Samakal:
2025-06-15@23:21:41 GMT

আইনের হাত বনাম নিজের হাত  

Published: 17th, April 2025 GMT

আইনের হাত বনাম নিজের হাত  

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বিশেষত বাংলাদেশে গত ২৬ জুলাই-পরবর্তী আট মাসের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী। গণপিটুনি, স্থানীয়ভাবে বিচারকাজ পরিচালনা, মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে ব্যক্তিগত প্রতিশোধ গ্রহণ এসব অনিয়ন্ত্রিত প্রবণতা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে এবং আইনশৃঙ্খলার ভিত্তি দুর্বল করে দিচ্ছে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকারিতা ও বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ব্যাহত হলে জনমনে অবিশ্বাস দানা বাঁধে, যা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রকে ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে। জনগণ যখন ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে না, তখন তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে উদ্বুদ্ধ হয়। এর ফলে সামাজিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হয় এবং অপরাধপ্রবণতা বাড়ে।

এ সমস্যা নিরসনে যথাযথ আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করা, বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে তার কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং মিথ্যা অভিযোগ ও গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। একই সঙ্গে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। কার্যকর ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি সুস্থ, ন্যায়ভিত্তিক ও স্থিতিশীল সমাজ গঠন সম্ভব।

অনেক সময় অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে ভুক্তভোগীদের দীর্ঘ সময় এবং অর্থ ব্যয় করতে হয়। অতীতে বহু অপরাধের বিচার হয়নি; প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে এবং অপরাধীরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব ব্যবহার করে অথবা আইন ও পুলিশি ব্যবস্থার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে বিচার কার্যক্রম প্রভাবিত বা অসম্পূর্ণ করে তোলে। অনেক সময় পুলিশের গাফিলতি ও প্রশাসনিক দুর্নীতির কারণে অনেক অপরাধী বিচারের আওতার বাইরে থেকে যায়, যা জনগণের আইনের প্রতি আস্থা হ্রাস করে। অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত অভিযোগকারীরা ন্যায়বিচার পান না। বরং মিথ্যা অভিযোগকারীরা রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতে সক্ষম হয়। আমরা দেখেছি, পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে জনগণ গণপিটুনির মাধ্যমে বিচার সম্পন্ন করছে। এটি মূলত সমাজে ন্যায়বিচার প্রক্রিয়া ও প্রশাসনের প্রতি মানুষের ক্ষোভের ইঙ্গিত দেয়। 

সাধারণ মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। তারা মনে করে, প্রশাসন বা পুলিশ তাদের কাজ সঠিকভাবে করছে না। ফলে তারা নিজেদের উদ্যোগে শাস্তি দিয়ে প্রশাসনকে শেখাতে চায়– কীভাবে ন্যায়বিচার করতে হয়। প্রশাসনকে বিচার শেখানোর উদ্দেশ্যে এটি করা হলেও যদি বারবার তা ঘটতে থাকে, তা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। এভাবে সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা কোনোভাবেই আইনি বা ন্যায্য পদ্ধতির অংশ নয়।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকারিতা ও বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ব্যাহত হলে জনমনে অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়, যা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রকে ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে। যখন জনগণ ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে না, তখন তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে উদ্বুদ্ধ হয়। ফলে সামাজিক স্থিতিশীলতা ব্যাহত হয় এবং অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

একটি সুস্থ সমাজ গঠনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন অপরিহার্য। জনগণের মধ্যে আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা রোধ এবং মিথ্যা অভিযোগকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সহজ হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধি, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে পারলে দেশ আরও নিরাপদ ও ন্যায়ভিত্তিক হবে। আইনের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরানো এবং বিচার প্রক্রিয়া কার্যকর করার মধ্য দিয়েই একটি আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

উছমান গনি: শিক্ষক
    usmgoni@gmail.

