পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রাণের উৎসব বৈসাবিকে ঘিরে পুরো খাগড়াছড়ি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে আনন্দের রং। উৎসবের জোয়ারে ভাসছে পুরো জনপদ।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) থেকে শুরু হয়েছে মারমা জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই উৎসব। এ উপলক্ষে জেলা সদরের পানখাইয়াপাড়া বটতলা থেকে সাংগ্রাই র‌্যালি বের করেন তারা। এতে মারমা নারী-পুরুষরা অংশ নেন। সাংগ্রাই এর প্রধানতম আকর্ষণ জলকেলি বা পানি উৎসব।

সকালে শুরু হওয়া র‌্যালিটি পানখাইয়াপাড়া বটতল হয়ে শহরের শাপলা চত্বরের সামনে দিয়ে কোট বিল্ডিং ঘুরে মারমা উন্নয়ন সংসদের কার্যালয়ের মাঠে গিয়ে শেষ হয়। নেচে গেয়ে খাগড়াছড়ি শহরকে এসময় উৎসবমুখর করে তোলেন মারমা তরুণ-তরুণীরা। অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মোহাম্মদ আমান হাসান।

আরো পড়ুন:

ত্রিপুরাদের ‘বৈসু’ উৎসব শুরু

তারুণ্যের উৎসব
রাজশাহীতে সমতল ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সম্প্রীতি সমারোহ

অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আসা লিলিপ্রু মারমা বলেন, “সাংগ্রাই আমাদের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব। আমরা সারা বছর এইদিনের অপেক্ষায় থাকি। এদিনে আমরা জলকেলি খেলে একে অপরকে পানি ছিটিয়ে নিজেদের পরিশুদ্ধ করে নতুন বছরকে বরণ করি। জলকেলি  উৎসবে সব বয়সী মারমারা অংশ নেন। মূলত তরুণ-তরুণীদের অংশগ্রহনই বেশি থাকে। নেচে গেয়ে আমরা উল্লাস করি।”

খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার শরীফ মোহাম্মদ আমান হাসান বলেন, “প্রতি বছর এখানে পানি খেলা হয়। এই পানি খেলা শুধু মারমাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এখানে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা বাঙ্গালিসহ সবাই অংশগ্রহণ করে উৎসব করেন। আমি মনে করি, এটি একটি সাম্প্রদায়িক মিল বন্ধন।” 

খাগড়াছড়িতে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বর্নিল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সকালে জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়। র‌্যালিটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে টাউন হল প্রঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। র‌্যালিতে পাহাড়ি, বাঙালিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার, পুলিশ সুপার মো.

আরেফিন জুয়েলসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/রূপায়ন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উৎসব

এছাড়াও পড়ুন:

