মস্কোতে বাংলাদেশি সিনেমার বিশেষ স্বীকৃতি
Published: 26th, April 2025 GMT
মস্কোতে আয়োজিত হলো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ৪৭তম আসরের সমাপনী অনুষ্ঠান। সেখানে প্রাত্যহিক জীবনের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য ‘স্পেশাল মেনশন অ্যাওয়ার্ড (জুরি)’ জিতেছে বাংলাদেশি সিনেমা ‘মাস্তুল’।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকালে ছবির নির্মাতা মোহাম্মাদ নূরুজ্জামানের হাতে এই প্রশংসাপত্র তুলে দেয় ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটি। এদিন রাতেই বসে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ৪৭তম আসরের সমাপনী অনুষ্ঠান। এর আগে সকালে ‘ফার্স্ট প্রাইজ’ অনুষ্ঠানে স্পেশাল মেনশন অ্যাওয়ার্ড জেতে ‘মাস্তুল’।
মস্কো থেকে এ বিষয়ে নির্মাতা বলেন, “মস্কোতে ‘মাস্তুল’-এর প্রিমিয়ারে ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছি। বিভিন্ন দেশের সাধারণ দর্শক থেকে ফিল্ম ক্রিটিক, সাংবাদিকরা সিনেমাটি নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। ‘মাস্তুল’ নিয়ে এতো মানুষের আগ্রহই আমার কাছে বড় প্রাপ্তি বলে মনে হয়েছে। এরমধ্যে ফার্স্ট প্রাইজ সেরেমনিতে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটি কর্তৃক স্পেশাল মেনশন পাওয়া সন্দেহাতীতভাবে মাস্তুল-এর জন্য বিশেষ অর্জন।”
জলে ভাসমান জাহাজীদের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘মাস্তুল’। সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু, দীপক সুমন, আমিনুর রহমান মুকুল, আরিফ হাসান, সিফাত বন্যা প্রমুখ। ছবিটির ডিজিটাল ডিস্ট্রিবিউশন ও প্রমোশনে আছে টঙঘর টকিজ।
‘মাস্তুল’ ছাড়াও ফার্স্ট প্রাইজ-স্লটে ‘নেটপ্যাক জুরি পুরস্কার’ জিতেছে ভারতীয় খাশিয়া ভাষার ছবি ‘এলেসিয়াম’। এটি পরিচালনা করেছেন প্রদীপ কুর্বা, রুশ চলচ্চিত্র সমালোচকদের জুরি পুরস্কার পেয়েছে আর্জেন্টিনার ছবি ‘নন স্ট্যান্ডার্ড থিংকিং’- এটি পরিচালনা করেছেন মারিয়ানো ওয়াটার।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র উৎসব কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
২০০ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে ভোলার বৈষা দধি
ভোলার ভ্যাপসা গরম, দুপুর গড়াতে না গড়াতেই সদর রোডজুড়ে তীব্র যানজট নাগরিক জীবনকে ব্যস্ত করে ফেলে। গরমে হাঁসফাঁস করা মানুষ একটু স্বস্তি খোঁজে। আর সেই স্বস্তি এনে দিতে পারে ভোলার বিখ্যাত বৈষা দধি।
দুপুরের আগেই সব দোকানের হাঁড়ি ফাঁকা হয়ে যায়। মহিষের কাঁচা দুধে পাতানো এই দই ভোলার স্বাদ, ইতিহাস ও গর্বের এক অনন্য বহিঃপ্রকাশ।
ভোলার দোকানগুলোতে প্রতিদিন মণকে মণ বৈষা দধি তৈরি হয়। এই দইয়ের বিশেষত্ব হলো, মহিষের কাঁচা দুধ দিয়ে এটি পাতা হয়। বাজারে সচরাচর যে দই পাওয়া যায়, সেসব তৈরি হয় গরুর দুধ দিয়ে এবং দুধ জ্বালিয়ে গাঢ় করে। কিন্তু ভোলার বৈষা দধি হয় মহিষের কাঁচা দুধ দিয়ে।
জলবেষ্টিত দ্বীপ জেলা ভোলার এক অমূল্য সম্পদ মহিষ। পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে তেঁতুলিয়া, উত্তরে ইলিশা আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর—এই চার নদী ও সমুদ্রবেষ্টিত চরাঞ্চলে ঘুরে বেড়ায় হাজার হাজার মহিষ। সরকারি হিসাবে এই সংখ্যা দেড় লাখের কাছাকাছি, তবে স্থানীয় লোকজনের মতে তা দুই লাখ ছাড়িয়েছে। এই মহিষের দুধই বৈষা দধির প্রাণ।
প্রায় দুই শতাব্দী ধরে এ অঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় থাকে এই দই। এ ছাড়া অতিথি আপ্যায়নের অন্যতম প্রধান উপাদান এটি। উৎসব-পার্বণ, বিয়েশাদি কিংবা যেকোনো সামাজিক আয়োজনে বৈষা দধি ছাড়া যেন ভোলার কোনো উৎসব পরিপূর্ণতা পায় না।
মুহাম্মদ শওকাত হোসেনের ‘ভোলা জেলার ইতিহাস’ বই থেকে জানা যায়, দুই শ বছর আগে থেকে ভোলায় চর জাগতে শুরু করে। বসতি হয়, মহিষ পালন শুরু হয়। দুধ সংরক্ষণের উপায় ছিল না বলে স্থানীয় বাসিন্দারা দই বানাতেন। সেখান থেকেই বৈষা দধির যাত্রা শুরু, যা পরে ছড়িয়ে পড়ে পুরো অঞ্চলে।
ভোলার মানুষের খাদ্যসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে এই দই। এটি ভাতের সঙ্গে খাওয়া হয়, চিড়া-মুড়ির সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি হয় মুখরোচক খাবার, আবার গরমের দিনে দই, পানি ও চিনি মিশিয়ে তৈরি করা হয় ঘোল—যা শরীরকে শীতল রাখে। শীতকালে হাঁসের মাংসের সঙ্গে টক দই ও খেজুরের গুড়—ভোলার ভোজনরসিকদের কাছে এক অনন্য স্বাদ। পান্তাভাতের সঙ্গে দই ও খেজুরের গুড় এই অঞ্চলের জনপ্রিয় একটি খাবার।
বর্তমানে প্রতি কেজি বৈষা দই বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। তবে ঈদে দাম বেড়ে যায়। ঈদের আগেই বিক্রেতারা দুধ জমাতে শুরু করেন এবং এ সময়ে প্রতিদিন ৮০০–৯০০ কেজি পর্যন্ত দই বিক্রি হয়।
ভোলার দোকানগুলোতে প্রতিদিন মণকে মণ বৈষা দধি তৈরি হয়