সময় পক্ষে না থাকলে কী করতে হয়? সময়কে নিজের পক্ষে নিয়ে আসতে হয়। অর্থাৎ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং এটাই সেরা সমাধান। সবাই তা পারে না। তবে যাঁরা পারেন, আনহেল কোরেয়াকে তাঁদের কাতারে রাখা যায়। আর্জেন্টিনার হয়ে ২০২২ বিশ্বকাপজয়ী ফরোয়ার্ডের জীবনকে বর্ণনা করা যায় দুই শব্দে—ঘুরে দাঁড়ানো!

আতলেতিকো মাদ্রিদে এখন যে কোরেয়াকে আমরা দেখছি, একসময় তাঁর জীবনটা এমন ছিল না। অর্থ, যশ কিছুই ছিল না। সেটা তাঁর শৈশবের গল্প। দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলে এমন গল্প নতুন কিছু নয়। তবে কোরেয়ার জীবনেও যে এমন দাহকালের গল্প আছে, তা জানতেন কজন! আর্জেন্টিনাইন সাংবাদিক গাস্তন এদুলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই গল্পই বলেছেন ৩০ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড।

আরও পড়ুনএল ক্লাসিকো: আজ কেমন হবে ফ্লিকের কৌশল, কোথায় বার্সেলোনার দুর্বলতা ১৯ ঘণ্টা আগে

শুনুন কোরেয়ার মুখেই, ‘আমরা ছিলাম ১০ ভাইবোন এবং আমাদের খাওয়ার কিছু ছিল না। বাবা মারা যাওয়ার পর মা একা হয়ে পড়লেন, কখনো কখনো আমাদের খাবারই জুটত না, জুটলেও সেটা এক বেলা। ট্যাক্সির দরজা খুলে দিতে এবং গোলাপ বিক্রি করতে আমরা শহরের কেন্দ্রস্থলেও গিয়েছি। দাদির সঙ্গে আমি মাইলের পর মাইল হেঁটেছি, কিছু অর্থের জন্য দরজা থেকে দরজায় কড়া নেড়েছি।’

কোরেয়ার জীবনে সেসব দিন এখন অতীত। সান লরেঞ্জোর বয়সভিত্তিক দল থেকে মূল দল হয়ে ২০১৪ সালে আতলেতিকো মাদ্রিদে যোগ দেন ও খেলছেন সেখানেই। ২০১৫ সালে আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০ দলের হয়ে দক্ষিণ আমেরিকার অনূর্ধ্ব-২০ প্রতিযোগিতায় হন সেরা খেলোয়াড়, চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনাও। সে বছরই আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে তাঁর অভিষেক। ২০২১ সালে এসে জেতেন কোপা আমেরিকা, পরের বছর বিশ্বকাপও। তবে আর্জেন্টিনা দলে নিয়মিত হতে পারেননি। সেটা সম্ভবত আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগে লিওনেল মেসি, লাওতারো মার্তিনেজ ও থিয়াগো আলমাদারা থাকায় নিয়মিত হতে পারেননি। এই ১০ বছরে মাত্র ২৭ ম্যাচে ৩ গোল তারই প্রমাণ।

পরিবারের সঙ্গে কোরেয়া.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর জ ন ট ন

এছাড়াও পড়ুন:

ড্রোন ও উড়ুক্কু যানে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চীনের

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির দৃশ্যপট যেন বাস্তবে রূপায়ণ করছে চীন। শহরজীবনের পরিবহন ও লজিস্টিকস খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে স্বল্প উচ্চতার আকাশ অর্থনীতির বিস্তার ঘটাচ্ছে দেশটি। চীনের মাটিতে যেকোনো বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের পেছনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা থাকে। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। স্বচালিত উড়ন্ত গাড়ি ও ডেলিভারি ড্রোনের ব্যবহার বাড়িয়ে আকাশপথকে নাগরিক জীবনের নিয়মিত যাতায়াত ও সেবার অংশ করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে চীনের সরকার ও বেসরকারি খাত। 

ইতিমধ্যে স্বচালিত উড়ন্ত গাড়িকে বাণিজ্যিক যাত্রী পরিবহনের লাইসেন্স বা অনুমোদন দেওয়া শুরু হয়েছে; তৈরি করা হয়েছে অনুকূল নীতিমালা। ড্রোনের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহেও দ্রুত প্রসার ঘটছে। চীনের এই উচ্চাভিলাষী উদ্যোগ শুধু দেশীয় বাজারেই নয়, বৈশ্বিক পর্যায়েও তাদের আকাশপথে যাতায়াতের উদ্ভাবনে নেতৃত্বে নিয়ে যেতে পারে—এমনটাই ধারণা করছেন প্রযুক্তিবিদেরা। 

বিশ্বের অনেক দেশেই ড্রোন ডেলিভারি ও উড়ন্ত গাড়ির ব্যবহার এখন পরীক্ষামূলক পর্যায়ে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে ২০২১ সালের পর থেকে ওয়ালমার্ট পণ্য সরবরাহে দেড় লাখ বার ড্রোন ব্যবহার করেছে। কিন্তু চীনে এই প্রযুক্তি এখন আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন নয়, হয়ে উঠছে বাস্তবতার অংশ। 

