ফ্রিজ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন, প্রিমিয়ার ব্যাংককে জরিমানা
Published: 16th, April 2025 GMT
প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এইচবিএম ইকবালের ফ্রিজ করা অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়ায় ব্যাংকটিকে বড় অঙ্কের জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান ইকবালের ছেলে মোহাম্মদ ইমরান ইকবাল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক পরিদর্শনে বিষয়টি ধরা পড়ার পর সমপরিমাণ ১ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং ৩০ হাজার ডলার সমপরিমাণ প্রায় ৩৭ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বুধবার বিএফআইইউ এ-সংক্রান্ত চিঠি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিএফআইইউ গত নভেম্বরে এইচবিএম ইকবাল, তার বর্তমান স্ত্রী অভিনেত্রী আঞ্জুমান আরা শিল্পী এবং তিন সন্তান মঈন উদ্দিন ইকবাল, ইমরান ইকবাল ও নওরীন ইকবালের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে। পাশাপাশি তাদের একক মালিকানায় কোনো প্রতিষ্ঠান থাকলে সে হিসাবও ফ্রিজ করতে বলা হয়। এই নির্দেশনা অমান্য করে ব্যক্তি হিসাব থেকে ১ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং ৩০ হাজার ডলার সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংক। যে কারণে ব্যাংকটিকে সমপরিমাণ জরিমানা করা হয়েছে।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ আশীর্বাদে এইচবিএম ইকবাল পরিবারই এখনও প্রিমিয়ার ব্যাংক চালাচ্ছে। বিভিন্ন জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত থাকার সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকার পরও অদৃশ্য কারণে সরকার পতনের পর প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন চেয়ারম্যান এইচবিএম ইকবালের ছেলে মোহাম্মদ ইমরান ইকবাল।
গত ৫ আগস্টের পর থেকে এইচবিএম ইকবাল পলাতক। বিদ্যমান নিয়মে টানা তিন মাস পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে অনুপস্থিত থাকলে পদ হারাবেন। এ রকম ঝুঁকির কারণে গত ১২ জানুয়ারি তিনি এবং তার আরেক ছেলে ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান মইন ইকবাল ই-মেইল যোগে পদত্যাগপত্র পাঠান। এরপর ১৪ জানুয়ারি পরিচালনা পর্ষদের সভায় তা অনুমোদন হয়। এছাড়া এইচবিএম ইকবালের পছন্দের অন্য পরিচালকরা বহাল আছেন। ইকবাল পরিবারের একক আধিপত্যের কারণে ব্যাংকের কাছে বিভিন্ন ভবন ভাড়া দিয়ে কয়েকগুণ টাকা নেওয়া, বিভিন্ন কমিশন বাণিজ্যসহ নানা উপায়ে অনৈতিক সুবিধা অব্যাহত আছে।
জানা যায়, এইচবিএম ইকবাল প্রিমিয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান। গ্রুপটির অধীনে পাঁচ তারকা হোটেল, রেস্টুরেন্ট, সিমেন্টসহ বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে গুলশানে হোটেল রেনেসন্স, হিলটন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট এবং রয়াল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও সরকার ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হয়েছে। নানা অনিয়ম হয়েছে এরকম ১৫টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিগত সরকারের সময়ে প্রিমিয়ার ব্যাংক বিভিন্ন অনিয়মের কারণে আলোচনায় ছিল। ১৯৯৯ সালে ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি চেয়ারম্যানের পদ আঁকড়ে রাখেন। এবারই প্রথম তার ছেলেকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইকব ল র ইকব ল প ন ইকব ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে বিদেশি ঋণ শোধ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়াল
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই–মার্চ) বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল বাবদ ৩২১ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের প্রায় সমান। গত অর্থবছরে (২০২৩–২৪) মোট ৩৩৭ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হয়েছে। এর মানে হলো, এবার প্রথম ৯ মাসেই গত অর্থবছরের কাছাকাছি ঋণ পরিশোধ হয়ে গেছে।
আজ বুধবার বিকেলে প্রকাশিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তৈরি জুলাই–মার্চ মাসের বিদেশি ঋণ পরিস্থিতির হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। সেখানে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধের এই তথ্য পাওয়া গেছে।
ইআরডির তথ্য অনুসারে, ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই–মার্চ) দেশে মোট প্রায় ৪৮১ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি ঋণ এসেছে। এ সময়ে ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হয়েছে অর্থছাড়ের প্রায় দুই–তৃতীয়াংশের সমান।
অন্যদিকে আলোচ্য ৯ মাসে বিদেশি ঋণ বাবদ পরিশোধের মধ্যে আসলের পরিমাণ ২০১ কোটি ডলার। আর সুদ বাবদ ১২০ কোটি ডলার পরিশোধ হয়েছে। ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ২৫৭ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে ৬৪ কোটি ডলার বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে।
এদিকে গত জুলাই–মার্চ সময়ে ৩০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ, যা গতবারের একই সময়ে পাওয়া প্রতিশ্রুতির অর্ধেকের কম। গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৭২৪ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল।
জুলাই–মার্চ সময়ে সবচেয়ে বেশি ১২২ কোটি ডলার ছাড় করেছে এডিবি। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক ১০৭ কোটি ডলার ও জাপান ৮৯ কোটি ডলার দিয়েছে।