বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ৩১ দফা বাস্তবায়নই হবে বিএনপির ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের প্রতিশোধ। আমরা দেশ ও জনগণকে নিয়ে আলোচনা করেছি। এখন এটি আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। আমার ওপর যে অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে, আমার মায়ের ওপর অত্যাচার হয়েছে, আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমি এসবের প্রতিশোধ নিতে চাই ৩১ দফা বাস্তবায়ন করে। বুধবার সন্ধ্যায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে রংপুর বিভাগের রংপুর, নীলফামারী ও সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলায় ৩১ দফা নিয়ে কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

তারেক রহমান বলেন, বিএনপির উপর জনগণ আস্থা রাখে। তারা মনে করে দেশ ও মানুষের জন্য কিছু করা সম্ভব হলে তা বিএনপিই পারবে। তাই আমি বলছি, জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হবে। কর্মশালায় ৩১ দফার আলোচনা ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মৎসজীবীদলসহ যারা শহীদ জিয়া ও খালেদা জিয়ার আদর্শকে ধারণ করে তাদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। তারা জনগণের কাছে সেই বার্তা নিয়ে যাবে এবং জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করবে। 

তিনি বলেন, আপনারা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। রাজপথে মিছিল, মিটিং, সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু এবার জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে দেশ গঠনের জন্য। আজ থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত প্রতিটি কর্মী এই ৩১ দফার বার্তা চারদিকে ছড়িয়ে দেবে। সবার কথা ৩১ দফার মধ্যে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা টিভির টকশোতে, সরকারি ব্যক্তিদের কাছে, রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে সংস্কার নিয়ে সেসব কথাই শুনি। কিন্তু আজকের আলোচনায় প্রান্তিক মানুষের চাওয়াগুলো উঠে এসেছে। এগুলো নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। 

তারেক রহমান বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশ পরিচালনার সুযোগ পাওয়ার পর তারা কীভাবে দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন,  কৃষি উৎপাদন বাড়ানো যায় সেই কাজগুলোই করেছেন। তারা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলেন, নারীদের আসন সংখ্যা বাড়িয়েছিলেন। আইনী ব্যবস্থাকে স্বাধীন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। মানুষের জীবন সম্পর্কিত সবগুলো কাজকে বিএনপি প্রাধান্য দিয়েছে। আমাদের দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে হবে।  

তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর স্বৈরাচার সরকার ক্ষমতাকে ধরে রাখতে নানা ট্যাগ দিয়ে জাতিকে বিভক্ত করে রাখার চেষ্টা করেছিল। জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে চেষ্টা করতে হবে কম মতপার্থক্য ও জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখা। কারণ জাতি বিভাজিত হলে দেশ এগিয়ে যেতে পারবে না। আমরা ধর্ম বিবেচনায় নয়, বাংলাদেশি হিসেবে বিবেচনা করবো এবং সকল ধর্মের মানুষের সম্প্রীতির দেশ গড়ে তুলবো। 

কর্মসংস্থান নিয়ে তিনি বলেন, দেশের প্রায় ৩ কোটি নারী-পুরুষ বেকার রয়েছে। এত মানুষকে বেকার রেখে দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভাব হবে না। তাই কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র বাড়াতে হবে। সেটি সরকারি বা বেসরকারিভাবে হতে পারে। বিশেষ কোনো প্রকল্পে কর্মসংস্থান তৈরি ও উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে হতে পারে। 

তারেক রহমান বলেন, সমাজের অনেক গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি রয়েছেন যারা দেশের জন্য কাজ করতে চান। কিন্তু তারা নিয়মিত রাজনীতিতে নেই। এমন শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে সমাজের উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ দেবে বিএনপি। 

তিস্তা বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, উত্তরের তিন কোটি মানুষ তিস্তার সঙ্গে জড়িত। বিগত সময়ে এটিকে নিয়ে রাজনীতি হয়েছে। যার ফলে মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের পরিবর্তন হয়নি। এবার আমরা তিস্তাপারের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে রাজনীতি করতে চাই না। দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে যেভাবে উন্নয়ন ও পরিকল্পনা গ্রহণ করলে মানুষের উপকার হবে, সেটাই করা হবে। পরে তিনি বিএনপির ৩১ দফা নিয়ে নেতাকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামুর সভাপতিত্বে কর্মশালায় উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু। এতে প্রশিক্ষণ দেন বিএনপি মিডিয়া সেলের প্রধান অধ্যাপক ডা.

মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন। কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান খোকন ও নাটোর জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল, জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্যসচিব আনিছুর রহমান লাকু, মহানগর সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ উন নবী ডন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ত র ক রহম ন ব এনপ র ক জ কর র জন ত সরক র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে জনগণের হিস্যা কোথায়

নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হতেই কিছু পরিচিত দৃশ্য আবার চোখে পড়ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর নিজ নিজ অবস্থানকে একমাত্র ন্যায়সংগত দাবি হিসেবে তুলে ধরা, ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থতা এবং একে অপরের কাছ থেকে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা। রাজনৈতিক অচলাবস্থা বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু নয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিকে শুধুই অচলাবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। এটি বরং রাজনৈতিক চিন্তার দেউলিয়াত্বের প্রকাশ এবং রাজনীতি জনগণের চাহিদা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার একটি সংকেত। এর কেন্দ্রে রয়েছে একটি প্রশ্ন, যা আমরা এখনো করিনি: রাজনৈতিক দলগুলোর কাজ আসলে কী?

২.

বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের জাতীয়তাবাদের অভিভাবক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে—কখনো ‘বাংলাদেশি’ বনাম ‘বাঙালি’, কখনো ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বনাম ‘ইসলামপন্থা’ পরিচয়ের মাধ্যমে। কিন্তু এই শব্দগুলো বাস্তবে অন্তর্ভুক্তির পরিবর্তে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে; একদিকে জাতিসত্তার বৈচিত্র্যকে একরৈখিক করে তুলেছে, অন্যদিকে সংখ্যালঘু এবং নারীদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।

এই জাতিগত ও আদর্শগত পরিচয়ের সংকোচনের সঙ্গে সঙ্গে সংকুচিত হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও। রাজনৈতিক দলগুলো জনসেবার বাহন না হয়ে পরিণত হয়েছে আত্মরক্ষামূলক ক্ষমতার বাহনে। পুরোনো দলগুলো যেমন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, গরিবের পক্ষে কথা বলার দাবি করা বিভিন্ন বামপন্থী দল, এমনকি নাগরিকদের সক্রিয়তা নিয়ে কথা বলা নতুন দল এনসিপিও একই ছকে চলছে; প্রকাশ্যে জনগণের নামে বৈধতা চাওয়া আর ভেতরে ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থে দল চালানো।

বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দল আনুগত্যের বিনিময়ে সুযোগের এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে। দলগুলো রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো দখল করে, পৃষ্ঠপোষকতা বিতরণ করে এবং অনুগত একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখে। স্থানীয় সরকার, যেখানে গণতন্ত্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সংযোগ থাকার কথা, তা পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করে ফেলা হয়েছে। আমাদের গণতন্ত্রের স্বল্প ইতিহাস বলে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা প্রায়ই জনগণের পক্ষে কথা বলা প্রতিনিধি নন, বরং তারা মধ্যস্থতাকারী মাত্র। এই ব্যবস্থায় নেতৃত্ব নয়, আনুগত্যই পুরস্কৃত হয়।

৩.

প্রায় সব রাজনৈতিক দলই অভ্যন্তরীণ দলীয় কার্যক্রমের দিক থেকে গণতান্ত্রিক নয়। নেতৃত্ব প্রায়ই বংশগত বা দীর্ঘদিন ধরে একচেটিয়াভাবে ধরে রাখা হয়। দলের মধ্যে ভিন্নমত দিলে শাস্তি হয়। কর্মীরা মিছিল-মিটিং বা গ্রেপ্তারে সামনে থাকলেও, নীতিনির্ধারণে তাঁদের কোনো অংশ থাকে না। দলের ভেতরে গণতন্ত্রের এই অভাব বৃহত্তর রাজনৈতিক সংস্কৃতিরই প্রতিফলন। দলগুলো এখন প্রায় শূন্য খোলসে পরিণত হয়েছে।

