তিন মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ৪৭
Published: 25th, April 2025 GMT
রাজনৈতিক সহিংসতায় গত তিন মাসে (জানুয়ারি থেকে মার্চ) সারা দেশে অন্তত ৪৭ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বিএনপির অন্তঃকোন্দলে ২৭ জন, আওয়ামী লীগের অন্তঃকোন্দলে ৫ জন এবং আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংঘর্ষে ৮ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সংঘর্ষে ২ জন, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সংঘর্ষে ১ জন নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং এইচআরএসএসের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। সেখানেই এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে এইচআরএসএস।
সংস্থাটি বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে কমপক্ষে ৩২৫টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৪৭ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি কমপক্ষে ২৪৫ জন আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বিএনপির ৩১ জন, আওয়ামী লীগের ১০ জন, জামায়াতে ইসলামীর ১ জন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ১ জন এবং ইউপিডিএফের ২ জন। অপর ২ জনের রাজনৈতিক পরিচয় মেলেনি, যার মধ্যে একজন নারী রয়েছেন।
আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক প্রতিশোধপরায়ণতা, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখলকেন্দ্রিক অধিকাংশ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত তিন মাসের রাজনৈতিক সহিংসতার তথ্যগুলো পর্যালোচনা করে এইচআরএসএস বলছে, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় মার্চ মাসে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ কমেছে। তবে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির সংঘর্ষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া গত তিন মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৭০ জনের বেশি গুলিবিদ্ধ, চার শতাধিক বাড়িঘর, রাজনৈতিক কার্যালয়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও যানবাহনে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুসংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এইচআরএসএস জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, ভুক্তভোগীর পরিবার ও এইচআরএসএসের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে, হেফাজতে ও নির্যাতনে কমপক্ষে ৯ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের নামে তিনজন, নির্যাতনে চারজন, পুলিশ হেফাজতে একজন এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে সারা দেশে কারাগারে কমপক্ষে ২১ জন আসামির মৃত্যু হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জন কয়েদি এবং ১২ জন হাজতি। এদের মধ্যে খুলনা ও নওগাঁ কারাগারে আক্তার শিকদার ও সিদ্দিক হোসেন নামে আওয়ামী লীগের দুজন নেতার মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
তিন মাসে গণপিটুনিতে ৩১ জনের মৃত্যুএইচআরএসএস সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, তিন মাসে গণপিটুনিতে ৭০টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩১ জন। আহত হয়েছেন আরও ৬৪ জন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, গত ৪ মার্চ দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ছিনতাইকারী সন্দেহে ইরানের দুই নাগরিককে গণপিটুনি দিয়ে আহত করা হয়। গত ৩ মার্চ রাতে চট্টগ্রামের এওচিয়া ইউনিয়নে মাইকে ‘ডাকাত’ ঘোষণা দিয়ে দুজন জামায়াত কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে মাদারীপুরে ডাকাতির ঘটনায় শরীয়তপুরে সাতজনকে গণপিটুনির ঘটনায় পাঁচজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন। হবিগঞ্জের বাহুবলে মোবাইল ফোন চুরি সন্দেহে জাহেদ মিয়া (২৮) নামে একজন যুবককে গাছের সঙ্গে বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করার একপর্যায়ে তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পাবনার ঈশ্বরদীতে চুরির অভিযোগ এনে এক নারীকে লোহার খুঁটিতে বেঁধে মারধর করার পর জুতার মালা পরিয়ে নির্যাতন করা হয়।
অন্যান্য ঘটনাএইচআরএসএসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত তিন মাসে অন্তত ৬৭টি ঘটনায় কমপক্ষে ১১ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্ততপক্ষে ৫৮ জন, লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন ৬ জন, হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন ১১ জন ও গ্রেপ্তার হয়েছেন ৪ জন। এ ছাড়া ১০টি মামলায় ২৪ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ সময়ে সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩–এর অধীন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন একজন এবং অভিযুক্ত করা হয়েছে তিনজনকে।
পাশাপাশি গত তিন মাসে সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩–এর অধীন করা অন্তত ৮টি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬ জন এবং অভিযুক্ত করা হয়েছে ১৩ জনকে।
