একসময় কংগ্রেসের মালিকানাধীন ন্যাশনাল হেরাল্ডের সম্পত্তি অধিগ্রহণে নোটিশ দিল ইডি
Published: 12th, April 2025 GMT
ভারতে ন্যাশনাল হেরাল্ডের বিপুল সম্পত্তির দখল নিতে নোটিশ দিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। কেন্দ্রীয় এই তদন্তকারী সংস্থা নোটিশ জারি করে জানিয়েছে, সব মিলিয়ে ৬৬১ কোটি রুপির অস্থাবর সম্পত্তির দখল তারা নিতে চলেছে। দিল্লি ও লক্ষ্ণৌয়ে ন্যাশনাল হেরাল্ড ও অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেডের (এজেএল) দপ্তর খালি করে দিতে বলা হয়েছে। মুম্বাইয়ের ভাড়াটেকে বলা হয়েছে, তারা যেন ভাড়ার টাকা ইডির কাছে জমা দেয়।
প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট বা বেআইনি আর্থিক লেনদেন প্রতিরোধ আইনের (পিএমএলএ) অষ্টম অনুচ্ছেদের ৫(১) ধারায় ইডি গতকাল শুক্রবার এই ব্যবস্থা নিয়েছে বলে পিটিআই জানিয়েছে। ২০২৩ সালে এই অস্থাবর সম্পত্তি ইডি বাজেয়াপ্ত করেছিল। ইডি ওই সম্পত্তি দখল করা নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার সম্পত্তি নিবন্ধকদেরও নির্দেশ পাঠিয়েছে।
ন্যাশনাল হেরাল্ড খবরের কাগজ স্বাধীনতাসংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত। জওহরলাল নেহরু ১৯৩৮ সালে এই কাগজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পত্রিকাটির প্রকাশক ছিল এজেএল, যার শেয়ারহোল্ডার ছিলেন ৫ হাজার স্বাধীনতাসংগ্রামী। ওই সংস্থা ইংরেজিতে ন্যাশনাল হেলারল্ড ছাড়া হিন্দিতে প্রকাশ করত নবজীবন ও উর্দুতে কৌমি আওয়াজ।
কংগ্রেস দল ২০০৮ সাল পর্যন্ত ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকা ছাপিয়েছে। কিন্তু ওই বছর আর্থিক কারণে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে তা ডিজিটাল সংস্করণে ছাপা শুরু হয়।
ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলা করেছিলেন বিজেপি নেতা সুব্রক্ষ্মণ্যম স্বামী। তাঁর অভিযোগ, গান্ধী পরিবার কংগ্রেস দলের তহবিল ব্যবহার করে এজেএলের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি দখল করেছে। ২০০৮ সালে কাগজটি বন্ধ হওয়ার সময় এজেএলের ঋণ ছিল ৯০ কোটি রুপি। এই দেনার প্রায় পুরোটাই ছিল কংগ্রেসের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ।
সেই সময় ইয়ং ইন্ডিয়ান নামে এক সংস্থা এজেএল অধিগ্রহণ করে মাত্র ৫০ লাখ টাকায়। ইয়ং ইন্ডিয়ান সংস্থার ৩৮ শতাংশ করে শেয়ার ছিল সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীর। বাকি ২৪ শতাংশ ছিল তৎকালীন কংগ্রেস নেতা মোতিলাল ভোরা, অস্কার ফার্নান্ডেজ, সুমন দুবে ও স্যাম পিত্রোদার। ওই অধিগ্রহণের ফলে এজেএলের ৯০ কোটির দেনাসহ সব সম্পত্তির মালিক হয় ইয়ং ইন্ডিয়ান। এরপরই কংগ্রেস জানায়, ন্যাশনাল হেরাল্ডকে দেওয়া ৯০ কোটির ঋণ মওকুফ করে দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু তা ফেরত পাওয়ার অন্য কোনো উপায় নেই।
সুব্রক্ষ্মণ্যম স্বামীর অভিযোগ, রাজনৈতিক দল বলে কংগ্রেসকে আয়কর দিতে হয় না। কোনো বাণিজ্যিক সংস্থাকে কংগ্রেস এভাবে টাকাও দিতে পারে না। তাঁর দাবি, দিল্লি, মুম্বাই, পাটনা, লক্ষ্ণৌ, ভোপাল, ইন্দোরসহ বিভিন্ন শহরে ন্যাশনাল হেরাল্ডের স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৫ হাজার কোটি টাকা। তার কিছুটা বিক্রি করেই ইয়ং ইন্ডিয়ান কংগ্রেসের ঋণ মেটাতে পারত। কিন্তু তা না করায় দলের আয়করমুক্ত অর্থ ঘুরপথে চলে গেল গান্ধী পরিবার ও কংগ্রেসের কাছে।
স্বামী ২০১২ সালে সোনিয়া, রাহুলসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০১৪ সালের জুনে আদালত তাঁদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। সেই মামলায় সোনিয়া ও রাহুল জামিনে রয়েছেন। মালিকানা হস্তান্তরে বেআইনি লেনদেন হয়েছিল কি না, ইডি সেই তদন্তই করছে। এবার শুরু হলো সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণের প্রক্রিয়া।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইন ড য় ন
এছাড়াও পড়ুন:
প্রযুক্তি কি ডিমেনশিয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে? ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য
