হাদিসে আছে, মহানবী (সা.) ‘কার’-বিশিষ্ট ভূমিতে প্রবেশ করতে নিষেধ করছেন। কারণ সেটা জিনদের আবাসস্থল। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘কার’ কি? তিনি বলেন, ঘন ঝাড়-জঙ্গল, গাছপালা ঘেরা নিম্নাঞ্চল। এ ছাড়া জনবসতির শৌচাগার, গোসলখানা, নোংরা ও অপবিত্র স্থান, আবর্জনার স্তূপ এবং কবরস্থানে দুষ্ট জিন-শয়তান বিচরণ করে। তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয় শৌচাগারে দুষ্ট জিন-শয়তান উপস্থিত থাকে। তাই তোমরা যখন সেখানে প্রবেশ করবে তখন বলবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিলান খুবুসি ওয়াল খবাইস।’ অর্থাৎ, আমি আল্লাহর কাছে যাবতীয় দুষ্ট পুরুষ ও নারী জিন ও শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৬)
হাদিস অনুযায়ী শৌচাগার হলো, যেখানে নাপাক থাকে বা শরীর বস্ত্রহীন করতে হয়, সেসব জায়গায় শয়তানের আনাগোনা থাকে। মানুষকে বিবস্ত্র করা শয়তানের অন্যতম একটি কাজ। কারণ আল্লাহর এবং বান্দার মধ্য আবরণ হলো লজ্জা। আদম ও হাওয়া (আ.
নবীজি (সা.) মাটির গর্তে প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছেন। এতে জিনদের বসবাসের স্থান।’ (আবুদাউদ, হাদিস: ২৯)
কবরস্থানে জিনেরা সাধারণত মানুষের মতোই যাতায়াত করে। আবার কখনো অবস্থান করে দীর্ঘদিন। ভালো-মন্দ সব ধরনের—এমনকি সেখানে দুষ্ট প্রকৃতির জিন-শয়তানরাও অবস্থান করে।
একটা ভুল ধারণা লোকসমাজে প্রসিদ্ধ আছে, ‘বদকারদের কবরের আজাবের ভয়ে জিনেরা কবরস্থানে থাকে না।’ অথচ নবীজি বলেছেন, ‘অতঃপর তার জন্য লোহার বিশাল হাতুড়িধারী একজন অন্ধ ও বধির ফেরেশতা নিযুক্ত করা হয়। সেই ফেরেশতা ওই হাতুড়ি দিয়ে অবিশ্বাসীকে এমন জোরে আঘাত করে; যার আওয়াজ মানুষ ও জিন ছাড়া পূর্ব-পশ্চিমের সব সৃষ্টি শুনতে পায়।’ (আবু দাউদ, ৪,৭৫৩)
এ ছাড়া বাজার ও দোকানপাটে দুষ্ট জিন-শয়তানের আনাগোনা বেশি থাকে। আল্লাহর রাসুল (সা.) জানিয়েছেন, ‘বাজারে শয়তান তার যুদ্ধের পতাকা উত্তোলন করে।’ (মুসলিম, হাদিস: ২,৪৫১)
আরও পড়ুনএকদল জিন পবিত্র কোরআন শুনে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন২০ নভেম্বর ২০২৩উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দুই বন্ধু ও দুটি স্বপ্নের বিদায়
উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর অ্যাভিনিউতে বিজিএমইএ ভবন। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিবের জানাজায় শোকাবহ পরিবেশ। প্রিয় মানুষকে চিরবিদায় জানাতে এসেছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী, বন্ধু, পরিবারের সদস্য ও পরিচিতজন। শোক ও অশ্রুতে তারা রাকিবকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন। রাকিবের অসমাপ্ত কাজ ও স্বপ্ন এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন সহকর্মীরা।
৯ জুন কানাডায় একটি লেকে ভ্রমণের সময় নৌকাডুবে মারা যান আবদুল্লাহ হিল রাকিব ও তাঁর বন্ধু বাংলাদেশ বিমানের ক্যাপ্টেন মো. সাইফুজ্জামান। কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সাইফুজ্জামান ঈদের ছুটি কাটাতে স্ত্রী ও আরেক মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে বন্ধু ব্যবসায়ী রাকিব ও তাঁর ছেলের সঙ্গে একটি লেকে ঘুরতে গিয়েছিলেন। অন্টারিও প্রদেশের স্টারজিয়ন লেকে ক্যানুতে (সরু লম্বা ছোট্ট নৌকা) চড়ে ভ্রমণে বের হন। নৌকাটি উল্টে গেলে পানিতে ডুবে প্রাণ হারান দু’জন। বিদেশের মাটিতে একসঙ্গে দুই বন্ধুর মৃত্যু, একই ফ্লাইটে ফেরা, দেশে ফিরে একই কবরস্থানে শেষ শয্যা!
