Samakal:
2025-11-03@13:31:38 GMT

বেলা শেষের যাত্রী

Published: 18th, April 2025 GMT

বেলা শেষের যাত্রী

বয়স একসময় প্রবীণে নিয়ে যায় মানুষকে। সেই প্রবীণ মানেই কি সমাজে অবহেলিত, মূল্যহীন? কেনই বা নিজেকে মনে করেন এমন? আবার অন্যদিকে দেখা যায়, প্রবীণদের এড়িয়ে চলতে চায় নবীনরা। অনেক সময় তাদের কথা বা পরিকল্পনাকে অবমূল্যায়ন করার প্রবণতা দেখা যায়। প্রকাশ পায়, তারা যেন কিছুই বোঝেন না বা কিছুই জানেন না! অথচ তারা সারাজীবনের অভিজ্ঞতাকে সঞ্চয় করে একটা বাস্তবতায় এসে দাঁড়ায়। তাতে আবেগের চেয়ে বিবেকই বেশি কার্যকর হয়ে ওঠে। আমাদের সমাজে সেই প্রবীণরা অসহায়ের মতো নীরবে অবস্থান করেন। তারা নিজেরা সরে আসেন নবীনের আসর থেকে। তাদের জন্য আছে কি তেমন আয়োজন? না, নেই। 
তাই তো নিজ থেকে বসার জায়গা বানিয়ে নিয়েছেন সুন্দরগঞ্জের তারাপুর ইউনিয়নের প্রবীণরা। জীবন নিয়ে নতুন ভাবনার দ্বার খুলে দেয় তাদের সংগঠন ‘বেলা শেষের যাত্রী’। জীবনের পড়ন্ত বেলায় নিজেরা মিলিত হয়ে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করার এক অপরিসীম ভ্রাতৃত্ববোধের দৃষ্টান্ত দেখা গেল এ প্রবীণ-হিতৈষী সংগঠনে।
বিনয় কৃষ্ণ মণ্ডল বিআরডিবির উপপরিচালকের পদ থেকে অবসর গ্রহণের পর অনুভব করতে থাকেন নবীন সমাজে তিনি যেন আলগা আলগা; তখন একাকিত্বের ভাবনাটাও সামনে আসে তাঁর। সে কারণে নিজেদের জন্য কিছু করতে উদ্যোগী হয়ে চৈতন্য বাজারে একটা ঘর নেন। তাঁর বয়সীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সংযোগ ঘটাতে থাকেন। ধীরে ধীরে এর সুফল পেতে থাকেন।  এখন বিকেল হতেই বাড়তে থাকে বয়সীর আগমন। হাসিঠাট্টা, গল্পগুজব, ভালো লাগা-মন্দ লাগা শেয়ার করা, পত্রিকা পড়াসহ আড্ডার আয়োজন বেশ জমে ওঠে নিত্য। কখনও চানাচুর ঝাল, মুড়িমাখার মতো মুখরোচক খাবারের আয়োজন হয়;  কখনও বা চায়ের কাপের চুমুকে চুমুকে জমে ওঠে গল্পের আসর। জমে থাকা কথা, ভাবনারা যেন ডানা পেয়ে বসে। উৎসাহী বা কৌতূহলী যারা শুনেছেন তারা কখনও-সখনও আসেন। কুশল বিনিময়, ভাব বিনিময় করেন তাদের সঙ্গে। নবীনরাও উঁকি মেরে উপভোগ করেন কখনও কখনও। এ সংগঠনের উদ্যোক্তা বিনয় কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘এ আয়োজনে একাকিত্ব আর অবহেলা যেন দূরে সরে যায়। বেঁচে থাকার জন্য পাই নবউদ্যম। মনে হয়, আছি তো আমরাও। আনন্দ পাই, মনে বল পাই, ভালো লাগা আসে বুকের ভেতর।’ তারা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন, এই প্রবীণরা সমাজে যা দেওয়ার দিয়েছেন ও দিচ্ছেন; এখনও তাদের বেলা শেষ হয়নি; তারা বেলা শেষের যাত্রী। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রব ণ

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত

বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। 

সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।

আরো পড়ুন:

একা বাস করতে পারে যে পাখি

কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?

সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।

তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না। 

এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস। 

তিনি জানেন,  প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে।  বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।

সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন। 

একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।

সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।

চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।

গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কারা বেশি কাঁদেন? 
  • বর্তমান সংকটের জন্য সরকার দায়ী, দলগুলোর চাপে সিদ্ধান্ত বদল
  • প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত