খুলনায় এসেনসিয়াল ড্রাগস`র ৪৫ জন চাকরিচ্যুত
Published: 17th, April 2025 GMT
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) খুলনা কারখানা থেকে ৪৫ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। ‘অতিরিক্ত জনবল’ দেখিয়ে সম্প্রতি তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়।
চাকরিচ্যুতরা জানান, তারা ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে এ কোম্পানিতে চাকরি করছেন। কিন্তু গত ১০ এপ্রিল অফিস ছুটির সময় তাদের বলা হয়, রবিবার (১২ এপ্রিল) থেকে আর অফিসে আসতে হবে না। তারা অভিযোগ করেন, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণেই তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
কারখানায় সিনিয়র ক্লার্ক (প্রশাসন) হিসেবে কর্মরত ছিলেন রাকিব হাসান। তিনি বলেন, ‘‘২০১১ সাল থেকে চাকরি করছি এখানে। ২০১৩ সালে চাকরি স্থায়ী হয়। গত ১০ এপ্রিল অফিস ছুটির পর ৪৫ জনকে চাকরিচ্যুতির নোটিশ দেওয়া হয়।’’
আরো পড়ুন:
সুষ্ঠুভাবে খুবি ‘সি’ ও ‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
ব্যতিক্রমী একাডেমিক ক্যালেন্ডারে সেশনজট মুক্ত খুবি
নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত জনবলের কারণে শ্রম আইনের ধারা-২৬ অনুযায়ী ১০ এপ্রিল থেকে টারমিনেশন করা হলো।
রাকিব হাসান আরো বলেন, ‘‘খুলনাসহ প্রতিটি কারখানাতেই অতিরিক্ত জনবল রয়েছে। এছাড়া কয়েক মাস আগে খুলনা কারখানায় বেশ কয়েকজন শ্রমিক-কর্মচারীকে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা এই শেষ বয়সে কোথায় চাকরি পাব?’’
গোপালগঞ্জে জেলার বাসিন্দা একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে সততার সঙ্গে চাকরি করে আসছি। শুধু গোপালগঞ্জ জেলার লোকদের টার্গেট করে ছাঁটাই করা হচ্ছে।’’
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল আজিম তুষার বলেন, ‘‘অতিরিক্ত জনবলের কারণে খুলনা থেকে ৪৫ জন, বগুড়া থেকে ৫৪ জন, গোপালগঞ্জ থেকে ১০ জন ও ঢাকা অফিস থেকে ১৪০ জনকে টারমিনেশন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর জন্য কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’
ঢাকা/নুরুজ্জামান/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ কর চ য ত
এছাড়াও পড়ুন:
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নে দ্বিতল ভবনবিশিষ্ট একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রে ওষুধ নেই, চিকিৎসক নেই, বিদ্যুৎ–সংযোগ নেই। ফলে তেমন একটা রোগীও নেই। এই ‘নাই নাই’ হাসপাতালটির নাম মাস্টারদা সূর্য সেন মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র। এভাবে কি একটা হাসপাতাল চলতে পারে? প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যাওয়ার এমন নমুনা আমাদের হতাশ করে। দেশজুড়ে এ রকম আরও চিত্র আমরা দেখতে পাই, যা আমাদের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে ইতিবাচক কোনো বার্তা দেয় না।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০৩ সালে চালু হওয়া এই ১০ শয্যার হাসপাতালটির মূল সমস্যা জনবলসংকট। ১৬টি পদের ১টিতেও স্থায়ী জনবল পদায়ন করা হয়নি। অন্য হাসপাতাল থেকে প্রেষণে এসে মাত্র তিনজন কর্মচারী (একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন মিডওয়াইফ ও একজন আয়া) সপ্তাহে কয়েক দিন করে দায়িত্ব পালন করেন। এটি একটি জরুরি প্রসূতিসেবাকেন্দ্র, যা ২৪ ঘণ্টা চালু থাকার কথা। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই, ডাক্তার নেই এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে এর কার্যক্রম এখন প্রায় স্থবির।
হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় প্রায় তিন মাস ধরে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন। ফলে পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই। বিনা মূল্যের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে প্রায় ছয় মাস ধরে। এ পরিস্থিতিতে একজন রোগী কীভাবে এখানে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসবেন? যেখানে হাসপাতালের বাইরের সাইনবোর্ডে জরুরি প্রসূতিসেবার জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকার কথা লেখা, সেখানে মূল ফটকে তালা ঝোলানো। এটি জনগণের সঙ্গে একধরনের প্রতারণা। হাসপাতালটি চালু না থাকায় মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল বা চট্টগ্রাম শহরে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এতে সময় ও অর্থ—দুটোরই অপচয় তো বটেই, চরম ভোগান্তিরও শিকার হতে হয় মানুষকে।
যে মিডওয়াইফরা এখানে কাজ করছেন, তাঁরা জানান, এখন মাসে মাত্র চার-পাঁচজন প্রসূতি সেবা নিতে আসেন, যেখানে আগে শতাধিক প্রসূতি সেবা পেতেন। নিরাপত্তা প্রহরীরা দুই বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না। তবু নিয়মিত বেতন পাওয়ার আশায় তাঁরা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। এ অসহনীয় দুর্ভোগের কারণ হলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, তাঁরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবলসংকটের কথা জানিয়েছেন, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।
একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখতে কেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধরনা দিতে হবে? জনবল নিয়োগ, কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, বিদ্যুতের ব্যবস্থা কার্যকর করা—সব ধরনের সংকট দূর করতে হাসপাতালটির দিকে আন্তরিক মনোযোগ দেওয়া হবে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।