হাবল টেলিস্কোপ কিংবা জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের অনেক ছবি দেখে বিস্মিত হই। রঙিন সব ছবি দেখে চমকে যাই। মহাবিশ্বের বিভিন্ন ছবির মুগ্ধতার শেষ নেই। উজ্জ্বল নীহারিকা, রঙিন ছায়াপথ কিংবা নক্ষত্রের ঝলমলে উপস্থিতি দারুণ লাগে। কখনো ভেবে দেখেছেন যে ছবি আমরা সেই ছবির রং আসলেই যা দেখেন তা কি না? মহাবিশ্বের প্রকৃত রঙের কথা শুনে চমকে যেতে পারেন।
সাধারণ অর্থে মহাবিশ্বের বেশির ভাগ আলোকরশ্মি আমাদের চোখে দৃশ্যমান নয়। নক্ষত্র ও অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তু থেকে তড়িৎ চৌম্বকীয় বর্ণালিতে বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যে আলোর বিকিরণ হয়। বিভিন্ন গ্রহ বা বস্তু থেকে দৃশ্যমান আলো, অবলোহিত বা ইনফ্রারেড, অতিবেগুনি বা আলট্রাভায়োলেট, এক্স-রে, গামা রশ্মি ইত্যাদি নির্গত হয়। আমাদের চোখ কেবল দৃশ্যমান আলো শনাক্ত করতে পারে, যার তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রায় ৪০০ থেকে ৭০০ ন্যানোমিটারের মধ্যে। এই দৃশ্যমান আলোতেই আমরা বিভিন্ন রং দেখতে পাই।
জ্যোতির্বিদেরা যখন দূরবর্তী মহাজাগতিক বস্তুর ছবি তোলেন, তখন তাঁরা প্রায়ই দৃশ্যমান আলোর বাইরে ভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিকিরণকে ধারণ করেন। এই অদৃশ্য আলোকরশ্মি মানুষের চোখে দৃশ্যমান করার জন্য বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিকিরণকে একটি নির্দিষ্ট রং দেওয়া হয়। অবলোহিত বিকিরণকে লাল বা সবুজ রঙে, অতিবেগুনি বিকিরণকে নীল বা বেগুনি রঙে দেখানো হয় অনেক ছবিতে। যে কারণে আমরা আসলে এমন রঙিন ছবি দেখতে পাই, যা আসলে মহাবিশ্বের প্রকৃত রংকে উপস্থাপন করে না। আমরা বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিকিরণের একটি রঙিন উপস্থাপনা দেখি।
আবার এককথায় মহাবিশ্বের কোনো প্রকৃত রং নেই বলা যাবে না। দৃশ্যমান আলো মহাজাগতিক বস্তু থেকে নির্গত হয়। বস্তুর গঠন, তাপমাত্রা ও দূরত্বের ওপর নির্ভর করে বস্তুর রঙে ভিন্নতা দেখা যায়। নক্ষত্রের রং তাদের পৃষ্ঠের তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে। শীতল নক্ষত্র কিছুটা লালচে দেখায়। মাঝারি তাপমাত্রার নক্ষত্র হলুদ দেখায়। আমাদের সূর্য এমন হলুদ বর্ণের। আবার উত্তপ্ত নক্ষত্র নীল বা সাদা দেখায়। বিভিন্ন ছায়াপথ বা গ্যালাক্সির সামগ্রিক রং নক্ষত্রের প্রকারভেদ ও ধূলিকণার উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে। নবীন নক্ষত্রসমৃদ্ধ গ্যালাক্সি কিছুটা নীলচে দেখায়। পুরোনো নক্ষত্র কিংবা ধূলিকণা সমৃদ্ধ গ্যালাক্সি হলুদ বা লালচে আভা ধারণ করে। অন্যদিকে গ্যাস ও ধূলিকণার বিশাল মেঘ নীহারিকার বিভিন্ন রং দেখা যায়। এদের রং নির্ভর করে গ্যাসের উপাদান ও নক্ষত্রের যে আলো প্রতিফলিত বা বিকিরণ করছে তার ওপর। হাইড্রোজেন গ্যাস বিকিরণ করলে নীহারিকা লালচে দেখায়।
এসব কারণে মহাবিশ্বের প্রকৃত রং হিসেবে একক কোন রঙের নাম বলা কঠিন। সব দৃশ্যমান আলো একত্র করে সম্মিলিত আলোর রঙ জানার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রায় দুই লাখের বেশি গ্যালাক্সির আলো বিশ্লেষণ করে একটি গড় বর্ণালি তৈরি করে পরীক্ষা করেছেন। দেখা যায়, সেই গড় আলোর রং ছিল কিছুটা হালকা সাদা বা অফ-হোয়াইটের কাছাকাছি। ইংরেজিতে সাধারণ এই রংকে বেজ কালার বলে। বিজ্ঞানীরা এই রংকে মহাবিশ্বের সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখেন কসমিক ল্যাটে। ল্যাটে কফির মতোই সেই রং। এই নামের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে রীতিমতো ভোট আয়োজন করা হয়েছিল। কসমিক ল্যাটের সঙ্গে ক্যাপাচিনো কসমিকো, বিগব্যাং বাফ, কসমিক ক্রিমসহ বেশ কিছু নাম দেখা যায় সেই ভোটে।
সূত্র: স্পেস ডট কম
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ক রণক কসম ক উপস থ র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
৫ দফা দাবিতে জামায়াতের বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু
আগামী ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ৫ দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটকে এই সমাবেশ শুরু হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল। দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হবে। মিছিলটি বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।
এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন আল ফালাহ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ৫ দফা দাবিতে তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি।
জামায়াতের দাবিগুলো হলো- জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
একই দাবিতে আগামীকাল ১৯ সেপ্টেম্বর দেশের সব বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল এবং ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের সব জেলা বা উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াতে ইসলামী।