২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ১৮টি হামলার ঘটনায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৫ জন বাংলাদেশি নিহত, ১০ জন আহত ও ১৫ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। সিলেট সীমান্তে ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে শাহেদ আহমদ (২৫) নামের এক বাংলাদেশি তরুণ নিহত এবং অপর ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ২ জন আহত হয়েছেন।
এইচআরএসএস বলছে, গত তিন মাসে কমপক্ষে ৫১২ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর কমপক্ষে ৭টি হামলার ঘটনায় ২ জন আহত, ১০টি প্রতিমা ভাঙচুর ও জমি দখলের মতো ২টি ঘটনা ঘটেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র হয় ছ ন গত ত ন ম স র স ঘর ষ র ঘটন য় গণপ ট ন ব এনপ র জন আহত কমপক ষ আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এবার এক নতুন আলোচনায় এসেছে গণভোট আয়োজনের সম্ভাবনা। রাজনৈতিক দলগুলোর নানামুখী প্রস্তাব ও অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলেছে, সরকার যদি চায় তাহলে সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একযোগে বা আলাদা দিনেও গণভোট আয়োজন সম্ভব। এজন্যই কমিশন সরকারের ৩১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে আগাম প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে এই আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, অর্থ, আইন, পররাষ্ট্র, শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, স্থানীয় সরকার, তথ্য, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, সড়ক পরিবহনসহ ৩১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব উপস্থিত ছিলেন।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল- একদিকে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি পর্যালোচনা, অন্যদিকে গণভোট আয়োজনের সম্ভাব্য পরিস্থিতি বিবেচনায় আগাম পরিকল্পনা গ্রহণ।
গণভোটের প্রস্তুতি নির্দেশনা
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, বৈঠকের শুরুতেই সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, “গণভোট নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। তবে এটি হবে কি না, কবে হবে তা নির্ধারণ করবে সরকার। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, যদি গণভোট আয়োজনের নির্দেশ আসে, তাহলে যেন তা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করা যায় সে জন্য প্রস্তুতি রাখা।”
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সভায় বলেন, “সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হলে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়বে। সেক্ষেত্রে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার সংখ্যাও বাড়াতে হবে। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন তারা আগে থেকেই বিদ্যালয়গুলো প্রস্তুত রাখে।”
সভায় আরো জানানো হয়, দুটি ভোট একসঙ্গে হলে ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। ইসি ইতোমধ্যে খসড়া ভোটকেন্দ্র তালিকা তৈরি করেছে। এই তালিকা অনুযায়ী কেন্দ্রগুলোর রাস্তা, বিদ্যুৎ সংযোগ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়।
ভোটকেন্দ্র, অবকাঠামো ও লজিস্টিক প্রস্তুতি
সভায় আলোচনা হয়, দেশের ৪২ হাজারের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তুতি নিতে হবে। যেসব স্থানে ভবন সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে, স্থানীয় সরকার ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে দ্রুত সংস্কার সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।
ইসির নির্দেশে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে যাতায়াতের রাস্তা যেন ভোটের আগে মেরামত ও প্রবেশযোগ্য হয়। দূরবর্তী ও দুর্গম এলাকায় হেলিপ্যাড সংস্কারের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে, যাতে প্রয়োজনে জরুরি পরিবহন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলাচলে সমস্যা না হয়।
এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরা সচল রাখা, ভোটের দিন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনি কর্মকর্তাদের লজিস্টিক সহায়তা ও যানবাহন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মেডিকেল টিম ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
সভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা জানান, নির্বাচনের দিন প্রতিটি উপজেলায় একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হবে। প্রতিটি টিমে একজন চিকিৎসক, একজন নার্স ও প্রয়োজনীয় ওষুধ থাকবে। দুর্গম এলাকায় ইউনিয়নভিত্তিক সহায়ক টিমও থাকবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবি, পুলিশ, আনসার ও র্যাবকে যৌথভাবে প্রস্তুত রাখা হবে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে অন্তত একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন, যিনি আচরণবিধি প্রতিপালন তদারকি করবেন।
