লালমনিরহাটে আদালতে কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ, বাতিল চেয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ
Published: 17th, April 2025 GMT
লালমনিরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালত কার্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে তা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে লালমনিরহাট শহরের মিশন মোড় চত্বরে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
‘লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক সমাজ’-এর ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনটির আহ্বায়ক অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক জয়নুল আবেদীন, লালমনিরহাট জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম মমিনুল হক, লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য ও লালমনিরহাট পৌর বিএনপির সভাপতি মো.
সমাবেশে বক্তারা আদালত কার্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির করে নিয়োগ বাতিলের জন্য দাবি জানান। সমাবেশে অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘৫ আগস্টে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে সবাই ভেবেছিলাম, আর কোনো নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক লেনদেন হবে না। কিন্তু আমরা এর বিপরীত চিত্র পেলাম লালমনিরহাট জেলা ও দায়রা জজ কার্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগের বেলায়। সে জন্য আমরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। প্রতিবাদ কর্মসূচিতে আপনাদের বিপুল-সংখ্যক উপস্থিতি আমাদের সাহস জুগিয়েছে। আমরা এ ঘটনার গ্রহণযোগ্য প্রতিকার না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ সামাজিক কর্মসূচি পালন করতে থাকব ইনশা আল্লাহ।’
বিক্ষোভ সমাবেশের পর একটি প্রতিবাদ মিছিল শহরের মিশন মোড় চত্বর থেকে বিজিবি ক্যানটিন মোড়, লালমনিরহাট শিশুপার্ক এলাকা, লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয়, লালমনিরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে দিয়ে বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে।
এর আগে ১৩ এপ্রিল দুপুরে শহরের একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় একই সংগঠনের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে লালমনিরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালত কার্যালয়ে তিনটি পদে মোট ২৪ জন কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে তা বাতিলের দাবি জানানো হয়।
আরও পড়ুনলালমনিরহাটে আদালতে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন১৩ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স বজনপ র ত
এছাড়াও পড়ুন:
‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা
বাংলাদেশে পুলিশে পেশাদারি মনোভাব গড়ে না ওঠার জন্য এই বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহারকে দায়ী করছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মুহাম্মদ নুরুল হুদা। তিনি বলেছেন, বিভাজিত সমাজে ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’—এমন নানা তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। যৌথভাবে এ বৈঠক আয়োজন করে প্রথম আলো ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি। বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। একটি প্রবন্ধ তুলে ধরেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (অবসরপ্রাপ্ত) ও বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি ইয়াসমিন গফুর।
নিজের পেশাজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বলেন, ‘আমি দুই সরকারপ্রধানের (সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গেই কাজ করেছি। অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়ে একটা ভদ্রতা, সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে হয়। দেখা করলে অনেক কথার পরও বা অল্প কথার পরও ‘এ কি আমাদের?’—এমন কথা শুনলে প্রথমেই বিব্রত বোধ করতে হয়।’
সরকারের পরিবর্তনে পুলিশে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে প্রভাবিত হওয়ার উদাহরণ দিয়ে মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘বাড়ি ফরিদপুর যদি হয় বা ফরিদপুরের আশপাশে হয়, কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট হবে না। আবার আরেক সময় বগুড়ায় বাড়ি, ঝিনাইদহে বাড়ি, দিনাজপুরের বাড়ি, তাহলে চাকরিতে নেওয়া যাবে না বা ক্ষেত্রবিশেষে পদোন্নতি হবে না।’ এ ধরনের মনোভাব থেকে বের হতে না পারলে পুলিশ বাহিনীর সংস্কার বা পেশাদারি মনোভাব ফেরানো কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরও আচরণের পরিবর্তন না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে নুরুল হুদা বলেন, ‘এক অদ্ভুত ব্যাপার। এখানে দুই হাজারের মতো লোক মারা গেল। অথচ বিহেভিয়ারে চেঞ্জ নেই।’
দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঠিকভাবে কাজ করতে না পারার অন্তরায় হিসেবে নিয়োগে দুর্নীতি এবং সমাজে বিভাজনকে চিহ্নিত করেন সাবেক এই পুলিশপ্রধান। তিনি বলেন, ‘এই যে প্রচুর সংখ্যার লোক পয়সা দিয়ে চাকরিতে ঢুকেছে বা এখানে হলে...অনেক পয়সা হয়, এই অ্যাটিচিউড (আচরণ) থাকলে তো ল এনফোর্সমেন্ট (আইনশৃঙ্লা নিয়ন্ত্রণ) মুশকিল। আর ল এনফোর্সমেন্টের আরেকটা বড় জিনিস হচ্ছে আমি যে সমাজে কাজ করতে যাচ্ছি, সেই সমাজ কতখানি বিভাজিত।’
সংস্কারের পটভূমিতে স্বাধীন পুলিশ কমিশনের কর্মপদ্ধতি জানতে চেয়েছেন নুরুল হুদা। পুলিশ রিমান্ডের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এই গোলটেবিল বৈঠকে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম আকবর আলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান বক্তব্য দেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, পুলিশের অতিরিক্ত আইজি কাজী মো. ফজলুল করীম বৈঠকে অংশ নেন।