গ্যাসের সিস্টেম লস (কারিগরি ত্রুটি) কমাতে পথনকশা তৈরি করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। ৭টি গ্যাস কোম্পানিকে ২০২৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত সিস্টেম লস কমানোর লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছে এ বিভাগ। বিভাগটি বলেছে, কোম্পানিগুলোকে এ সময়ের মধ্যে কমপক্ষে অর্ধেকের নিচে নামিয়ে আনতে হবে গ্যাসের সিস্টেম লস। কাজটি না পারলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ভোগ করতে হবে শাস্তি।

সচিবালয়ে আজ বুধবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ পথনকশা চূড়ান্ত করা হয়। জ্বালানিসচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা (এমডি) এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমানে যে পরিমাণ সিস্টেম লস হয়, তার আর্থিক মূল্য ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। আগামী বছরের জুনের মধ্যে পথনকশা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সিস্টেম লস অর্ধেকে নেমে এলে অন্তত ৫০ কোটি মার্কিন ডলার সাশ্রয় হবে। বর্তমান বাজার মূল্যে এর পরিমাণ ৬১ হাজার কোটি টাকা।

দেশীয় কোম্পানি, আন্তর্জাতিক কোম্পানি ও চট্টগ্রামের মহেশখালীতে থাকা দুই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল থেকে মিটারিংয়ের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হয় গ্যাস ট্রান্সমিশন পিএলসি লিমিটেডে (জিটিসিএল)।

জিটিসিএল পরে মিটারিংয়ের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করে ছয় কোম্পানিকে। এগুলো হচ্ছে তিতাস, বাখরাবাদ, কর্ণফুলী, জালালাবাদ, সুন্দরবন ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি। এসব কোম্পানিই পরে গ্যাস সরবরাহ করে গ্রাহকদের। সিস্টেম লসের মধ্যে তিতাস ও বাখরাবাদ গ্যাসেরই বেশি, যা সুন্দরবন গ্যাস ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাসের নেই বললেই চলে।

এখন থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে কোন কোম্পানি কোন মাসে সিস্টেম লস কতটা নামিয়ে আনবে, তা বেঁধে দেওয়া হয়েছে পথনকশায়। পথনকশা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কি না, তিন মাস পর তা আবার খতিয়ে দেখবেন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।

তিতাস গ্যাসের গত জানুয়ারি মাসে সিস্টেম লস ছিল ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে কোম্পানিটিকে এ হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশে এবং ডিসেম্বরে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। একইভাবে বাখরাবাদের জানুয়ারিতে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ সিস্টেম লস থাকলেও আগামী বছরের জানুয়ারি ও ডিসেম্বরেও কোম্পানিটিকে এ হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে।

পথনকশায় সিস্টেম লস কমিয়ে আনার ব্যাপারে তিতাসের ৩৯১ ও বাখরাবাদের ১৩৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কর্ণফুলী গ্যাসে ২০০, জালালাবাদে ৬৪ এবং পশ্চিমাঞ্চল গ্যাসে ৩৬ জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সিস্টেম লস কমাতে সাতটি ভিজিল্যান্স দল গঠন করা হয়েছে। অবৈধ বিতরণ পাইপলাইন অপসারণ, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা এবং বিচ্ছিন্ন করার পর এগুলো আবার পুনঃস্থাপিত হয়েছে কি না, সেগুলো সরেজমিন দেখবে দলগুলো। পুনঃস্থাপনের সঙ্গে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বা কোনো ঠিকাদার জড়িত কি না, তা–ও চিহ্নিত করা হবে।

সূত্রগুলো জানায়, গত ২৫ জানুয়ারি থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত ২ মাসে ৭০ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন উচ্ছেদ করা হয়েছে। আর অবৈধ আবাসিক বার্নার বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে প্রায় ২৭ হাজার। এ সময় ৯৬টি মোবাইল কোর্টসহ ও ১ হাজার ১৮৮টি মোবাইল কোর্ট ছাড়া অভিযান করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স স ট ম লস ক

