গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বন্যাবাড়ি গ্রাম। এ গ্রামে এক সাহসী নারীর হাত ধরে গড়ে উঠেছে অসাধারণ এক পাঠশালা। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও দারিদ্র্য, প্রতিবন্ধকতা আর সামাজিক সীমাবদ্ধতা জয় করে শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন জয়ন্তী রায়।
৪০ বছর বয়সী জয়ন্তীর জীবন কখনও সহজ ছিল না। তিনি কুঁজো, সোজা হয়ে চলতে পারেন না। ঝুঁকে চলতে হয়। এই প্রতিবন্ধকতার কাছে কখনও তিনি মাথা নিচু করেননি। এসএসসি পাস করেও অর্থাভাবে কলেজে যেতে পারেননি। কৃষক হরিচাঁন রায়কে বিয়ে করে আরও কঠিন এক সংসার জীবন শুরু হয়। একমাত্র সন্তানকে নিয়ে টানাপোড়েনের সংসারে এক দিন সিদ্ধান্ত নেন– শুধু নিজের জীবনের উন্নতি নয়, এলাকার শিশুদেরও পড়াতে হবে।
বাড়ির উঠানের এক গাছতলায় মাত্র ১০ জন শিশুকে নিয়ে শুরু হয় তাঁর পাঠশালা। শিশুপ্রতি মাসে ৩০০ টাকা করে নিলেও অনেকেই দিতে পারত ৫০ বা ১০০ টাকা। কিন্তু অর্থ নয়, জয়ন্তীর মূল লক্ষ্য ছিল শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া। ঝড়-বৃষ্টি এলে গাছতলার পাঠশালা সরিয়ে নেওয়া হতো পাশের মন্দিরে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মঈনুল হক বন্যাবাড়ি গ্রামে একটি রাস্তার কাজ পরিদর্শনে গিয়ে দেখে ফেলেন এই অনন্য পাঠশালা। এর পর থেকেই বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট। ইউএনও জয়ন্তীকে বলেন, অভিভাবকদের কাছ থেকে আর কোনো টাকা নিতে হবে না। উপজেলা অফিস থেকে তাঁর সম্মানী দেওয়া হবে।
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা করে পেয়েছেন জয়ন্তী। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে তাঁর পাঠশালাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমে। এখন জয়ন্তী প্রতি মাসে পাচ্ছেন ৫ হাজার টাকা সরকারি বেতন। পাশাপাশি ইউএনওর উদ্যোগে টিআর প্রকল্পের 
আওতায় ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে একটি টিনশেড পাঠশালা। লাগানো হয়েছে তিনটি বৈদ্যুতিক পাখাও। জয়ন্তীর বিদ্যালয়ে এখন ৩০ জন শিশু পড়াশোনা করছে।
স্থানীয়রা জানান, এক সময় রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে শিশুদের পাঠ নিতে হতো। এখন সুন্দর ঘরে বিনামূল্যে চলছে পাঠদান।
অভিভাবক শিউলী বিশ্বাস ও সবিতা রায় বলেন, জয়ন্তীর পাঠশালায় তাদের ছেলেমেয়েরা অনেক ভালোভাবে পড়াশোনা করছে। আগে যা কল্পনাও করতে পারেননি তারা। দারিদ্র্যের কারণে তারা অনেকেই শিশুদের পড়ানোর জন্য জয়ন্তীকে টাকা দিতে পারতেন না। ইউএনওর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তারা বলেন, তিনি পাঠশালার 
জন্য একটি ঘর ও জয়ন্তীর পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এখন বিনা বেতনে এ পাঠশালায় তাদের ছেলেমেয়েরা 
পড়াশোনা করছে।
নিজেই এক সময় আলো থেকে দূরে সরে পড়া জয়ন্তী এখন অন্যদের জন্য বাতিঘর হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, ‘কোনোদিন ভাবিনি আমার মতো একজন প্রতিবন্ধী নারীও এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে। ইউএনও স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞ, যিনি আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন। যতদিন বাঁচি, ততদিন শিশুদের শিক্ষা দিয়ে যাব।’
টুঙ্গিপাড়ার ইউএনও মঈনুল হক বলেন, এটি একটি অনন্য পাঠশালা। জয়ন্তী যা করেছেন, তা এ সমাজের জন্য দৃষ্টান্ত। এ পাঠশালার শিশুদের জন্য একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। গ্রীষ্মের গরমে শিশুদের কষ্টের কথা ভেবে প্রশাসন থেকে তিনটি পাখার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। জনকল্যাণে উপজেলা প্রশাসন এমন কাজ চালিয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জয়ন ত র র জন য র জ বন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘ক্ষুদে ম্যারাডোনা’ জিসানের দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের ফেকামারা ডুলিকান্দা গ্রামের ক্ষুদে ফুটবলার জিসানের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। স্থানীয়রা ফুটবলে জিসানের দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে ‘ক্ষুদে ম্যারাডোনা’ বলে ডাকেন। 