com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইন ন জ র হ ত ন শ চ ত কর প রবণত অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

বাজেটের ত্রুটি সংশোধনের আহ্বান

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ২২ জুন পাসের আগে বাজেটে যেসব ত্রুটি রয়েছে তা সংশোধন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

শনিবার (১৪ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত ‘বাজেট: দেড় দশকের অভিজ্ঞতা ও অর্থনীতির গতিপথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, “আমরা চাই ২২ তারিখের আগে বাজেটে যেসব ত্রুটি রয়েছে তা সংশোধন করা হোক। আমাদের এখন যেসব সংস্কার কমিটিগুলো রয়েছে তারা যেসব সুপারিশ দিয়েছে, সেগুলো অল্প করেও যদি বাস্তবায়ন করা হতো, তাহলেও বাজেটে কিছুটা নতুনত্ব আসতো। সংস্কার কমিশনগুলো কি স্রেফ অলঙ্কার হিসেবে রয়েছে নাকি, আমার জানা নেই। আমি চাই, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ সরকারের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হোক। এবারের বাজেটে দেখা যাচ্ছে যে সুদ সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে। এটা যদিও বর্তমান সরকারের দোষ না।এটার জন্য আগের সরকারই দায়ী।”

আরো পড়ুন:

নির্দেশনামূলক বাজেট দিতে অন্তর্বর্তী সরকার ব‍্যর্থ: এবি পার্টি

প্রস্তাবিত বাজেট নব্য ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন: জিএম কাদের

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “সরকার মেগা প্রকল্প থেকে বের হতে চায়, এটা তাদের প্রত্যাশা। কিন্তু যেসব মেগা প্রকল্প এখন চলমান রয়েছে, সেগুলোরও একটি পর্যালোচনা করতে হবে। উন্নয়ন নাম দিয়ে যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যা বিলাসী ও জনগণের জন্য বিপজ্জনক। যেমন-রূপপুর, মাতারবাড়ি, রামপাল, এসব প্রকল্প থেকে সরকারের বের হয়ে আসার কোনো উদ্যোগ আমরা দেখিনি। এখন থেকে বের হওয়ার জন্য সরকার যে উদ্যোগ নিতে পারতো, তা হলো জাতীয় সক্ষমতার উন্নয়নের বিকাশ ঘটানো। আর এই বিকাশ ঘটানো হলে অনেক কম দামে আমরা গ্যাস পাব, বিদ্যুৎ খাতে যে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি রয়েছে তা আর দিতে হবে না। পরিবেশ বিনাশী কোনো প্রকল্পেও যেতে হবে না সরকারের।”

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “তবে দুঃখজনক যে, বর্তমান সরকার যে বাজেট উপস্থাপন করেছে, তাতে এই ধরনের পরিকল্পনা নেই। বাজেটে আগের ধারাবাহিকতাই দেখা যাচ্ছে, ধারাবাহিকতায় উন্নয়ন শুধু শিরোনামে দেখা যায়, বাস্তবতায় তা হলো জনগণের জীবন বিপণ্নকারী।”

সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন লেখক কল্লোল মোস্তফা, গবেষক মাহা মির্জা প্রমুখ।

ঢাকা/রায়হান/সাইফ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রামে সাংবাদিক পরিচয়ে হোটেল কক্ষে তল্লাশি, সমালোচনা 
  • ইরানের শাসকদের ক্ষমতাচ্যুত করার আহ্বান সাবেক শাহের পুত্রের
  • ভারতে কোনো বাংলাদেশি থাকলে উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠাতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচনের জন‌্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • গাজীপুরে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে কারখানার কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে মারধর, আটক ৪৩
  • বাজেটের ত্রুটি সংশোধনের আহ্বান
  • তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
  • বিএনপি ও গণ অধিকারের মধ্যে উত্তেজনার জেরে পটুয়াখালীর ২ উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি
  • দীর্ঘ ছুটি শেষে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় ফিরছে মানুষ