১৯৬৪ সালে ‘সুতরাং’ সিনেমার মধ্য দিয়ে যে কিশোরীটি রূপালি পর্দায় পা রাখলেন, সময়ের আবর্তনে তিনি হয়ে উঠলেন বাংলা চলচ্চিত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। একজন সময়ের সাক্ষী, সংগ্রামী শিল্পী তিনি কবরী। যাঁর আসল নাম মিনা পাল। কোন বিশেষণে বিশেষায়িত করলে কবরীকে আপন মহিমা, আভিজাত্য ও গৌরবে উপস্থাপন করা যায়? মিষ্টি মেয়ে, স্বপ্ননায়িকা, কিংবদন্তি যেভাবেই ডাকা হোক না কেন, একজন পরিপূর্ণ কবরী অনিঃশেষ অখণ্ডতায় আবিষ্কার করা সহজ নয়। বাংলা চলচ্চিত্রের গৌরবময় ইতিহাসের স্বর্ণালি অধ্যায় অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীর আগমনে উজ্জ্বল হয়েছে। অনেকের ভিড়ের মধ্যে কবরী ছিলেন একেবারেই স্বতন্ত্র।
কিশোরী বয়সেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন হাজারো দর্শকের ভালোবাসার পাতায় পাতায় এক প্রিয় নাম– ‘মিষ্টি মেয়ে’ কবরী। অভিনয়, সৌন্দর্য, সততা, নিষ্ঠা আর একাগ্রতার পরিপূর্ণ প্যাকেজ ছিলেন কবরী। তাঁর চাহনি, কটাক্ষ, হাসি, অভিনয় প্রতিভায় মগ্ন হয়েছিলেন আবালবৃদ্ধবনিতা। তাঁর ভুবন ভোলানো হাসি আর হৃদয়ছোঁয়া অভিনয়ে মুগ্ধ সব বয়সী দর্শক। তাইতো তিনি ছিলেন তাঁর সময়ে রূপালি পর্দায় অপরিহার্য একজন। সে সময়ে একটি কথা প্রচলিত ছিল– ‘কবরী হাসলেও লাখ টাকা, কাঁদলেও লাখ টাকা। অর্থাৎ তাঁর অভিনয় এতটাই নিখুঁত যে, তিনি বাংলার সব শ্রেণির দর্শকের কাছে পাশের বাড়ির সেই মেয়েটি হয়ে উঠতে পেরেছিলেন।
পাশের বাড়ির মেয়েটির সুখ-দুঃখ যে কারও মনে রেখাপাত করতে পারে, যে কারণে তাঁর হাসি বা কান্না দুয়েরই অর্থমূল্য ছিল। নির্মাতারা ছবিতে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করে নিশ্চিত থাকতে পারতেন। তাইতো বলা যায় কবরী হয়ে উঠেছিলেন শাশ্বত বাঙালি নারীর এক মূর্ত প্রতীক, যাঁর চোখ, মুখ, চুলের ছাঁট ছিল আবহমান নারী সৌন্দর্যের প্রতীক।
বাংলা সিনেমার ইতিহাসে কবরীর আবির্ভাব যেন নতুন একটি যুগের শুরু। ষাটের দশকের মাঝামাঝি যখন বাংলা সিনেমা আস্তে আস্তে শিল্পমানে উন্নত হতে শুরু করেছে, কবরী এসেই যেন সেই গতি বাড়িয়ে দিলেন। তাঁর নিষ্পাপ হাসি, সহজ অভিনয় আর আত্মিক সংলাপ প্রতিভা দর্শকের মনে স্থায়ী ছাপ ফেলেছিল।
তিনি যে কেবল সৌন্দর্য দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করতেন তা নয়; বরং তাঁর অভিনয়ের গভীরতা, চরিত্রের সঙ্গে একাত্মতা এবং নিপুণ সংবেদনশীলতা তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছিল।
তাঁর অভিনীত ‘সুতরাং’, ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘ময়নামতি’, ‘অবাক পৃথিবী’, ‘বাহানা’, ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘স্মৃতিটুকু থাক’, কিংবা ‘সারেং বউ’ প্রতিটিই যেন একেকটি কালজয়ী চিত্ররূপ। একজন কবরীকে বুঝতে গেলে শুধু চলচ্চিত্র দিয়ে বিচার করা যায় না। তাঁকে বুঝতে হয় তাঁর সামাজিক ও রাজনৈতিক সচেতনতা, সাংস্কৃতিক দায়বদ্ধতা দিয়ে। কবরী ছিলেন সেই বিরল শিল্পীদের একজন, যিনি নিজেকে শুধু নায়িকা হিসেবে ভাবেননি; বরং দেশের জন্য, সমাজ ও মানুষের জন্য কাজ করেছেন সবসময়।
কবরী পর্দায় যেমন ছিলেন শক্তিশালী নারী চরিত্রের প্রতিভূ, তেমনি বাস্তব জীবনেও ছিলেন স্পষ্টবাদী, প্রতিবাদী এবং নিজের চিন্তায় অটুট।
যাঁর হাত ধরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে নারীর আত্মমর্যাদা গড়ে উঠেছিল, যিনি সহজ অথচ অনবদ্য অভিনয়ে জীবন্ত করে তুলতেন প্রতিটি চরিত্র, যিনি পর্দায় ছিলেন প্রেয়সী, মা, সংগ্রামী, বোন কিংবা প্রতিবাদী নারী– তাঁর অনুপস্থিতি অনুভব করি প্রতিনিয়ত। আজ এ বরেণ্য অভিনেত্রীর মৃত্যুবার্ষিকী। নন্দনের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি রইল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কবর চলচ চ ত র চলচ চ ত র পর দ য়
