বাংলাদেশি নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য খেলাধুলার সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে কাতার ফাউন্ডেশনের প্রতিশ্রুতি ভীষণরকম আশাবাদী ও উচ্ছ্বসিত করেছে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কাতারে সফররত চার নারী ক্রীড়াবিদ।

মঙ্গলবার দোহায় আর্থনা সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে বাংলাদেশের নারী খেলোয়াড়দের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেন কাতার ফাউন্ডেশনের সিইও শেখ হিন্দ বিনতে হামাদ আল থানি।

বাংলাদেশের চারজন জাতীয় নারী ক্রীড়াবিদ— জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক আফিদা খন্দকার, ফুটবলার শাহিদা আক্তার রিপা, ক্রিকেটার সুমাইয়া আকতার ও শারমিন সুলতানা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে নারী ক্রীড়াবিদরা নিজেদের অভিজ্ঞতা, বাংলাদেশে নারী খেলোয়াড়দের স্বপ্ন ও চ্যালেঞ্জগুলো সিইও হিন্দ-এর কাছে তুলে ধরেন। কাতারের সাবেক শীর্ষস্থানীয় ক্রীড়াবিদ হিন্দ তাদের গল্পে আবেগাপ্লুত হন এবং দৃঢ়চেতা মনোভাবের প্রশংসা করেন।
 
বৈঠকে হিন্দ জানান, বাংলাদেশে নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য একটি বিশেষ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে কাতার ফাউন্ডেশন।
 
কাতারের আমিরের বোন ও কাতার ফাউন্ডেশনের সিইও শেখ হিন্দ-এর এই প্রতিশ্রুতিতে অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত ও আশাবাদী নারী ক্রীড়াবিদরা। 

এ ধরনের উদ্যোগ বাংলাদেশের নারী খেলোয়াড় ও খেলার উন্নয়নে অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে তারা মনে করছেন। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকার জন্যও কৃতজ্ঞতা জানান নারী খেলোয়াড়রা।
 
সিইও হিন্দ-এর সঙ্গে বৈঠকের পর নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করে এসব জানান নারী ক্রীড়াবিদরা। 
এ সময় কাতার সফরের অভিজ্ঞতাও জানিয়েছেন তারা।

জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক আফিদা খন্দকার বলেন, ‘কাতার সফরের জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর যখন প্রথম আমরা সরকার প্রধানের সঙ্গে দেখা করতে যাই তখন প্রধান উপদেষ্টা স্যার কাতার সফরে আমাদের কি করণীয় সেটি খুব ভালো ভাবে বুঝিয়ে বলেছেন। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে কাতারের কাছে তুলে ধরা। আমরা সেটাই চেষ্টা করেছি।’

দেশে খেলোয়াড়দের ফ্যাসিলিটিজ কেমন এবং থাকা-খাওয়াসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাসহ সবকিছু খেলোয়াড়রা সিইও হিন্দকে বলেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এসবের দিকে দৃষ্টি দিতে অনুরোধ করেছি। হিন্দ খুবই মনোযোগী ছিলেন। তিনি আমাদের কথা রাখার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন। আমি আশাবাদী, আমরা এখান থেকে ভালো কিছু নিয়ে যেতে পারব।’

ফুটবলার শাহিদা আক্তার রিপা বলেন, ‘যেদিন ফেডারেশন থেকে বলা হয়েছে যে আমরা প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিদেশ সফরে যাচ্ছি, সেদিন আমরা সবাই খুব খুশি হয়েছিলাম। কারণ, তিনিই প্রথম যিনি ক্রীড়াঙ্গনকে নিয়ে চিন্তা করেছেন। মহিলা ক্রীড়াবিদদের নিয়ে ভেবেছেন, আমাদের জন্য কাজ করার চেষ্টা করছেন।’

তিনি বলেন, আমরা যখন হিন্দ-এর সাথে কথা বলছিলাম, তিনি খুব আবেগী হয়ে গিয়েছিলেন। আমরা আমাদের জিম ফ্যাসিলিটিজ নিয়ে কথা বলেছিলাম। তিনি আমাদের কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনেছিলেন। খেলা পরবর্তী অবসর জীবনে আমরা কী করতে পারি, সেসব নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। আমরা স্পেয়ার একাডেমিসহ কাতারের বেশ কয়েকটা স্পোর্টস ফ্যাসিলিটি ঘুরে দেখেছি। বাংলাদেশের থেকে অনেক ভালো ফ্যাসিলিটিজ এখানে আছে। বাংলাদেশে একাডেমি ও স্টেডিয়ামগুলোর সুযোগ সুবিধা কীভাবে আরও উন্নত করা যায় সে বিষয়ে কথা বলেছি। 