বকুলতলায় বৃষ্টির সুর

নীল-সাদা পোশাকে সজ্জিত হয়ে নানা বয়সী মানুষ এসে জড়ো হতে থাকেন। যেন শহরের হৃদয়ে নেমে আসে গ্রামবাংলার ঘ্রাণ। মেঘলা আকাশের নিচে কণ্ঠে সুর, পায়ে তাল, কল্পনায় বর্ষার রূপই দেখা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় গতকাল রোববার এভাবে উদযাপন হলো ‘বর্ষা উৎসব ১৪৩২’।
বর্ষা উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে আষাঢ়ের প্রথম দিনে রাগ, রস ও রং মিলে তৈরি হলো এক বর্ষামুখর ক্যানভাস। এবারের আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন নবীন সংগীতশিল্পী সোহানী মজুমদার। সেতারের কোমল তারে বেজে ওঠে রাগ ‘আহীর ভৈরব’। রাগভিত্তিক এ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মিলে যায় প্রাচ্যের সংগীত ঐতিহ্য ও বর্ষার আধ্যাত্মিকতা। সেই মুহূর্তে বকুলতলায় যেন ভেসে বেড়ায় বৃষ্টির সুর আর আকাশের নরম আলো।
‘বর্ষাকথন’ পর্বে বর্ষার ভাবনা, পরিবেশ ও সময়ের প্রেক্ষাপটে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শিল্পী কাজী মিজানুর রহমান।
ঘোষণা পাঠ করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট এবং সভাপতিত্ব করেন লেখক ও গবেষক অধ্যাপক ড. নিগার চৌধুরী। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সংস্কৃতিকর্মী নুসরাত ইয়াসমিন রুম্পা।
ঘোষণাপত্র পাঠে জানানো হয়, ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে আজ ঋতুচক্রে দেখা দিচ্ছে অসামঞ্জস্য। গ্রীষ্ম হয়ে উঠছে খরতর, বর্ষা রুষ্ট, বসন্ত ক্ষীয়মাণ। এই পরিবর্তনের মূলে রয়েছে মানুষের সীমাহীন ভোগবাদী আচরণ, প্রকৃতির ওপর অনবরত অনাচার। ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত, সমুদ্রজল স্ফীত, ওজোনস্তর ক্ষতিগ্রস্ত– প্রকৃতি আজ সংকটে।
এ প্রসঙ্গে মানজার চৌধুরী সুইট সমকালকে বলেন, এ উৎসব শহুরে জীবনে আমরা প্রায় ১৮ বছর ধরে পালন করে আসছি। উৎসবের শিকড় নিহিত রবীন্দ্রনাথের ‘বর্ষামঙ্গল’-এ। আমরা তারই উত্তরসূরি হয়ে আষাঢ়ের প্রথম দিনটিকে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিই। এতে শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, বরং তার সংকটও তুলে ধরা হয়। আমরা চাই, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক 
গড়ুক, তার বিপন্নতাকে বুঝুক এবং তা রক্ষায় সক্রিয় হোক।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম, এ ধরনের উৎসবই সেই স্বপ্নের বাস্তব রূপ। শিকড়ের দিকে ফিরে যাওয়ার মধ্যে নিহিত আমাদের সংস্কৃতি ও চেতনার পুনর্জাগরণ।
বর্ষা মানে নতুন জন্মের বারতা। সেই বারতা ছড়িয়ে দিতে উৎসবে প্রতীকীভাবে শিশু-কিশোরের হাতে তুলে দেওয়া হয় বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা। এই চারাগুলো শুধু বৃক্ষ নয়, বরং হয়ে উঠেছে সবুজ ভবিষ্যতের আশ্বাস।
উৎসবে একক সংগীত পরিবেশন করেন ইয়াসমিন মুশতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী ও নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা।
রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন অণিমা রায়, শামা রহমান, মকবুল হোসেন ও ফেরদৌসী কাকলি। লোকসংগীত পরিবেশন করেন বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, শ্রাবণী গুহ রায় ও এস এম মেজবাহ। আধুনিক গান গাইতে মঞ্চে ওঠেন রত্না সরকার।
দলীয় সংগীতে অংশ নেয় সীমান্ত খেলাঘর আসর (শিশু-কিশোর), সুর বিহার, বহ্নিশিখা, সুর নন্দন এবং সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। আবৃত্তি পরিবেশন করেন নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি ও আসান উল্লাহ তমাল। শিল্পবৃত্ত শিশু-কিশোর দল পরিবেশন করে আবৃত্তি ও নৃত্য কোলাজ।
নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নেয় ধৃতি নর্তনালয়, নৃত্যাক্ষ, স্পন্দন, বেমুকা ললিতকলা কেন্দ্র, সিনথিয়া একাডেমি অব আর্টস ও নৃত্যম।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বকুলতলায় বৃষ্টির সুর
  • নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • ১০ দিন পর বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে বাণিজ্য শুরু 
  • ঈদের ছুটি শেষে ব্যাংক খুলেছে, ভিড় নেই তেমন
  • ছুটি শেষে ব্যাংক ও শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হচ্ছে কাল
  • টানা ১০ দিনের ছুটি শেষ, রবিবার খুলছে সরকারি অফিস
  • চেনা রূপে বরিশাল নদীবন্দর, ঈদফেরত যাত্রীদের ভিড়
  • রাজশাহীতে ঢাকাগামী টিকিটে বাড়তি ভাড়া আদায়, ৩ কাউন্টারকে জরিমানা
  • কাহালুর জামাই মেলায় মানুষের ঢল
  • ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে ঈদের সেরা চার নাটক