সংসদেও এর প্রতিফলন স্পষ্ট। অনেক সংসদ সদস্যই তাঁদের নির্বাচিত এলাকার বাসিন্দা নন। তাঁরা সেসব এলাকায় বড় হননি, সেখানকার মানুষের সঙ্গে বসবাসও করেন না—সম্পর্ক থাকে কেবল প্রতীকী; বরং প্রাক্তন মন্ত্রী, নেতা কিংবা দলের উচ্চপদস্থ সদস্যদের সন্তান-স্বজনদেরই একপ্রকার উত্তরাধিকারসূত্রে সেখানে পাঠানো হয়। স্থানীয় নেতাদের ক্ষেত্রেও প্রায়ই একই পদ্ধতি অনুসৃত হয়। রাজনীতির প্রতিটি স্তরে—থানা ইউনিট থেকে জাতীয় মনোনয়ন পর্যন্ত—ক্ষমতার প্রবেশাধিকার নির্ধারিত হয় বংশানুক্রম, আনুগত্য এবং আঞ্চলিকতার এক অঘোষিত নিয়মে; যেখানে কোনো নির্দিষ্ট এলাকা একটি নির্দিষ্ট পরিবার বা গোষ্ঠীর সম্পত্তির মতো গণ্য হয়।

নির্বাচনী প্রচারণা ব্যয়বহুল এবং মনোনয়ন একটি লেনদেনভিত্তিক প্রক্রিয়া—সম্পদ, সম্পর্ক এবং আনুগত্যই এখানে মুখ্য। নির্বাচন মানে পোস্টার, মাইকিং আর আগেভাগে অর্থ ব্যয় করে মিছিল-মিটিংয়ের মৌসুম। সাধারণ নাগরিকের জন্য রাজনীতিতে প্রবেশ প্রায় অসম্ভব—যতক্ষণ না তিনি একই স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও সুবিধাবাদের সংস্কৃতি গ্রহণ করেন। এমনকি যাঁরা সাম্প্রতিক সময়ে বিপ্লবী ভাষায় কথা বলছিলেন, তাঁরাও দ্রুত এই একই ছকে ঢুকে পড়েছেন।

রাজনৈতিক দলগুলো যখন তাদের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়, তখন অন্যরা সেই শূন্যতা পূরণ করতে এগিয়ে আসে। সুশীল সমাজ নিজেদের গণতন্ত্রের প্রধান রক্ষক মনে করতে শুরু করে। আমলারা ও বিচারপতিরা নিজেদের সাংবিধানিক সীমার বাইরে গিয়ে হস্তক্ষেপ করেন। সেনাবাহিনী নিজেদের একটি স্থিতিশীল শক্তি হিসেবে তুলে ধরে। কিন্তু এটি গণতন্ত্রের সুস্থ বিকাশ নয়, বরং এটি রাজনৈতিক বিকৃতি ও শাসনক্ষমতার দায়িত্বহীন পুনর্দখল।

৪.

এমন পরিস্থিতিতে মানুষের প্রকৃত চাহিদাগুলো উপেক্ষিতই থেকে যায়। ত্রাণ বিতরণ হয় দলের পতাকা লাগিয়ে, ছবি তোলা হয় এবং বিনিময়ে ভোট চাওয়া হয়। কিন্তু দেশের অধিকাংশ ভোটার, যাঁদের বেশির ভাগই গ্রামীণ ও দরিদ্র, তাঁদের দয়া নয়, অধিকার প্রয়োজন। তাঁরা একটি বৈষম্যমূলক ও বিকৃত ব্যবস্থার শিকার—যেখানে সুবিধা, সম্পদ ও সুযোগ বণ্টিত হয় ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছেমতো। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলই এমন কোনো কাঠামোগত সংস্কারের কথা বলে না, যা এই বৈষম্যকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। কারণ, এমন সংস্কার বাস্তবায়ন করলে যে ব্যবস্থা থেকে তাঁরা লাভবান হচ্ছেন, সেটাই বদলে দিতে হবে।

কেউ ভূমি সংস্কার, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ কিংবা পুলিশের নিয়োগপদ্ধতি নিয়ে কথা বলতে চায় না। যেখানে সংস্কার থেমে যায়, সেখানে ক্ষমতা শুরু হয়। কাঠামোগত সংস্কার কোনো নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বা কৌশল নয়। স্পষ্ট করে বললে, এ ধরনের পরিবর্তন নির্বাচনের আগে সমীচীন নয় আর এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে এর বাস্তবায়নও সম্ভব নয়। এমন সংস্কার সফল হতে হলে একটি এমন সরকার প্রয়োজন, যারা সংবিধানকে শুধু ভাষণে নয়, বরং বাজেট, প্রাতিষ্ঠানিক নকশা এবং নীতিনির্ধারণে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে।