ক্রিকেটার সুমাইয়া আকতার বলেন, প্রথম যখন শুনেছি যে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমরা সফর সঙ্গী হচ্ছি তখন বিশ্বাস হয়নি। সেসময় আমরা বিকেএসপিতে ক্যাম্প করছিলাম। তখন আমাদের ডাকা হয়। যখন দেখেছি যে প্রধান উপদেষ্টা নারী ক্রীড়াবিদদের নিয়ে এত আগ্রহী তখন খুব ভালো লেগেছে। সরকার প্রধানের সঙ্গে এই প্রথম কোনো ট্যুরে এসেছি আমরা।

তিনি বলেন, কাতারে ফুটবল বেশি জনপ্রিয়, এখানে ক্রিকেটের বিষয়ে মানুষের আগ্রহ কম। এখানে এসে আমরা ক্রিকেট খেলায় কাতারের ইনভলভমেন্ট কীভাবে আরও বাড়ানো যায় সে বিষয়ে কাতার ফাউন্ডেশনের সিইও হিন্দকে বলেছি।
 
কাতার ফাউন্ডেশনের সিইও নিজেও ক্রীড়াবিদ ছিলেন জানিয়ে সুমাইয়া বলেন, হিন্দকে আমরা ক্রিকেট খেলা দেখার জন্য বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তিনি বাংলাদেশে যেতে খুবই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি আমাদের এতটা ইম্পর্টেন্স দিবেন, ভাবিনি।

ক্রিকেটার শারমিন সুলতানা বলেন, কাতার ফাউন্ডেশনের সিইও শেখ হিন্দ-এর সাথে আমরা দেখা করতে পেরে খুবই আনন্দিত। খেলাধুলার বিষয় নিয়ে তার সাথে আমাদের অনেকক্ষণ কথা হয়েছে। পুরোটা সময় তিনি অত্যন্ত মনোযোগী এবং আবেগী ছিলেন।

শারমিন বলেন, আমাদের সুবিধা অসুবিধার বিষয়ে জানতে চেয়েছেন হিন্দ। আমরা ওনার কাছে মেডিকেল সাপোর্ট চেয়েছি। কাতারে ইনজুরি রিহ্যাব আছে। এখানে সাপোর্টের বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। 

বাংলাদেশের মহিলা ক্রীড়াবিদদের উন্নয়নের জন্য প্র্যাক্টিস ফ্যাসিলিটিজ বাড়ানো দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরা এখনো ছেলেদের মাঠে খেলি। আমাদের নিজস্ব মাঠ দরকার যেখানে নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকবে। বাংলাদেশে নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক স্পন্সর সুবিধা এখনও অপ্রতুল। মেয়েদের খেলায় আগ্রহী করে তুলতে, তারা যেন খেলাধুলাকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিতে নিতে পারে, সে জন্য স্পন্সরশীপ সুবিধা আরও বাড়ানো দরকার। দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলো এগিয়ে আসলে আমার মনে হয় ক্রীড়াক্ষেত্রে নারীদের অগ্রযাত্রা আরও ত্বরান্বিত হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক র ড় ব দর দ র জন য হ ন দ এর আম দ র প রথম ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হলেন অধ্যাপক হযরত আলী

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্যের দায়িত্ব পেয়েছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলী। 

বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে তাকে এই পদে নিযুক্ত করা হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এ এস এম  কাসেম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুসারে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণকালীন উপাচার্য নিয়োগের আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য ড. মো. হযরত আলীকে কুয়েটের উপাচার্য পদের রুটিন দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ দেওয়া হলো।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তিনি তার বর্তমান পদের সমপরিমাণ বেতনভাতা প্রাপ্য হবেন। তিনি বিধি অনুযায়ী পদ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সুবিধা ভোগ করবেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সার্বক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন। রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর প্রয়োজন মনে করলে যে কোনো সময় এ নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন।

এর আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ২৫ এপ্রিল কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ শরীফুল আলমকে অব্যাহতি দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