বাংলাদেশে চিকিৎসাসেবা ও শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, এই লক্ষ্যে মেডিকেল শিক্ষার কারিকুলাম ঢেলে সাজাতে হবে এবং পরিবর্তন আনতে হবে সেবা দেওয়ার পদ্ধতিতে। শনিবার বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের ২৪তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়। 

গত বৃহস্পতিবার তিন দিনব্যাপী শুরু হওয়া এ সম্মেলন শেষ হবে আজ রোববার। সম্মেলনে বাংলাদেশে প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার নানা দিক নিয়েও আলোচনা করা হয়। এতে বলা হয়, কিছু কিছু চিকিৎসা আছে যেগুলো প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধ দিয়ে সুস্থ রাখা যায়। এ ব্যাপারে মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা বলেন, কিছু শারীরিক পরিশ্রম করার পাশাপাশি কমদামি ম্যাটফরমিন নামক ট্যাবলেট দিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এ ছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ের অনেক ওষুধ আছে যেগুলো এখনও কার্যকর এবং দামও কম। মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা যতদূর সম্ভব মানুষের আর্থিক খরচ কমিয়ে উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। 

‘সবার জন্য উন্নত চিকিৎসা’ স্লোগানে এ আয়োজনে অন্তত ১০টি সেশনে শতাধিক গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হচ্ছে। সম্মেলনে দেশের দুই হাজারেরও বেশি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অংশ নিচ্ছেন। এবারের সম্মেলনে পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফ্রান্সসহ বিশ্বের নানা দেশ থেকে ১০ জন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অংশ নিয়েছেন। তারা অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে বিশ্বমানের চিকিৎসা পদ্ধতির সংযোগ স্থাপনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। 

বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা.

মোহাম্মদ মনির-উজ-জামানের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. সরোয়ার বারী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এফএম সিদ্দিকী, অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সোসাইটির সদস্য সচিব মুহাম্মদ জাকারিয়া আল আজিজ।

অধ্যাপক মনির-উজ-জামান বলেন, মেডিসিন হলো চিকিৎসা ব্যবস্থার মূলধারা, যা সাধারণ মানুষের জন্য স্বল্প খরচে মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করে। বর্তমানে দেশে ১১৪টি মেডিকেল কলেজের মধ্যে ৩৭টি সরকারি থাকলেও, মেডিসিন বিভাগের জনবল এখনও প্রয়োজনের তুলনায় কম। তিনি সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় নতুন পদ সৃষ্টি ও পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগের জোর দাবি জানান। বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে স্বাস্থ্য খাতে প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানান অধ্যাপক মনির-উজ-জামান।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স স ইট

এছাড়াও পড়ুন:

জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছে না

জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি চলে যেতে এখনও বলছে না। বরং একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিতে সরকারই নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে।

কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরায় এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। ‘মুহাম্মদ ইউনূস: রিয়েল রিফর্ম অর জাস্ট আ নিউ রুলিং ক্লাস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে সাক্ষাৎকারটি গতকাল রোববার আলজাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জুলাই বিপ্লব, সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া, সাবেক সরকারের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে  কথা বলেন তিনি।

বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উদাহরণ সৃষ্টিকারী নির্বাচন উপহার দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা এখনও তুঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান।

আলজাজিরার উপস্থাপক ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, এটা কি বলা ঠিক যে, শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মধুচন্দ্রিমা’ এখন সম্ভবত শেষ হয়েছে? কিছু বেশ বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব আপনাকে দিতে হবে। কারণ, পুরোনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অনেকে রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে।

লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারবে? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি। তারা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া যাতে তৈরি হয়।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এ প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে– তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কিনা। তারা এখনও কিছু ঘোষণা করেনি। তা ছাড়া নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাসহ নানা বিষয় সামনে আসতে পারে।

তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তা নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দল আছে, যারা বলতে পারে যে, এই আইনের অধীনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

সাক্ষাৎকারে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের প্রসঙ্গ ওঠে। ড. ইউনূস জানান, তিনি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেছিলেন তিনি। জবাবে মোদি বলেছিলেন, এটা তাঁর জন্য সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু বললে, সেটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।

যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, একসঙ্গে কাজ করার নীতি নিয়ে আগাতে চাই। আমরা একসঙ্গেই পারস্পরিক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিতে চাই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চিনি-লবণের অনুপম পাঠ
  • মে দিবস ২০২৫ : শ্রমিক-মালিক ঐক্যে গড়বে নতুন বাংলাদেশ
  • বিদ্যালয়ের ১৮টি গাছ বিক্রি করলেন প্রধান শিক্ষক 
  • কর্ণাটকে ক্রিকেট খেলার সময় বচসা, যুবককে পিটিয়ে হত্যা
  • দেশে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে চালুর দাবি 
  • রাখাইন রাজ্যে ‘মানবিক করিডোর’ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিলেন প্রেস সচিব
  • কানাডায় আবারও লিবারেল পার্টির সরকার গঠনের আভাস
  • আ.লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে
  • জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছে না
  • আ.লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে: ড. ইউনূস