প্রযুক্তি ও নজরদারি ব্যবস্থা
ইসি জানিয়েছে, ভোটগ্রহণ ও ফলাফল প্রেরণে এবার সর্বাধুনিক ডিজিটাল ভোট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ডিভিএমএস) ব্যবহার করা হবে। এতে কেন্দ্র থেকে সরাসরি ফলাফল জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে পাঠানো সম্ভব হবে।
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “আমরা চাই ফলাফল যেন দ্রুত ও নির্ভুলভাবে ঘোষণা করা যায়। সেই জন্যই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে।”
তিনি আরো জানান, ভুয়া খবর ও বিভ্রান্তি রোধে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হচ্ছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভ্রান্ত তথ্য ছড়িয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেবে।
গণভোটের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশের সংবিধানে ১৪২(১)-এর উপধারায় বলা আছে যদি সংবিধান সংশোধন বা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনমত জানতে হয়, তবে গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে।
সরকার ও রাজনৈতিক মহলে সম্প্রতি সংবিধানের কিছু অনুচ্ছেদে সংস্কার এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সেই সূত্রেই গণভোটের বিষয়টি সামনে এসেছে।
তবে রাজনৈতিকভাবে বিষয়টি সংবেদনশীল। কিছু দল মনে করছে, একই সঙ্গে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন করলে প্রশাসনিক চাপ বেড়ে যাবে; আবার কেউ কেউ বলছে, এতে ব্যয় কমবে ও জনসম্পৃক্ততা বাড়বে।
একজন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, “ইসি প্রস্তুতি নিচ্ছে এমনভাবে, যেন সরকার যেদিন গণভোটের সিদ্ধান্ত দেবে, সেদিনই কাজ শুরু করা যায়।”
অর্থনৈতিক প্রস্তুতি ও বাজেট বরাদ্দ
ইসি সূত্রে জানা গেছে, সংসদ নির্বাচন একা আয়োজনের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে তা প্রায় ৮,২০০ কোটি টাকা। কিন্তু গণভোট যুক্ত হলে ব্যয় আরো ৩,০০০ থেকে ৩,৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে।
অর্থ বিভাগের সচিব বৈঠকে জানান, বাজেট সংস্থান বিষয়ে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে এবং ব্যয় সাশ্রয়ী হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় খরচ না করে শুধু অপরিহার্য খাতে অর্থ ব্যয় করতে বলা হয়েছে।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা
ইসি সচিব বলেন, “আমরা প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের একটি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল তৈরি করছি। শিক্ষক, সরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা ও অন্যান্য দপ্তরের কর্মচারীরা এতে থাকবেন।”
ইসি চায়, ভোটগ্রহণে যেন নিরপেক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করেন। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নিরপেক্ষ শিক্ষকদের তালিকা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তথ্য মন্ত্রণালয় ও প্রচার কৌশল
ভোটার সচেতনতা বাড়াতে ইসি সংসদ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) এয়ারটাইম ব্যবহার করবে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভোটাধিকার ও আচরণবিধি বিষয়ে সচেতনতামূলক ভিডিও প্রচার করা হবে। তথ্য মন্ত্রণালয় ও ইসি যৌথভাবে এই প্রচার অভিযান পরিচালনা করবে।
বিদেশি পর্যবেক্ষক ও প্রবাসী ভোটার
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভিসা ও অনুমতি প্রক্রিয়া দ্রুত করা হবে। একই সঙ্গে ইসি প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের জন্য ডিজিটাল পোস্টাল ব্যালট সিস্টেম চালু করছে। আগামী ১৬ নভেম্বর এর ট্রায়াল অ্যাপ উদ্বোধন হবে বলে জানিয়েছেন সচিব আখতার আহমেদ।
সরকারি সফরে সচিবদের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিল ইসি
বৈঠকে সিইসি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনারা সরকারি সফরে দেশের যেখানেই যান না কেন, নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেবেন। এটি আমাদের জাতীয় দায়িত্ব।”
তিনি আরো বলেন, “নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতিতে সরকারের পূর্ণ সহায়তা চায়। কারণ নির্বাচন কমিশন একা এই বিশাল আয়োজন করতে পারে না, সব মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় জরুরি।”
সাবেক নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা ও ঢাকা-১৪ আসনের ভোটার তৌহিদুর রহমান বলেন, “সব মিলিয়ে নির্বাচন কমিশনের এই বৈঠক শুধু প্রশাসনিক নয়, বরং রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি ইঙ্গিত দেয় যে সরকার গণভোটের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে এবং ইসি চাইছে আগেভাগে প্রস্তুত থাকতে যাতে কোনো অঘটন বা বিলম্ব না ঘটে।”
তিনি বলেন, “এখন অপেক্ষা সরকারের সিদ্ধান্তের। সংসদ নির্বাচন ও গণভোট কি একসঙ্গে হবে, নাকি আলাদা দিনে। যেভাবেই হোক, নির্বাচন কমিশনের এই আগাম প্রস্তুতি বাংলাদেশের নির্বাচনি ব্যবস্থাকে আরো সংগঠিত ও প্রযুক্তিনির্ভর হবে।”
ঢাকা/এস