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন

অর্থ পাচার রোধে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ায় প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয়—দুটিই বেড়েছে। এতে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। সাধারণত এমন পরিস্থিতিতে ডলারের দাম কমে আসার কথা। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কিনে দাম স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছে। এর কারণে আজ সোমবার ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আজ ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা দামে ডলার কেনা হয়েছে।

ফলে চলতি অর্থবছরে ডলার কেনা দাঁড়িয়েছে ১৭৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। এর ফলে একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে, অন্যদিকে ডলারের দামও ১২০ টাকার ওপরে থাকছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এখন বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিদিন বাংলাদেশের সঙ্গে যেসব দেশের বেশি বাণিজ্য সম্পর্ক আছে, সেই দেশগুলোর মুদ্রার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে। পাশাপাশি দেশের বাজারে ডলারের সরবরাহ ও চাহিদার পাশাপাশি দামও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এ জন্য প্রতিদিন সকালে ডলারের দাম (রেফারেন্স রেট) প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোনো কারণে দেশের ডলারের দাম ঘোষিত এই রেফারেন্সের চেয়ে কমে এলে ডলার কেনার জন্য নিলাম ডাকছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ডলার কিনছে। যেসব ব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত ডলার ছিল, তারা নিলামে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এই ডলার বিক্রি করেছে। এই পদক্ষেপের ফলে ডলারের দাম এখন পুরোপুরি বাজারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। এটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি অন্যতম শর্ত ছিল। আইএমএফের ঋণের শর্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশের যে পরিমাণ রিজার্ভ থাকার কথা, বর্তমানে তার চেয়ে বেশি রিজার্ভ রয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে ২০২২ সাল থেকে বাংলাদেশে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করে। তাতে ডলারের সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে বড় ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে প্রতি ডলারের দাম ৮৫ টাকা থেকে বেড়ে ১২২ টাকায় পৌঁছায়। এতে দেশের অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তোলে। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করেও দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।

গত তিন অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ২৫ বিলিয়নের বেশি ডলার বিক্রি করেছে, যা মূলত জ্বালানি, সার ও খাদ্য আমদানি বিল মেটাতে ব্যবহার হয়েছে। গত বছরের আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কম থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি আমদানির জন্য ডলার সহায়তা বন্ধ করে দেয়। এ বছরের মার্চে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি ও ডলারের দাম কমতে শুরু করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কেনা শুরু করে।

এদিকে দেশে ডলার-সংকট কাটাতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে প্রবাসীদের পাঠানো আয়। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ৩০ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) প্রবাসী আয় এসেছে প্রায় পাঁচ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া গত অর্থবছর শেষে দেশে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। আর একই বছর আমদানিতে খরচ হয় ৬৮ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সেন্ট যোসেফের উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি, নিয়ম প্রকাশ
  • ‘ছুটে গিয়ে দেখি, একটি হরিণ ঝুলছে শিকারির ফাঁদে’
  • গুদামে খাওয়ার অনুপযোগী চাল নিয়ে রাজশাহী খাদ্য বিভাগে তোলপাড়, ৮ তদন্ত কমিটি
  • জাপানে মাস্টার্স ও পিএইচডির সুযোগ, ১-৪ বছর পর্যন্ত আর্থিক সুবিধা
  • ‘কেনতো পারমু না, হেইতে ইলশার সুরতটা দেইখ্যা যাই’
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন
  • যুক্তরাজ্য থেকে আসছে মাদক এমডিএমএ, গ্রেপ্তার ৫
  • চাপে পড়ে নয়, অনুরোধে ভারতে ইলিশ পাঠানোর অনুমোদন: ফরিদা আখতার
  • ভোটের সরঞ্জাম আসছে ইসিতে
  • সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের বিএসএফের হাতে আটক ১৯ বাংলাদেশি মৎস্যজীবী