তারেক রহমানের পক্ষে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জিসানের গ্রামের বাড়িতে যান বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক। তিনি জিসানের বাবা ও এলাকাবাসীকে এ খবরটি জানিয়ে আসেন।

উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের ফেকামারা ডুলিকান্দা গ্রামের অটোরিকশাচালক জজ মিয়ার ছেলে জিসান। মাত্র ১০ বছর বয়সী এই প্রতিভাবান ফুটবলারের অসাধারণ দক্ষতার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। স্থানীয় চর ঝাকালিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র সে। 

কখনও এক পায়ে, কখনও দু’পায়ে, কখনও পিঠে ফুটবল রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কসরত করে জিসান। দেখে মনে হবে, ফুটবল যেনো তার কথা শুনছে। এসব কসরতের ভিডিও নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।

অনলাইনে জিসানের ফুটবল নৈপুণ্য দেখে মুগ্ধ হন তারেক রহমান। তিনি জিসানের ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্ব নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার পক্ষে গতকাল সোমবার বিকেলে জিসানের বাড়িতে যান বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক। 

জিসানকে উপহার হিসেবে বুট, জার্সি ও ফুটবলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তুলে দেন তিনি। এছাড়া জিসানের পরিবারকে আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হয়।

জিসানের ফুটবল খেলা নিজ চোখে দেখে মুগ্ধ আমিনুল হক বলেন, “জিসান ফুটবলে ন্যাচারাল ট্যালেন্ট। তারেক রহমান জিসানের প্রশিক্ষণ, লেখাপড়া ও ভবিষ্যতের সকল দায়িত্ব নিয়েছেন। তাছাড়া প্রতিমাসে জিসানের লেখাপড়া, ফুটবল প্রশিক্ষণ ও পরিবারের ব্যয়ভারের জন্য টাকা পাঠানো হবে।”

জিসান জানায়, মোবাইলে ম্যারাডোনা, মেসি ও রোনালদোর খেলা দেখে নিজেই ফুটবলের নানা কৌশল শিখেছে। নিজ চেষ্টায় সে এসব রপ্ত করেছে।

জিসানের বাবা জজ মিয়া বলেন, “আমি বিশ্বাস করতাম, একদিন না একদিন কেউ না কেউ আমার ছেলের পাশে দাঁড়াবে। আজ আমার সেই বিশ্বাস পূর্ণ হয়েছে।”

ঢাকা/রুমন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাবনায় পুলিশ দেখে পালালেন শিকারিরা, উদ্ধার ৪৫টি ঘুঘু অবমুক্ত
  • মুখের অবাঞ্ছিত লোম দূর  করতে ডায়েটে যে পরিবর্তন আনতে পারেন
  • শেরপুরে বেশি দামে সার বিক্রি: ২ ব্যবসায়ীকে সোয়া লাখ টাকা জরিমানা
  • অনুষ্ঠান করে স্ত্রীকে বিয়ে দিলেন স্বামী
  • ‘ক্ষুদে ম্যারাডোনা’ জিসানের দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান
  • কুড়িগ্রামে সারের দাবিতে সড়কে কৃষকদের বিক্ষোভ