প্রযুক্তির কল্যাণে হুটহাট বড় পরিবর্তন আসা নতুন কিছু নয়। করোনা মহামারির আগে বাসা থেকেও যে অফিস করা সম্ভব, সেটা মানতে চাইতেন না অনেকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হোম অফিস হয়েছে স্বাভাবিক। একই ঘটনা ঘটেছে ডিজিটাল দুনিয়ায়। একসময় যেকোনো তথ্য খুঁজে বের করার জন্য শরণাপন্ন হতে হতো সার্চ ইঞ্জিনের; এআই সেই উত্তর সবিস্তারে দিয়ে দিচ্ছে মুহূর্তেই। ফলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন শুধু জীবনকে সহজতর করছে না, বাঁচিয়ে দিচ্ছে সময় ও পরিশ্রমও। কিন্তু এই বেঁচে যাওয়া সময় ও পরিশ্রম মস্তিষ্কের ওপর ঠিক কীভাবে প্রভাব ফেলছে?
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস ও বেলোর ইউনিভার্সিটির এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, এত দিন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানব মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমার যে গুঞ্জন ভেসে বেড়িয়েছে, তার কোনো সত্যতা নেই। ‘নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ নামে যে হাইপোথিসিস আছে, তার কোনো প্রমাণ নেই গবেষকদের কাছে। বরং পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষদের স্মার্টফোন, কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার তাঁদের স্বাভাবিক স্মৃতিভ্রম অনেকটা স্তিমিত করে।
ডিজিটাল ডিমেনশিয়া কী২০১২ সালে প্রথম ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ তত্ত্ব নিয়ে হাজির হন জার্মান স্নায়ুবিজ্ঞানী ও মনোবিদ ম্যানফ্রেড স্পিৎজার। মূলত যে হারে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে এবং মানুষ যান্ত্রিক পর্দার সামনে প্রতিদিনের বেশির ভাগ সময় কাটাচ্ছে, তাতে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে অনেকটাই। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলোও মনে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে অনেকে। যেমন ফোন নম্বর। একসময় প্রিয়জনের ফোন নম্বর আমাদের মুখস্থ থাকত। এখন ফোন নম্বর ঠাঁই পায় মুঠোফোনের কনটাক্ট লিস্টে। ফোন নম্বর মনে রাখার চেষ্টাই করে না কেউ। আবার অনেকক্ষণ যান্ত্রিক পর্দার সামনে থাকলেও সেখান থেকে শেখার ইচ্ছা থাকে না অনেকের। চোখের সামনে যা আসছে, স্ক্রল করে চলে যাচ্ছে পরের কোনো কনটেন্টে। এতে মনোযোগ হারিয়ে যায় দ্রুত। আর প্রযুক্তির এমন অতিব্যবহার যে স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দিচ্ছে, একেই ধরা হয় ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ হিসেবে।
আরও পড়ুনডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহারের সময় ২০-২০-২০ নিয়ম মানাটা কেন জরুরি২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩গবেষণা যা বলছেপ্রায় ৪ লাখ ১১ হাজার পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের ওপর চালানো ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যে স্মৃতিভ্রম দেখা দেয়, তার অনেকটাই হ্রাস করে প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের ফলে স্মৃতিশক্তি কমে আসার আশঙ্কা প্রায় ৫৮ শতাংশে নেমে আসে।
স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া বরং আরও কিছু সূচকের (যেমন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক অবস্থা) ওপর নির্ভর করে। মজার ব্যাপার হলো, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার থেকেও বেশি কার্যকর প্রযুক্তির ব্যবহার।
তবে এর সবকিছুই নির্ভর করছে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের ওপর। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা বেশির ভাগ সময়ই অনলাইনে কাটান ইউটিউব ভিডিও অথবা ফেসবুক স্ক্রল করে। এতে তাঁদের মস্তিষ্কের ব্যবহার হয় না বললেই চলে। মস্তিষ্ক সচল রাখতে পারে এমন কনটেন্টে তাঁদের মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারলে আনন্দ যেমন পাবেন, তেমনই ডিজিটাল দুনিয়া সম্পর্কে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিও পালটে যাবে। এ ছাড়া অনলাইনের হাজারো গুজব ও উসকানি থেকে মুক্ত থাকবেন তাঁরা।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট
আরও পড়ুনমাত্রাতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