অশ্রুসজল চোখে রাকিবের কানাডাপ্রবাসী মেয়ে লামিয়া তাবাসসুম বলেন, ‘বাবা স্বপ্ন দেখতেন, দেখাতেন। তিনি যেসব স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছেন, যেসব কাজ রেখে গেছেন, আমরা যেন সুন্দরভাবে তা বাস্তবায়ন করতে পারি। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে কানাডায় গিয়েছিলেন বাবা।’
রাকিব ও সাইফুজ্জামান ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাদের মরদেহ বিমানের একই ফ্লাইটে শুক্রবার রাতে ঢাকায় আনা হয়। জানাজা শেষে ঢাকায় বিমানবাহিনীর কবরস্থানে দু’জনকে সমাহিত করা হয়। তাদের সহকর্মী ও বন্ধুরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে অকালে দুটি স্বপ্ন বিদায় নিল।
রাকিবের সহকর্মীরা বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানিকে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখতেন রাকিব। তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহায়তা করবেন বলে জানান।
উত্তরায় জানাজার আগে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আবদুল্লাহ হিল রাকিবের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর কাজ করেছি। সব সময়ই দেখেছি, তিনি নিজের পরিবার, বন্ধু, ব্যবসা ও বিজিএমইএকে সমান অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তৈরি পোশাকশিল্প খাতের যে কোনো সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি সামনে চলে যেতেন। রাকিবের দর্শন ছিল– সফলতার মাত্রা নেই। তবে একজন ব্যক্তি কতটা সফল, সেটি তাঁর কর্মযজ্ঞ দেখলে বোঝা যায়।’
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক বলেন, রাকিব উজ্জ্বল প্রদীপ। স্বপ্ন ছিল অনেক। ঝোড়ো হাওয়ায় সেই প্রদীপ নিভে গেছে। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন।
রাকিবের জন্য সবার কাছে দোয়া চান বিজিএমইএর সর্বশেষ নির্বাচনে বিজয়ী রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান। স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন রাকিবের বড় ভাই আবদুল্লাহ হিল নকীব।
ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামানের সহকর্মীরা জানান, শুক্রবার তাঁর মরদেহ কানাডা থেকে ঢাকায় আনার সময় তাঁর সঙ্গে স্ত্রী, দুই মেয়ে, বোন এবং ভগ্নিপতি ছিলেন। মরদেহ পৌঁছার পর উপস্থিত পাইলটরা সহকর্মীর মরদেহে স্যালুট দেন। এর পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে মরদেহ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে রাখা হয়। সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হয় তাঁর বনানীর ডিওএইচএসের বাসায়। বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বাশারের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হয়। সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারীসহ পাইলট, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এতে অংশ নেন। পরে জোহরের নামাজ শেষে ডিওএইচএস মাঠে একসঙ্গে ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামান ও রাকিবের জানাজা হয়। সাইফুজ্জামানকে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। একই কবরস্থানে দাফন করা হয় রাকিবকে। তাঁর বাবা বিমানবাহিনীর সদস্য ছিলেন।