয়া ও কাজির দেউড়ি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বাজারে অধিকাংশ সবজির দাম ৬০ টাকার বেশি। লাউ, মিষ্টিকুমড়া ও ফুলকপির দাম কিছুটা কম। এসব সবজির দাম ৫০ টাকার আশপাশে। খুচরা বাজারগুলোতে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি দরে। পরিবহন খরচ ও আগে কেনার অজুহাতে বাড়তি দাম নিচ্ছেন বিক্রেতারা। রিয়াজউদ্দিন বাজারের আড়তদার নুরুল ইসলাম বলেন, বাজারে সব সবজির দাম কম। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীদের কারণে ভোক্তাদের ভোগান্তি হচ্ছে। আড়তের দামের দ্বিগুণ দামে তাঁরা সবজি বিক্রি করছেন।
সবজির বাজারের পাশাপাশি পেঁয়াজ, রসুন ও চালের দামও নিম্নমুখী। খাতুনগঞ্জের পাইকারি আড়তে আজ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫২ টাকা দরে। খুচরা পর্যায়ে দাম ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি। অন্যদিকে রসুনের কেজি আড়তে ছিল ৮৫ থেকে ১১০ টাকা। খুচরায় সেটি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা।
পাহাড়তলী চালের আড়তে মোটা চাল (গুটি, স্বর্ণা) কেজিপ্রতি ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে জিরাশাইল ৭২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত তিন দিন আগ থেকে চালের বাজার কিছুটা নিম্নমুখী বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম কমেছে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, চালের সরবরাহ যথেষ্ট আছে। চালের দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই এখন।