মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সংস্কার হচ্ছে, ভাঙচুর নয়
Published: 22nd, April 2025 GMT
রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সংস্কারের কাজ করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। আর দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এদিকে চলমান সংস্কারকাজের মধ্যে এ স্মৃতিসৌধ ভেঙে ফেলা হচ্ছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়। অনেকে স্মৃতিসৌধের ভিডিও শেয়ার করে বলছেন, সেটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ‘ঢাকাস্থ শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের আধুনিকায়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। সংস্কারের কাজটি করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কুশলী নির্মাতা লিমিটেড। আগামী জুনের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগের মিরপুর অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ আহসান বলেন, স্মৃতিসৌধের কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। শুধু পুরোনো ইট সরিয়ে নতুন ইট বসানো হচ্ছে। মূল বেদির নকশা আগে যা ছিল, তাই আছে। কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।
মঙ্গলবার দুপুরে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সরেজমিন দেখা যায়, কবরস্থানে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধটি টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, স্মৃতিসৌধের বেদির দিকে ঢালু হয়ে নেমে আসা চারটি দেয়ালের মতো যে কাঠামো রয়েছে, সেগুলোর ইটের আস্তর যান্ত্রিক হাতুড়ি (হ্যামার ড্রিল) দিয়ে খোলা হচ্ছে। স্মৃতিসৌধের বেদির চারদিকে থাকা এমন চারটি দেয়ালের মধ্যে তিনটির আস্তর খোলার কাজ চলমান দেখা গেছে। স্মৃতিসৌধের সামনে এনে রাখা হয়েছে কংক্রিটের নতুন ব্লক।
তবে প্রকল্প এলাকায় সংস্কারকাজের কথা উল্লেখ করে কোনো সাইনবোর্ড টাঙানো হয়নি। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের নিয়ম হচ্ছে, প্রকল্প চলাকালে সেখানে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে জানাতে হয়, সেখানে কী হচ্ছে। এ কারণে অনেকে বিভ্রান্ত হচ্ছেন বলে কেউ কেউ মনে করছেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ দেখভালের দায়িত্বে থাকা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বলেছে, স্মৃতিসৌধকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। স্মৃতিসৌধে থাকা পুরোনো ইটের আস্তরণ যান্ত্রিক হাতুড়ি দিয়ে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। এর জায়গায় নতুন ইট বসানো হবে। নির্মাণ করা হবে দোতলা মাল্টিপারপাস ভবন। এ ছাড়া বর্ষার সময় পানি যাতে জমে না থাকে, সে জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য রেস্টহাউস (বিশ্রামাগার) নির্মাণ করা হচ্ছে। টাইলস পরিবর্তন করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, স্মৃতিসৌধে দীর্ঘদিন কোনো সংস্কার করা হয়নি। প্রকল্পটি অনেক আগেই অনুমোদন হয়েছিল। এখন কাজ চলছে। সেখানে নকশার কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। সবকিছু আগের মতোই থাকবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প
এছাড়াও পড়ুন:
দুই বন্ধু ও দুটি স্বপ্নের বিদায়
উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর অ্যাভিনিউতে বিজিএমইএ ভবন। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিবের জানাজায় শোকাবহ পরিবেশ। প্রিয় মানুষকে চিরবিদায় জানাতে এসেছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী, বন্ধু, পরিবারের সদস্য ও পরিচিতজন। শোক ও অশ্রুতে তারা রাকিবকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন। রাকিবের অসমাপ্ত কাজ ও স্বপ্ন এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন সহকর্মীরা।
৯ জুন কানাডায় একটি লেকে ভ্রমণের সময় নৌকাডুবে মারা যান আবদুল্লাহ হিল রাকিব ও তাঁর বন্ধু বাংলাদেশ বিমানের ক্যাপ্টেন মো. সাইফুজ্জামান। কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সাইফুজ্জামান ঈদের ছুটি কাটাতে স্ত্রী ও আরেক মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে বন্ধু ব্যবসায়ী রাকিব ও তাঁর ছেলের সঙ্গে একটি লেকে ঘুরতে গিয়েছিলেন। অন্টারিও প্রদেশের স্টারজিয়ন লেকে ক্যানুতে (সরু লম্বা ছোট্ট নৌকা) চড়ে ভ্রমণে বের হন। নৌকাটি উল্টে গেলে পানিতে ডুবে প্রাণ হারান দু’জন। বিদেশের মাটিতে একসঙ্গে দুই বন্ধুর মৃত্যু, একই ফ্লাইটে ফেরা, দেশে ফিরে একই কবরস্থানে শেষ শয্যা!
অশ্রুসজল চোখে রাকিবের কানাডাপ্রবাসী মেয়ে লামিয়া তাবাসসুম বলেন, ‘বাবা স্বপ্ন দেখতেন, দেখাতেন। তিনি যেসব স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছেন, যেসব কাজ রেখে গেছেন, আমরা যেন সুন্দরভাবে তা বাস্তবায়ন করতে পারি। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে কানাডায় গিয়েছিলেন বাবা।’
রাকিব ও সাইফুজ্জামান ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাদের মরদেহ বিমানের একই ফ্লাইটে শুক্রবার রাতে ঢাকায় আনা হয়। জানাজা শেষে ঢাকায় বিমানবাহিনীর কবরস্থানে দু’জনকে সমাহিত করা হয়। তাদের সহকর্মী ও বন্ধুরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে অকালে দুটি স্বপ্ন বিদায় নিল।
রাকিবের সহকর্মীরা বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানিকে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখতেন রাকিব। তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহায়তা করবেন বলে জানান।
উত্তরায় জানাজার আগে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আবদুল্লাহ হিল রাকিবের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর কাজ করেছি। সব সময়ই দেখেছি, তিনি নিজের পরিবার, বন্ধু, ব্যবসা ও বিজিএমইএকে সমান অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তৈরি পোশাকশিল্প খাতের যে কোনো সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি সামনে চলে যেতেন। রাকিবের দর্শন ছিল– সফলতার মাত্রা নেই। তবে একজন ব্যক্তি কতটা সফল, সেটি তাঁর কর্মযজ্ঞ দেখলে বোঝা যায়।’
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক বলেন, রাকিব উজ্জ্বল প্রদীপ। স্বপ্ন ছিল অনেক। ঝোড়ো হাওয়ায় সেই প্রদীপ নিভে গেছে। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন।
রাকিবের জন্য সবার কাছে দোয়া চান বিজিএমইএর সর্বশেষ নির্বাচনে বিজয়ী রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান। স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন রাকিবের বড় ভাই আবদুল্লাহ হিল নকীব।
ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামানের সহকর্মীরা জানান, শুক্রবার তাঁর মরদেহ কানাডা থেকে ঢাকায় আনার সময় তাঁর সঙ্গে স্ত্রী, দুই মেয়ে, বোন এবং ভগ্নিপতি ছিলেন। মরদেহ পৌঁছার পর উপস্থিত পাইলটরা সহকর্মীর মরদেহে স্যালুট দেন। এর পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে মরদেহ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে রাখা হয়। সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হয় তাঁর বনানীর ডিওএইচএসের বাসায়। বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বাশারের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হয়। সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারীসহ পাইলট, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এতে অংশ নেন। পরে জোহরের নামাজ শেষে ডিওএইচএস মাঠে একসঙ্গে ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামান ও রাকিবের জানাজা হয়। সাইফুজ্জামানকে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। একই কবরস্থানে দাফন করা হয় রাকিবকে। তাঁর বাবা বিমানবাহিনীর সদস্য ছিলেন।