এখন পর্যন্ত এই অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে ছোট হলেও এটির বিস্তার ঘটছে দ্রুতগতিতে। চীনের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অনুমান, ২০২৫ সালের মধ্যে এই খাতের বার্ষিক আয় দাঁড়াবে ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন বা দেড় লাখ কোটি ইউয়ান বা ২০ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। ২০৩৫ সালের মধ্যে তা ৩ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন বা সাড়ে তিন লাখ ইউয়ানে উঠতে পারে। 

চীনের জনপ্রিয় খাদ্য সরবরাহকারী কোম্পানি মেইতুয়ান একাই ২০২৪ সালে ড্রোন ব্যবহার করে ২ লাখের বেশি পণ্য সরবরাহ করেছে। , যেটি আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এই খাত যে সম্প্রসারণ হচ্ছে, তার আরেকটি নজির হলো, উড়ুক্কু গাড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানি ইহ্যাংয়ের শেয়ারদর গত দুই বছরে প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। 

চীনের অনেক কোম্পানি এখন এই খাতে কাজ করছে। চায়না লো অল্টিটিউড ইকোনমি অ্যালায়েন্সের প্রধান লো জুন এক সম্মেলনে জানিয়েছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে চীনে কমপক্ষে ১০০টি কোম্পানি এ ধরনের যান উৎপাদন করবে। ২০২৪ সালের শেষে চীনে বেসরকারি ব্যবহারে নিয়োজিত ড্রোনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ লাখ।

চীনের শহর ও গ্রাম, সীমান্ত ও দ্বীপ—সবখানেই এখন ড্রোনের ছোঁয়া। খাবার ছাড়া শুধু গত এক বছরে ড্রোনে পণ্য সরবরাহ হয়েছে ২৭ লাখেরও বেশিবার। দ্য ইকোনমিস্ট-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্দান্ত গতিতে এগোচ্ছে এক নতুন আকাশ অর্থনীতি। চীনের ডাক বিভাগ চায়না পোস্টও পণ্য সরবরাহে ড্রোন ব্যবহার শুরু করেছে। শহরের হাসপাতালগুলোয় জরুরি ভিত্তিতে রক্ত পৌঁছানো হচ্ছে, কৃষিজমিতে সার ও কীটনাশক ছিটাচ্ছে লাখ লাখ কৃষিড্রোন। ড্রোনের বিচিত্র ব্যবহারও হচ্ছে। যেমন কোথাও উঁচু ভবনে আগুন নিয়ন্ত্রণে হাজির হচ্ছে ড্রোন। সীমান্ত এলাকায় মাদক চোরাচালানের ওপর নজরদারিতেও ব্যবহৃত হচ্ছে ড্রোন। আবার রোগের পরীক্ষার নমুনা দ্রুত ল্যাবে পৌঁছে দিতেও ব্যবহৃত হচ্ছে আকাশপথ। 

২০২৩ সালের শুরুর দিকে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং বার্ষিক সরকারি কর্মপরিকল্পনায় ‘লো অল্টিটিউড ইকোনমি’কে ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির প্রধান খাত হিসেবে ঘোষণা করেন। এ কারণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের পাশে জায়গা করে নেয় ড্রোন ও উড়ুক্কু যান। গত বছরের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা সংস্থা এই নতুন আকাশ অর্থনীতির জন্য আলাদা বিভাগও চালু করেছে। চীন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, ড্রোন ও উড়ুক্কু গাড়ি এখন আর কল্পনা নয়, নতুন বাস্তবতা। 

এদিকে ড্রোনের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও উড়ুক্কু গাড়ি উৎপাদনেও গতি এসেছে। দেশটির বড় বড় গাড়ি কোম্পানি এখন উড়ুক্কু যান তৈরির দিকে ঝুঁকছেন। 

চীনের আকাশপথে দীর্ঘদিন সেনাবাহিনীর কড়া নিয়ন্ত্রণে ছিল। আকাশপথের প্রায় ৯০ শতাংশ জায়গা সামরিক কাজের জন্য বরাদ্দ থাকায় বেসামরিক যাত্রার সুযোগ ছিল খুবই সীমিত। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। স্বল্প উচ্চতার এই আকাশ অর্থনীতির জন্য সরকার আকাশপথ বাণিজ্যের জন্য খুলে দিতে শুরু করেছে। ৬০০ মিটারের নিচের আকাশপথ বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য শেনজেন, হেফেইসহ ছয়টি শহরকে বিশেষ অনুমতি দেওয়া হয়েছে। চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও নতুন করে ‘লো অল্টিটিউড প্রযুক্তি ও প্রকৌশল’ বিষয়ে কোর্স চালু করছে। অর্থনৈতিক মন্দায় জর্জরিত অনেক জেলা প্রশাসন এখন এই নতুন শিল্প নিয়ে আগ্রহী। ড্রোন ও উড়ুক্কু গাড়ি খাতের বদৌলতে তারা অর্থনৈতিক সাফল্য আশা করছে। 

[দ্য ইকোনমিস্ট-এর প্রতিবেদন অবলম্বনে অনুবাদ করা]

সম্পর্কিত নিবন্ধ