নতুন পথনকশায় ১৪ মাসে ৬১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে
Published: 16th, April 2025 GMT
গ্যাসের সিস্টেম লস (কারিগরি ত্রুটি) কমাতে পথনকশা তৈরি করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। ৭টি গ্যাস কোম্পানিকে ২০২৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত সিস্টেম লস কমানোর লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছে এ বিভাগ। বিভাগটি বলেছে, কোম্পানিগুলোকে এ সময়ের মধ্যে কমপক্ষে অর্ধেকের নিচে নামিয়ে আনতে হবে গ্যাসের সিস্টেম লস। কাজটি না পারলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ভোগ করতে হবে শাস্তি।
সচিবালয়ে আজ বুধবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ পথনকশা চূড়ান্ত করা হয়। জ্বালানিসচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা (এমডি) এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমানে যে পরিমাণ সিস্টেম লস হয়, তার আর্থিক মূল্য ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। আগামী বছরের জুনের মধ্যে পথনকশা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সিস্টেম লস অর্ধেকে নেমে এলে অন্তত ৫০ কোটি মার্কিন ডলার সাশ্রয় হবে। বর্তমান বাজার মূল্যে এর পরিমাণ ৬১ হাজার কোটি টাকা।
দেশীয় কোম্পানি, আন্তর্জাতিক কোম্পানি ও চট্টগ্রামের মহেশখালীতে থাকা দুই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল থেকে মিটারিংয়ের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হয় গ্যাস ট্রান্সমিশন পিএলসি লিমিটেডে (জিটিসিএল)।
জিটিসিএল পরে মিটারিংয়ের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করে ছয় কোম্পানিকে। এগুলো হচ্ছে তিতাস, বাখরাবাদ, কর্ণফুলী, জালালাবাদ, সুন্দরবন ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি। এসব কোম্পানিই পরে গ্যাস সরবরাহ করে গ্রাহকদের। সিস্টেম লসের মধ্যে তিতাস ও বাখরাবাদ গ্যাসেরই বেশি, যা সুন্দরবন গ্যাস ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাসের নেই বললেই চলে।
এখন থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে কোন কোম্পানি কোন মাসে সিস্টেম লস কতটা নামিয়ে আনবে, তা বেঁধে দেওয়া হয়েছে পথনকশায়। পথনকশা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কি না, তিন মাস পর তা আবার খতিয়ে দেখবেন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
তিতাস গ্যাসের গত জানুয়ারি মাসে সিস্টেম লস ছিল ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে কোম্পানিটিকে এ হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশে এবং ডিসেম্বরে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। একইভাবে বাখরাবাদের জানুয়ারিতে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ সিস্টেম লস থাকলেও আগামী বছরের জানুয়ারি ও ডিসেম্বরেও কোম্পানিটিকে এ হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে।
পথনকশায় সিস্টেম লস কমিয়ে আনার ব্যাপারে তিতাসের ৩৯১ ও বাখরাবাদের ১৩৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কর্ণফুলী গ্যাসে ২০০, জালালাবাদে ৬৪ এবং পশ্চিমাঞ্চল গ্যাসে ৩৬ জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সিস্টেম লস কমাতে সাতটি ভিজিল্যান্স দল গঠন করা হয়েছে। অবৈধ বিতরণ পাইপলাইন অপসারণ, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা এবং বিচ্ছিন্ন করার পর এগুলো আবার পুনঃস্থাপিত হয়েছে কি না, সেগুলো সরেজমিন দেখবে দলগুলো। পুনঃস্থাপনের সঙ্গে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বা কোনো ঠিকাদার জড়িত কি না, তা–ও চিহ্নিত করা হবে।
সূত্রগুলো জানায়, গত ২৫ জানুয়ারি থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত ২ মাসে ৭০ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন উচ্ছেদ করা হয়েছে। আর অবৈধ আবাসিক বার্নার বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে প্রায় ২৭ হাজার। এ সময় ৯৬টি মোবাইল কোর্টসহ ও ১ হাজার ১৮৮টি মোবাইল কোর্ট ছাড়া অভিযান করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স স ট ম লস ক
এছাড়াও পড়ুন:
ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করলে কী কী ঘটতে পারে?
ইসরায়েলের হামলার জেরে, সেই সঙ্গে ইসরায়েলের সহায়তায় অন্যরা এগিয়ে এলে হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিতে পারে ইরান। যদি এটি তারা করেই ফেলে, তাহলে তা বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটাবে, বাড়বে দাম; এমনই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এড হির্স আলজাজিরা বলেছেন, ইরান যদি হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেয়, তাহলে তা বৈশ্বিক তেলের দামে বিশাল প্রভাব ফেলবে।
ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা ইরিনা জানিয়েছে, ইরানের পার্লামেন্টের নিরাপত্তা কমিশনের সদস্য এসমাইল কোসারি বলেছেন, ইসরায়েলের হামলার জবাবে হরমুজ প্রণালি বন্ধের বিষয়টি ইরান ‘গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে’।
আরো পড়ুন:
রাতভর ইরানের হামলায় ইসরায়েলে নিহত ৭, আহত ২০০
ইরানে নিরাপদে আছেন ৬৬ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী
এ বিষয়ে আলজাজিরাকে এড হির্স বলেন, “হরমুজ প্রণালি দিয়ে প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল পরিবাহিত হয় অর্থাৎ বৈশ্বিক তেলের বাজারের প্রায় ২০ শতাংশ এই প্রণালি দিয়ে যায়।”
তিনি আরো বলেন, “সৌদি আরব বা কুয়েতের জন্য এই অঞ্চল থেকে তেল রপ্তানির তেমন কোনো সহজ বিকল্প পথ নেই।”
হির্স ব্যাখ্যা করে বলেন, “যদি এই প্রবাহ অর্ধেকে নেমে আসে, তাহলে বিশ্ববাজারে ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম ১২০ ডলারের ওপরে উঠে যেতে পারে। আর এটি এমন একটি প্রভাব হবে, যা খুব দ্রুতই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।”
তিনি আরো বলেন, হরমুজ প্রণালি বন্ধের ঘটনা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি অজুহাত দিতে পারে ইরানে হামলার জন্য; যদিও ট্রাম্প ইরানের প্রতি কঠোর অবস্থান বজায় রাখলেও ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘাত শেষ করতে চান বলে জানিয়েছেন তিনি।
হির্স বলেন, “যদি ইরান তেল সরবরাহ বন্ধ করে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে সরাসরি আঘাত হানে, তাহলে সেটিই হয়তো যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের বিরুদ্ধে সামরিকভাবে জড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় কারণ বানিয়ে তুলবে।”
ঢাকা/রাসেল