আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি গোলরক্ষক হুগো গাত্তি আর নেই
Published: 21st, April 2025 GMT
আর্জেন্টিনার ইতিহাসখ্যাত গোলরক্ষক হুগো ওরল্যান্ডো গাত্তি আর নেই। স্থানীয় সময় রবিবার (২০ এপ্রিল) ৮০ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই ফুটবল কিংবদন্তি। লাতিন আমেরিকার ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা কনমেবল তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
গত দুই মাস ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন গাত্তি। কোমরের হাড় ভেঙে যাওয়ার পর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার উন্নতির বদলে নতুন করে দেখা দেয় নিউমোনিয়া, কিডনি জটিলতা ও হৃদরোগ। এসব জটিলতার কারণে শেষ পর্যন্ত তার পরিবার তাকে লাইফ সাপোর্ট থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
‘এল লোকো’ নামে পরিচিত গাত্তি ছিলেন একেবারে আলাদা ঘরানার গোলরক্ষক। সাহসী, উদ্ভট এবং অনেক সময় অপ্রচলিত কৌশলে খেলে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতেন তিনি। আর্জেন্টাইন লিগে সর্বোচ্চ ৭৬৫ ম্যাচ খেলার রেকর্ড আজও তার দখলে। ২৬ বছরের দীর্ঘ পেশাদার ক্যারিয়ারে (১৯৬২–১৯৮৮) তিনি বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। যার মধ্যে বোকা জুনিয়র্সের হয়ে ১৯৭৭ সালে জিতেছেন কোপা লিবার্তাদোরেস।
আরো পড়ুন:
হামজা ও শমিতের পর লাল-সবুজের জার্সি পরতে যাচ্ছেন সান্ডারল্যান্ডের মিচেল
বার্সেলোনার রোমাঞ্চকর জয়ের পর অস্বস্তির চোট সংবাদ
অনেক ফুটবল বিশ্লেষকের মতে, আজকের ‘সুইপার কিপার’ কনসেপ্ট— যেখানে গোলরক্ষক গোলপোস্ট ছেড়ে খেলায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেন— এর শুরুটা গাত্তির হাত ধরেই হয়েছিল। তার সেই সময়ের সাহসী খেলার ধরণ আধুনিক ফুটবলের জন্য ছিল এক নতুন ধারা।
১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার প্রথম শিরোপা জয়ের দলে মূল গোলরক্ষক হিসেবে তার জায়গা নিশ্চিত থাকলেও হাঁটুর চোটের কারণে টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগেই দল থেকে বাদ পড়েন তিনি।
গাত্তি ছিলেন শুধু একজন ফুটবলার নন— তিনি ছিলেন একজন স্পষ্টভাষী ও বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। একবার তিনি দিয়েগো মারাডোনাকে ঠাট্টা করে 'গর্ডিতো' (মোটা) বলেন। এর জবাবে পরের ম্যাচে মারাডোনা তার বিপক্ষে চারটি গোল করে দেন। এমন অনেক ঘটনার জন্ম দিয়েছিলেন গাত্তি, যা তাকে স্মরণীয় করে রেখেছে ফুটবলপ্রেমীদের কাছে।
তার মৃত্যুতে বিশ্ব ফুটবল হারিয়েছে এক সাহসী, বৈচিত্র্যময় ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বকে, যিনি যুগ গড়েছেন নিজের মতো করে।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল আর জ ন ট ন আর জ ন ট ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