চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙায় চোর সন্দেহে এক যুবককে গাছের সঙ্গে বেঁধে সারারাত নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার হারদি ইউনিয়নের হারদি গ্রামের খালপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য ওই যুবককে স্থানীয় ফাঁড়ি পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। যুবককে নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পেলে স্থানীয়ভাবে ভাইরাল হয়। 
নির্যাতনের শিকার যুবকের নাম বজলু ফরাজী (৩৫)। তিনি উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের ফারাজীপাড়ার পচা ফারাজীর ছেলে।  
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার রাতে হারদি গ্রামের খালপাড়ার কালু হোসেনের বাড়ি থেকে তাঁর স্ত্রীর ম্যাক্সি চুরি হয়। ওই কাপড় পরে বজলু ফরাজী বিভিন্ন বাড়ির জানালা দিয়ে উঁকি দেন। ওই দিন গভীর রাতে কালু প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘুম থেকে উঠে লক্ষ্য করেন, এক প্রতিবেশীর বসতবাড়ির জানালা দিয়ে ম্যাক্সি পরিহিত একজন উঁকি দিচ্ছে। এ সময় চোর সন্দেহে তিনি পেছন থেকে তাঁকে জাপটে ধরেন। তাঁর চিৎকারে এলাকাবাসী ছুটে এসে বজলুকে আটক করে কালুর বাড়ির পাশের একটি কাঁঠাল গাছে বেঁধে সারারাত নির্যাতন করে। 
এ ঘটনায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মারধরের এক পর্যায়ে বজলুর পরিহিত ম্যাক্সিতে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি আগুন লাগানোর চেষ্টা করছেন। এ সময় বজলু প্রাণ বাঁচাতে চিৎকার করছিলেন।  
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে হারদি ইউনিয়নের খালপাড়া ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, রাতের আঁধারে চুরি করতে এলে বজলু নামে একজনকে আটক করে এলাকাবাসী। তাঁকে ধরে অনেকে মারধর করেছে। সকাল ৬টার দিকে তিনি বিষয়টি জানতে পেরে ফাঁড়ির পুলিশকে খবর দিয়ে ওই যুবককে প্রশাসনের জিম্মায় তুলে দিয়েছেন। 
আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুর রহমান সমকালকে জানান, চুরি করতে 
গিয়ে জনতার হাতে আটক ও নির্যাতনের শিকার হওয়া যুবক বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে 
রয়েছেন। অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ র র অভ য গ য বকক

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরিতে না ফেরালে রাজপথ ছাড়বেন না ইআরপিপি স্বাস্থ্যকর্মীরা

পাঁচ মাস ধরে বেতন নেই। পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন কেউ, কেউ আবার চাকরির বয়সসীমা পার করে এখন আর নতুন কোথাও আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছেন না। এর মধ্যেই প্রকল্প শেষের অজুহাতে চাকরিচ্যুত হয়েছেন তারা—যারা ২০২০ সালের করোনা মহামারির সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। এই অবস্থায় নিজেদের চাকরি স্থায়ীকরণ এবং অবিলম্বে বকেয়া বেতনের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ারডনেস (ইআরপিপি) প্রকল্পের আউটসোর্সিং স্বাস্থ্যকর্মীরা। 

আজ সোমবার বেলা ১১টা থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, তাদের প্রধান দাবি হলো স্থায়ীকরণের মাধ্যমে চাকরি বহাল রাখতে হবে এবং রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্তির লিখিত নিশ্চয়তা দিতে হবে। সেইসঙ্গে গত চার মাসের বকেয়া ভাতা অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে অবস্থান কর্মসূচি চলবে, প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

বিক্ষোভরত কর্মীদের একজন বলেন, সরকারের ডাকেই তো আমরা এসেছিলাম। ভয়ঙ্কর সময় ছিল সেটা। তখন যদি পেছনে না ফিরে মানুষকে সেবা দিতে পারি, আজ যখন একটু স্থিতি এসেছে—তখন কেন আমরা উপেক্ষিত হবো? ৫ মাস ধরে একটা টাকাও পাইনি, পরিবার চালানো দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নিপসমে কর্মরত ইআরপিপির মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আবু সুফিয়ান বলেন, প্রায় পাঁচ বছর এই প্রকল্পে কাজ করেছি। এখন বয়স ৩৫ ছাড়িয়েছে। সরকারি চাকরির আবেদনের শেষ সীমা পেরিয়ে গেছি। এখন আমাদের বাদ দিয়ে নতুন অদক্ষ জনবল নেয়ার চেষ্টা চলছে। এটা শুধু অবিচার না, আমাদের মর্যাদায় আঘাত।

ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি সেন্টারের ডাটা অপারেটর আব্দুর রহমান বলেন, ঘরে ছোট বাচ্চা, স্কুলের বেতন দিতে পারিনি। স্ত্রী-সংসার নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছি। করোনার সময় এই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডাকেই আমি কাজে গিয়েছিলাম, এখন সেই অধিদপ্তরের সিঁড়িতেই বসে থাকতে হচ্ছে দাবি আদায়ের জন্য।

ইআরপিপি প্রকল্পের আওতায় কর্মরত এসব স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিযোগ, করোনার সময় গড়ে তোলা আরটি-পিসিআর ল্যাব, ডেডিকেটেড আইসিইউ বা আইসোলেশন ইউনিটে তারাই প্রথম দিন থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। অথচ আজ তাদের বাদ দিয়ে সেই পদে নতুন লোক নিয়োগের পাঁয়তারা চলছে। 

তারা বলছেন, আমরা চাকরি ভিক্ষা চাই না। আমরা যেটুকু প্রাপ্য, সেটুকু চাই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্প চলবে, তবে আমাদের চাকরি কেড়ে নেয়া হলো কেন? আমাদের রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত না করে অন্যদের সুযোগ দেওয়া মানে অবিচারকে পুরস্কৃত করা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