রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় চাঁদার টাকা না পেয়ে একটি ব্যক্তিগত পাঠাগার নির্মাণে বাধা ও এর নির্মাণসামগ্রী ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন একটি মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তিনি জানান, এ বিষয়ে সম্প্রতি আদালতে একটি মামলা করেছেন।

অভিযোগকারী ওই ব্যক্তির নাম জিল্লুর রহমান। তিনি উপজেলার ভবানীগঞ্জ ফাজিল মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও বাসুপাড়া ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা।

লিখিত বক্তব্যে জিল্লুর রহমানের স্ত্রী শামীমার রহমান বলেন, তাঁদের পৈতৃক জমিতে জনকল্যাণমূলক কাজের উদ্যোগ হিসেবে ২৫ মার্চ একটি পাঠাগার নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল, এলাকাবাসীর জন্য একটি জ্ঞানচর্চার স্থান তৈরি এবং মুঠোফোন, মাদক ও বখাটেপনায় আসক্ত তরুণদের বইমুখী করা। তবে স্থানীয় কয়েকজন পরিকল্পিতভাবে এই উদ্যোগে বাধা দেন এবং পাঠাগারের নির্মাণসামগ্রী ভাঙচুর করেন। ওই দিন সকালে গোপালপুর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবুল হোসেনের নির্দেশে একদল দুর্বৃত্ত ওই জমিতে জোর করে প্রবেশ করে পাঠাগারের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। এর আগে প্রধান আসামি ছাড়া অন্য তিন আসামি ও স্থানীয় বাসিন্দা নাইমুল ইসলাম, জেকের আলী, মাজেদুর রহমান মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁরা এই কাজ করেন।

জিল্লুর রহমান বলেন, তিনি শিক্ষক হওয়ায় স্বপ্ন দেখছিলেন, গ্রামে পাঠাগার স্থাপন করে বিভিন্ন বই রেখে লোকজনদের পড়াবেন। তাই স্থানীয় গোপালপুর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার পাশে নিজের জমিতেই গ্রন্থাগার স্থাপনের উদ্যোগ নেন।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২১ এপ্রিল রাজশাহীর জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলার আবেদন করা হয়। আদালত আবেদনটি গ্রহণ করে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলামকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় আসামি হিসেবে সাতজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। পরিবারটির দাবি, আদালতে মামলার পরও আসামিরা প্রকাশ্যে পরিবারের সদস্যদের হত্যা, বাড়িঘর পোড়ানোর হুমকিসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছেন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মামলার প্রধান আসামি আবুল হোসেন। তিনি বলেন, জিল্লুর রহমান গোপালপুর মাদ্রাসার জমিতেই গ্রন্থাগার স্থাপনের উদ্যোগ নিলে স্থানীয় লোকজন তাঁকে বাধা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ল ল র রহম ন ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা

বাংলাদেশে পুলিশে পেশাদারি মনোভাব গড়ে না ওঠার জন্য এই বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহারকে দায়ী করছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মুহাম্মদ নুরুল হুদা। তিনি বলেছেন, বিভাজিত সমাজে ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’—এমন নানা তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।

আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। যৌথভাবে এ বৈঠক আয়োজন করে প্রথম আলো ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি। বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। একটি প্রবন্ধ তুলে ধরেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (অবসরপ্রাপ্ত) ও বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি ইয়াসমিন গফুর।

নিজের পেশাজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বলেন, ‘আমি দুই সরকারপ্রধানের (সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গেই কাজ করেছি। অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়ে একটা ভদ্রতা, সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে হয়। দেখা করলে অনেক কথার পরও বা অল্প কথার পরও ‘এ কি আমাদের?’—এমন কথা শুনলে প্রথমেই বিব্রত বোধ করতে হয়।’

সরকারের পরিবর্তনে পুলিশে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে প্রভাবিত হওয়ার উদাহরণ দিয়ে মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘বাড়ি ফরিদপুর যদি হয় বা ফরিদপুরের আশপাশে হয়, কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট হবে না। আবার আরেক সময় বগুড়ায় বাড়ি, ঝিনাইদহে বাড়ি, দিনাজপুরের বাড়ি, তাহলে চাকরিতে নেওয়া যাবে না বা ক্ষেত্রবিশেষে পদোন্নতি হবে না।’ এ ধরনের মনোভাব থেকে বের হতে না পারলে পুলিশ বাহিনীর সংস্কার বা পেশাদারি মনোভাব ফেরানো কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরও আচরণের পরিবর্তন না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে নুরুল হুদা বলেন, ‘এক অদ্ভুত ব্যাপার। এখানে দুই হাজারের মতো লোক মারা গেল। অথচ বিহেভিয়ারে চেঞ্জ নেই।’

দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঠিকভাবে কাজ করতে না পারার অন্তরায় হিসেবে নিয়োগে দুর্নীতি এবং সমাজে বিভাজনকে চিহ্নিত করেন সাবেক এই পুলিশপ্রধান। তিনি বলেন, ‘এই যে প্রচুর সংখ্যার লোক পয়সা দিয়ে চাকরিতে ঢুকেছে বা এখানে হলে...অনেক পয়সা হয়, এই অ্যাটিচিউড (আচরণ) থাকলে তো ল এনফোর্সমেন্ট (আইনশৃঙ্লা নিয়ন্ত্রণ) মুশকিল। আর ল এনফোর্সমেন্টের আরেকটা বড় জিনিস হচ্ছে আমি যে সমাজে কাজ করতে যাচ্ছি, সেই সমাজ কতখানি বিভাজিত।’

সংস্কারের পটভূমিতে স্বাধীন পুলিশ কমিশনের কর্মপদ্ধতি জানতে চেয়েছেন নুরুল হুদা। পুলিশ রিমান্ডের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

এই গোলটেবিল বৈঠকে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম আকবর আলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান বক্তব্য দেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, পুলিশের অতিরিক্ত আইজি কাজী মো. ফজলুল করীম বৈঠকে অংশ নেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গজারিয়ায় পরিবারকে জিম্মি করে অর্ধলক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট
  • পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে
  • পুলিশ লাইনসগুলো গোপন কারাগারে রূপান্তরিত হয়েছিল: নূর খান
  • মাঝে মধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কী আমাদের লোক’: আইজিপি
  • ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা
  • মবের ঘটনা নানাভাবে রাজনীতিকরণ করা হয়: এনসিপি নেতা আদীব