বর্তমান রাজনৈতিক সংঘাত আদর্শগত মতপার্থক্য নয়—এটি রাষ্ট্রযন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে লড়াই। অতীতে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আদালত প্রভাবশালীদের রক্ষা করতে এবং ভিন্নমত দমন করতে ব্যবহৃত হয়েছে। এমনকি নাগরিক সমাজের আন্দোলনগুলোকেও চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে বা অভিজাত গোষ্ঠীর স্বার্থের সঙ্গে একীভূত করে ফেলা হয়েছে। জনতার আন্দোলন প্রচার পায়; কিন্তু পরে তা দমন করা হয় অথবা নিস্তেজ হয়ে যায়। এনজিওগুলোর গোলটেবিল বৈঠকগুলোতে আশার কথা শোনা যায়, কিন্তু সেখান থেকে ক্ষমতার ভারসাম্য বদলায় না।

৫.

এ রকম প্রেক্ষাপটে অনেকেই শুদু সংবিধানকেই দোষারোপ করছে, যেন এর দায় শুধু কাগজের শব্দগুলোর, যারা বছরের পর বছর সংবিধান উপেক্ষা করেছে, তাদের নয়। বাংলাদেশের সংবিধান ছিল একটি প্রতিশ্রুতি—কেবল সার্বভৌমত্বের নয়, বরং ন্যায়বিচারের। এই সংবিধান রাষ্ট্রকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সমতা, বৈষম্যহীনতা, মর্যাদা, ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের। এটি এমন এক অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতিসত্তার ছবি এঁকেছিল, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়, বরং প্রতিটি জনগোষ্ঠীর মর্যাদা স্বীকৃত।

সংবিধানের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের পরিণতি বাস্তব এবং গভীর। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা, পুলিশি নির্যাতন এবং প্রাতিষ্ঠানিক দায়মুক্তি—এসব কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এগুলো একটি কাঠামোগত চিত্রের অংশ, যা বারবার পুনরাবৃত্ত হয়েছে। এই চক্রে কোনো একক দল বা সরকার সম্পূর্ণভাবে দায়ী নয়। ঠিক এই কারণেই প্রয়োজন একটি সামগ্রিক জবাবদিহি, কেবল একটি সরকারের বিরুদ্ধে নয়, বরং গোটা রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি।

যদি রাজনৈতিক দলগুলোর জবাবদিহি না থাকে, আর যদি নির্বাচন কেবল ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায়, তবে এটি শুধু শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতা নয়—এটি একটি প্রজন্মের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। ১৯৯১ সালের পর যারা বড় হয়েছে, তাদেরকে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা পেয়েছে ক্ষমতাবানদের মধ্যে বোঝাপড়া, যেখানে জনতার কণ্ঠ নেই; বিপ্লবের বুলি আছে, কিন্তু বাস্তবে কোনো পরিবর্তন নেই।

এর ফলে আবারও সেই প্রশ্ন ফিরে আসে—রাজনৈতিক দলগুলোর কাজ আসলে কী? তারা কার কাছে জবাবদিহি করবে? তাদের কাজ কি শাসন, দখল নাকি জনগণের সেবা? যদি রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের সেবা না করে, তাহলে সেটা করবে কে?

ড. সিনথিয়া ফরিদ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, শিক্ষক ও গবেষক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরানের শাসকদের ক্ষমতাচ্যুত করার আহ্বান সাবেক শাহের পুত্রের
  • আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন ইশরাক হোসেন
  • আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিলেন ইশরাক হোসেন
  • আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা ইশরাকের
  • রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে জনগণের হিস্যা কোথায়
  • বাজেটের ত্রুটি সংশোধনের আহ্বান
  • ড. ইউনূসকে দেশের কাজে যুক্ত রাখতে চায় বিএনপি
  • জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন ইরানের প্রেসিডেন্ট
  • সহসাই রাজনীতির কালো মেঘ কেটে যাবে: ডা. জাহিদ  
  • ‘সংস্কার ছাড়া নির্বাচন মানবে না জনগণ’