ষাটোর্ধ্ব মো. সেলিম উদ্দিন। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় যার জীবন যুদ্ধ। ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, গরম কিংবা শীত উপেক্ষা করে দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে বিভিন্ন বাসা-বাড়ি, অফিসে-আদালতসহ গ্রাহকদের কাছে পত্রিকা নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন এই বয়োজ্যেষ্ঠ। এ পেশা দিয়ে আগে কোনোমতে সংসার চললেও জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। একদিকে বয়সের ভারে ন্যুব্জ, অন্যদিকে নানান অসুখ-বিসুখে শরীর সায় না দিলেও জীবন যুদ্ধে থেমে নেই সেলিম দেশ-বিদেশের খবরাখবর সবার ঘরে-ঘরে পৌঁছে দিলেও এই মানুষটা যেন রয়ে যান খবরের অন্তরালেই।

সেলিমের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার চরনিখলা গ্রামে। সংসারে স্ত্রী ছাড়াও আছেন দুই ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে দু'জন বিয়ে করে যে যার মতো আলাদা হয়ে গেছে অনেক আগেই। মেয়েকেও বিয়ে দিয়েছেন। সম্পদ বলতে বাড়ির ভিটে টুকুই আছে তার। নিজে কষ্টে দিনাতিপাত করলেও 'হকারি' পেশায় ভিড়তে দেননি দুই ছেলেকে। বড় ছেলেটা অটোরিকশাচালক, আর ছোট ছেলেটা হাফেজি শেষ করে টঙ্গী একটা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন।

শুক্রবার পৌরসভার দত্তপাড়া এলাকায় পুরোনো বাইসাইকেল থামিয়ে একটি বাসায় পত্রিকা দিতে যাবেন এমন সময় কথা হয় তার সঙ্গে। আলাপকালে সেলিম উদ্দিন সমকালকে জানান, ‘বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আয়-ব্যয়ের পাল্লার হিসেব মেলে না। অসুস্থ শরীর নিয়েও কাকডাকা ভোরে উঠে গ্রাহকদের পত্রিকা পৌঁছাতে হয়। আগে কোনোমতে জীবন চললেও মাস শেষে এখন যে টাকা কমিশন পায় তা দিয়ে চলতে খুবই কষ্ট হয়। আমাদের কথা কেউ ভাবে না। আমরাও তো রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। আমাদেরও সংসার আছে। অসুখবিসুখ আছে। দুদিন বিছানায় পড়ে থাকলে না খেয়ে থাকতে হবে।’

তিনি জানান, তার কোনো নির্দিষ্ট দোকান কিংবা ঘর নেই। প্রতিদিন সকালে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় পত্রিকাগুলো আসে। পরে সেখান থেকে নিয়ে তিনি বাইসাইকেল দিয়ে সবার কাছে পত্রিকা পৌঁছে দেন।

এদিকে পত্রিকা বিক্রিতে না পোষানোর কারণে সম্প্রতি বন্ধ হয়ে যায় দীর্ঘ ৫৫ বছর পত্রিকা বিক্রির দোকানটি। দোকানের মালিক পীযুষ কান্তি শীল বাপ্পি বলেন, ছাপা পত্রিকার চাহিদা একেবারেই কমে গেছে। একজন লোক রেখে মাসশেষে তার বেতনই দিতে পারি না। দিন দিন লসের পাল্লা ভারি হচ্ছিল। যে কারণে বাধ্য হয়েই ব্যবসা বন্ধ করতে হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো.

আবুল মুনসুর বলেন, এখনতো ইন্টারনেটের যুগ। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে গণমাধ্যম, সংবাদপত্র অনেক আধুনিক হয়ে গেছে। বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ মানুষ মোবাইল অথবা টেলিভিশনেই দেশ-বিদেশের খবরাখবর জেনে যায়। যে কারণে ছাপা পত্রিকার প্রতি মানুষের দিনদিনই আগ্রহ কমে যাচ্ছে। একটা সময় পর এর প্রচলন আরও কমে যাবে। সেক্ষেত্রে ব্যাপক একটি প্রভাব পড়বে হকারদের ওপর। যেই দুর্ভোগটা ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, অনেক হকার আছেন তিনবেলা ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচতে এই পেশায় এসেছিলেন। শেষ বয়সে এসে অন্যকিছু করে রুটি-রুজির ব্যবস্থা করবে সেটারও তো উপায় নেই। স্থানীয় প্রশাসন অথবা সাংবাদিক সংগঠনগুলোর উচিৎ তাদের পাশে দাঁড়ানো।

ঈশ্বরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. আতাউর রহমান বলেন, সমাজের ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অসংগতিগুলো আমরা পত্রিকার মাধ্যমে তুলে ধরি। আর সেগুলো পাঠকদের হাতে পৌঁছে দেয় হকার। আমাদের কাছে এই মানুষগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  ঈশ্বরগঞ্জ প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে পূর্বেও তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হয়েছে, ভবিষ্যতেও করা হবে। পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সহযোগিতা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদুল আহমেদ বলেন, সমাজের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন পত্রিকার হকার। তাদের বিপদ-আপদে আমাদের অবশ্যই পাশে থাকা উচিৎ। আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে  সহযোগিতা করা হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ময়মনস হ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

খামেনিকে হত্যায় ইসরায়েলি পরিকল্পনা আটকে দেন ট্রাম্প

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার ইসরায়েলের পরিকল্পনা কয়েক দিন আগে আটকে দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুজন মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

এমন সময় এ খবর সামনে এসেছে, যখন ইরানে চালানো হামলার প্রথম দিনই দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ পদের প্রায় সব কর্মকর্তাকে হত্যা করে ইসরায়েল। এ ছাড়া ইসরায়েলি হামলায় খামেনির একজন উপদেষ্টাও নিহত হন।

মার্কিন প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘ইরানিরা কি এখন পর্যন্ত কোনো আমেরিকানকে হত্যা করেছে? না। যতক্ষণ না তারা তা করছে, ততক্ষণ আমরা রাজনৈতিক নেতৃত্বের পেছনে লাগার বিষয়ে, এমনকি আলাপও করছি না।’

খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রোববার ফক্স নিউজকে বলেন, ‘কখনো আলাপই হয়নি, এমন অনেক বিষয় নিয়েও খবর প্রকাশ করা হয়েছে। আমি সে বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।’

ফক্সের ‘স্পেশাল রিপোর্ট উইথ ব্রেট বেয়ার’ অনুষ্ঠানে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যা করার দরকার, তা করি।’

নেতানিয়াহু বলেন, ইরানে ইসরায়েলের সামরিক হামলার একটি ফল হতে পারে সরকার পরিবর্তন। তেহরানের সৃষ্ট ‘অস্তিত্বের হুমকি’ দূর করতে ইসরায়েল যা যা প্রয়োজন, তা-ই করবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে চলমান এই সংঘাত ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেড়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, এটি সহজেই শেষ করা যেতে পারে। একই সঙ্গে ইরানকে সতর্ক করে তিনি বলেছেন, যদি ইরান কোনো আমেরিকান লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে, তবে যুক্তরাষ্ট্রও এ সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