হবিগঞ্জে শিশুকে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা
Published: 22nd, April 2025 GMT
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় ১২ বছর বয়সী এক শিশুকে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও বিবস্ত্র করে আপত্তিকর ভিডিও দৃশ্য ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে চুনারুঘাট থানার পুলিশ আজ মঙ্গলবার চারজনের বিরুদ্ধে এই মামলা নথিভুক্ত করেছে। তবে ঘটনার পাঁচ দিনেও অভিযুক্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
এর আগে গতকাল সোমবার দুপুরে হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে চারজনের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ মামলার আবেদন করেন ভুক্তভোগী শিশুর বড় ভাই। আদালতের বিচারক মো.
মামলার এজাহার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভুক্তভোগী শিশু ও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা একই গ্রামের বাসিন্দা। গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে গ্রামের একটি চারা বাগানে ঘাস খেতে যাওয়া ছাগল আনতে যায় শিশুটি। সেখানে তাকে একা পেয়ে ঝাপটে ধরেন একই গ্রামের বাসিন্দা সফিক মিয়া (৫০)। তিনি শিশুটির পূর্বপরিচিত। এরপর একটি ঝোপের আড়ালে নিয়ে তিনি শিশুটিকে ধর্ষণ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। পাশাপাশি শিশুটিকে বিবস্ত্র করে সফিক মিয়া তাঁর পরিচিত অপর তিন তরুণকে ভিডিও কল দিয়ে সেই দৃশ্য দেখান। পরে ওই তিন তরুণ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁরাও ধর্ষণ করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে পরিবারের লোকজন এ নিয়ে গ্রামের মুরব্বিদের কাছে বিচার চান। তখন অভিযুক্ত সফিক মিয়াসহ অন্যরা শিশুটির আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এমনকি ভিডিও নিজেরাই সামাজিক যোগোযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।
ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে ওই দিন রাতে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় তার পরিবার। হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন চৌধুরী আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটি স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরেই বাড়িতে চলে যায়।
মামলার বাদী বলেন, প্রথমে তিনি চুনারুঘাট থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ তাঁদের আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়। পরে তিনি সেই অনুযায়ী আদালতে এ মামলা করেন।
তবে চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নুর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর শিশুটির পরিবার এ বিষয়ে পুলিশকে কিছুই জানায়নি। আদালতে মামলার পর পুলিশ অবগত হয়। আদালতের নির্দেশে চারজনকে অভিযুক্ত করে থানায় একটি এফআইআর করা হয়েছে। ওসি আরও বলেন, ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর দৃশ্যটি খুবই আপত্তিকর। পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মার্চে নির্যাতনের শিকার ৪৪২ নারী
গত মার্চে ৪৪২ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণ করা হয়েছে ১২৫ কন্যাসহ ১৬৩ জনকে। ১৮ কন্যাসহ ৩৬ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। দুই কন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। দুই কন্যা ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছে। এছাড়া ৫৫ কন্যাসহ ৭০ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সাম্প্রতিক নারীর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ তথ্য জানান। এর আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে মোট ১৮৯ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৩০ কন্যাসহ ৪৮ জন। তার মধ্যে তিন কন্যাসহ ১১ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এক কন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
জানুয়ারিতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে মোট ২০৫ নারী ও কন্যাশিশু। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩৩ কন্যাসহ ৪৯ জন। তার মধ্যে ১৪ কন্যাসহ ২০ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এক কন্যাসহ দুইজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া দুইজনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
মডারেটরের বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৫ নম্বর ধারা জেন্ডার সমতা। এটি উপেক্ষা করা কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয়।
সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, নারী আন্দোলনের অন্যতম দাবি অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন, রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ, সংসদে এক-তৃতীয়াংশ আসন ও সরাসরি নির্বাচন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় অ্যাডভোকেসি ও নেটওয়ার্কিং পরিচালক জনা গোস্বামী।
পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মার্চে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৫৪টি। এর আগে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চে ১৩২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানায়, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২৯৯ কন্যাশিশু।