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে
পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে অধ্যাদেশের খসড়াটি সচিব কমিটির মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের কাঠামো ও কার্যক্রমের খসড়া তৈরি করেছে।
খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এই কমিশনের চেয়ারপারসন হবেন। সদস্য থাকবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ; গ্রেড-২ পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা; অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা; পুলিশ একাডেমির একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ; আইন, অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক; ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন একজন মানবাধিকারকর্মী।
আরও পড়ুনপুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে স্বাধীন কমিশন অপরিহার্য৮ ঘণ্টা আগেকমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন।কমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন। সদস্যরা যোগদানের দিন থেকে চার বছর নিজ নিজ পদে থাকবেন। মেয়াদ শেষে কোনো সদস্য আবার নিয়োগের যোগ্য হবেন না।
অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ প্রতিপালনে বাধ্যবাধকতার বিষয়ে বলা হয়েছে—এই কমিশন যেকোনো কর্তৃপক্ষ বা সত্তাকে কোনো নির্দেশ দিলে উক্ত কর্তৃপক্ষ বা সত্তা অনধিক তিন মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। তবে কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো অসুবিধা হলে সে ক্ষেত্রে নির্দেশ বা সুপারিশ পাওয়ার অনধিক তিন মাসের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। কমিশন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে যে নির্দেশ বা সুপারিশ পাঠাবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ বা সুপারিশ কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করে কমিশনকে জানাতে হবে।
আরও পড়ুনকোনো দল নয়, পুলিশের আনুগত্য থাকবে আইন ও দেশের প্রতি৯ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।এই কমিশনের সদস্য পদে নিয়োগের সুপারিশ প্রদানের জন্য সাত সদস্যের সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হবে। খসড়া অধ্যাদেশে প্রধান বিচারপতির মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মনোনীত একজন সরকারদলীয় এবং একজন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যকে বাছাই কমিটিতে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ন্যূনতম পাঁচ সদস্যের উপস্থিতিতে বাছাই কমিটির কোরাম হওয়া ও বাছাই কমিটির বাছাই প্রক্রিয়া শুরুর ৩০ দিনের মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে খসড়া প্রস্তাবে।
আরও পড়ুন‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা১৭ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ খসড়ায় কমিশন প্রতিষ্ঠা, কার্যালয়, সদস্যদের নিয়োগ, মেয়াদ, কমিশনের সদস্য হওয়ার জন্য কারা অযোগ্য, সদস্যদের পদত্যাগ, অপসারণ, পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধি, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, নাগরিকের অভিযোগ অনুসন্ধান-নিষ্পত্তি, পুলিশ সদস্যদের সংক্ষোভ নিরসন, পুলিশপ্রধান নিয়োগ, আইন-বিধি, নীতিমালা প্রণয়ন ও গবেষণা বিষয়েও প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
আরও পড়ুনমাঝেমধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কি আমাদের লোক’: আইজিপি১৭ ঘণ্টা আগে