পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ছে। এ লক্ষ্যে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন আরও দুটি তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার শালবনীতে এ প্রকল্প নির্মাণ করছে ভারতের শীর্ষস্থানীয় জিন্দল গোষ্ঠীর মালিকানাধীন জেএসডব্লিউ এনার্জি। দুটি ইউনিটে ৮০০ মেগাওয়াট করে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এই প্রকল্পে জিন্দল গোষ্ঠী ১৬ হাজার কোটি ভারতীয় রুপি বিনিয়োগ করবে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ সোমবার প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জিন্দল গোষ্ঠীর কর্ণধার সজ্জন জিন্দল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক পার্থ জিন্দল, বাংলার দূত ও সাবেক ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলী প্রমুখ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেএসডব্লিউ এনার্জির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শরদ মহেন্দ্র বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বহুদিন পরে এ ধরনের জোড়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে উঠছে। এতে আমরা গর্বিত। আগামী চার বছরের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে। এতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

শরদ মহেন্দ্র আরও বলেন, আগামীতে জিন্দল গোষ্ঠী পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে আরও ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের একটি প্রকল্প গড়ে তুলবে।

এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতায় আয়োজিত বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সন্মেলনে যোগ দিয়ে সজ্জন জিন্দল এই তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ প্রকল্পে উৎপাদিত বিদ্যুতের পুরোটাই কিনে নেবে রাজ্য সরকার। এই লক্ষ্যে রাজ্য সরকারের সঙ্গে জিন্দল গোষ্ঠীর ২৫ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি হয়েছে।

জিন্দল গ্রুপের কর্মকর্তারা জানান, পরবর্তী ৪২ মাসের মধ্যে এই জোড়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট এবং ৪৮ মাসের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, এই প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে এই রাজ্যে আর বিদ্যুতের অভাব হবে না। এখন অবশ্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ২৪ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকে। আগামীতে আরও বেশি করে মানুষ বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন। শিল্পায়নে এগিয়ে যাবে রাজ্য। বিদ্যুতের দামও কমে আসবে। তিনি আরও বলেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর ফলে রাজ্যের ১৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং ২৩ জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে। এটি হবে পূর্ব ভারতে এ ধরনের প্রথম প্রকল্প। এটি হবে একটি পরিবেশবান্ধব প্রকল্প।

সজ্জন জিন্দল বলেন, ‘আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলে পশ্চিমবঙ্গ শিল্পক্ষেত্রে আরও এগিয়ে যাবে। এই রাজ্যের শিল্প খাত আরও সমৃদ্ধ হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব দ য ৎ প রকল প জ ন দল গ ষ ঠ র ন জ ন দল

এছাড়াও পড়ুন:

গোদাগাড়ীতে সন্ত্রাসী হামলায় নারীসহ ৬ জন আহত

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে একটি পরিবার। এতে ছয়জন আহত হয়েছেন। এছাড়া তাদের বাড়িঘরে ভাঙচুর করা হয়েছে। ধানের পালায় অগ্নিসংযোগ এবং খেতের পেয়ারা বাগান কেটে দেয়া হয়েছে। এতে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের পানিপার গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার (১১ জুন) প্রথমে পেয়ারা বাগানের ৪১টি গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর দিন হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। আহত ছয়জন এখন গোদাগাড়ী ৩১ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। 

হাসপাতালে ভর্তিরা হলেন, চর আষাড়িয়াদহ পানিপার গ্রামের আল্লাম হোসেন, তার ছেলে গোলাম মোস্তফা বাবু, মেয়ে ফাতেমা বেগম, নাতি জিহাদ (১৪), ইয়াকুব আলী এবং তাদের প্রতিবেশী বকুল ওরফে কান্দু। তাদের মধ্যে আল্লামের পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়। ফাতেমার গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করা হয়। এছাড়া তাকে শ্লীলতাহানিও করা হয়।

আরো পড়ুন:

বগুড়ায় আসামির ছুরিকাঘাতে ২ পুলিশ আহত

আড়াইহাজারে জামায়াতের পথসভায় বিএনপির হামলা, আহত ৫

আহতরা জানান, দিয়াড় মহব্বতপুর গ্রামের জামিলুর রহমানের কাছ থেকে আল্লাম হোসেনের স্ত্রী ও ছেলে গোলাম মোস্তফা ২০১৬ সালের ১৮ মে  শন্য দশমিক ৪৯৫০ একর ও তার আরেক ছেলে মুরশালীন ইসলাম ২০১৮ সালের ৯ মে শূন্য দশমিক ১১০০ একর জমি কেনেন। এর দলিলও করা হয়। জামিলুর রহমান আরএস রেকর্ডমূলে জমি বিক্রি করেন। পরে বিডিএস রেকর্ডে দলিলের কথা গোপন করে এসব জমি আবার নিজেদের নামে রেকর্ড করা হয়। এরপর থেকে তারা জমিগুলো আবার দখলের চেষ্টা করছিলেন।

তারা আরো জানান, জমি কেনার পর প্রায় পাঁচ বছর আগে সেখানে পেয়ারা বাগান করা হয়। গত ১১ জুন সকালে জামিলুর রহমান ও তার ভাই আদিল হোসেনের নেতৃত্বে তাদের ছেলেরা গিয়ে পেয়ারা বাগানের ৪১টি গাছ কেটে ফেলে। এ ঘটনায় আল্লাম হোসেন গ্রামের লোকজনের কাছে নালিশ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পরদিন জামিলুর রহমান, তার ভাই আদিল হোসেন এবং তাদের ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী ধারালো হাঁসুয়া, চাইনিজ কুড়াল, বল্লম ও বাঁশের লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আল্লাম হোসেনের বাড়িতে হামলা চালান। বাড়িটিতে ভাঙচুর করা হয়। অগ্নিসংযোগ করা হয় ধানের পালায়। দুই দিনের হামলায় প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তারা। 

আহত আল্লাম হোসেন জানান, হামলাকারীরা তার পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। ধানের পালার আগুন নেভাতে গেলে হামলাকারীরা তার নাতি জিহাদকে ধাক্কা দিয়ে আগুনের ভেতর ফেলে দেয়। এতে তার পা পুড়ে যায়। তার আরেক নাতি ইয়াকুবকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। তাদের বাঁচাতে গেলে মেয়ে ফাতেমার গলায় হাঁসুয়া দিয়ে আঘাত করা হয়। তাকে শ্লীলতাহানিও করা হয়। ছেলে গোলাম মোস্তফা বাবুকে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তাকে বাঁচাতে গেলে প্রতিবেশী বকুলকেও পিটিয়ে আহত করা হয়।

ভুক্তভোগী আল্লাম আরো জানান, হামলাকারীরা তাদের আহত অবস্থায় ফেলে গেলে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। হামলাকারীরা এখনো তাদের বাড়ি ঘিরে রেখেছেন। জমির দাবি করলে তাদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। তারা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। হাসপাতাল থেকে তাদের ছুটি দেয়া হলে এ ঘটনায় তারা মামলা করবেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত জামিলুর রহমানকে কয়েকদফা ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন জানান, ঘটনা তিনি শুনেছেন। আহতরা থানায় অভিযোগ করতে চেয়েছেন। অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 
 

ঢাকা/কেয়া/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