রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রশিবিরের সাবেক সেক্রেটারি শরিফুজ্জামান নোমানী হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে রবি (৪০) গুলি ও ধারালো অস্ত্রের কোপে গুরুতর আহত হয়েছেন। বুধবার (২৪ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে নগরের পঞ্চবটী এলাকার খড়বোনার গাড়োয়ানপাড়ায় এ হামলা করা হয়। পরে ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রবি বাড়ির পাশে একটি মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ কয়েকটি মোটরসাইকেলে করে কয়েকজন এসে তাকে ঘিরে ফেলে। তখনই গুলির শব্দ শোনা যায়। এরপর এক ব্যক্তি ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কোপাতে থাকেন। দৌড়াতে গিয়ে রবি হোঁচট খেয়ে পড়ে যান। তখন ফের ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কোপানো হয়। একপর্যায়ে একজন হামলাকারী কাছ থেকে তার পায়ে গুলি করেন। হামলার সময় কাতরাতে কাতরাতে রবি বলছিলেন, ‘‘ও বাপ, ও মা, আমি কী করেছি?’’ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুই নারী এগিয়ে আসার চেষ্টা করলেও গুলির শব্দ শুনে সরে যান। আশপাশ থেকে নারীদের চিৎকার শোনা যাচ্ছিল।

আহত রবিকে স্থানীয়রা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। পরে তাকে ভর্তি করা হয় ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে। রাতেই অস্ত্রোপচার শুরু হলেও অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় দ্রুত তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।

আরো পড়ুন:

শিবিরনেতা নোমানী হত্যা মামলার আসামিকে গুলি করে ও কুপিয়ে জখম

ফেনীতে বিএনপি কর্মীকে হত্যায় গ্রেপ্তার ৫ 

রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ডা.

শংকর কে বিশ্বাস জানান, রবির এক পায়ে গুলি লেগেছে। তার অন্য পা ও দুই হাতে ধারালো অস্ত্রের কোপ রয়েছে। অস্ত্রোপচার শুরু হলেও পরিবারের ইচ্ছায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।

আহত রবির বাড়ি নগরের বিনোদপুর-মীর্জাপুর এলাকায়। তার বাবার নাম আজিজুল ইসলাম। রবি আওয়ামী লীগের কর্মী। তার ভাই শহিদুল ইসলাম শহিদ নগরের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনিও নোমানী হত্যা মামলার আসামি।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন জানান, রবির বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে শিবির নেতা নোমানী হত্যা মামলার আসামি হিসেবে তার নাম রয়েছে। হামলার ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত জড়িতদের শনাক্ত বা আটক করা যায়নি।

তিনি আরো জানান, হামলার ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। তারা ফিরে এসে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন।

২০০৯ সালের ১৩ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও পার্শ্ববর্তী বিনোদপুর বাজারে ছাত্রশিবির, ছাত্রলীগ ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হন ছাত্রশিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তৎকালীন সেক্রেটারি শরিফুজ্জামান নোমানী। এই মামলার অন্যতম আসামি রবি গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

রবির ভাই শহিদুল ইসলাম ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জে জনতার হাতে আটক হন এবং পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। ২০১৩ সালের ১৬ মার্চ নিজ বাড়িতে হামলার শিকার হন শহিদুল ইসলাম। সেদিন কয়েকজন যুবক তার দুই পায়ের রগ কেটে দেন। হামলায় আহত হন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য ও মির্জাপুর নাজমুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাইনুল হোসেন এবং যুবলীগ নেতা রুহুল আমিন।

ঢাকা/কেয়া/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