জুলাই আন্দোলনে শহীদ হন পটুয়াখালীর জসিম হাওলাদার। ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় শহীদ বাবার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়িতে ফেরার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন মেয়ে। শনিবার রাতে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আজ রোববার বাবার কবরের পাশেই তাকে দাফন করা হয়। দাফন শেষে মেয়েটির দাদা আব্দুস সোবাহান হাওলাদার বিলাপ করে বলেন, ‘আমার নাতনি তো শ্যাষই হইয়্যাই গ্যাছে। যদি অগো উছিলায় (দুই ধর্ষক) আমার নাতনি আত্মহত্যা কইরা থাহে তাইলে আমি অগো ফাঁসি চাই।’  

স্থানীয়রা জানায়, সন্ধ্যায় মেয়েটির মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। পরে স্কুলমাঠে জানাজা শেষে বাবা জসিম হাওলাদারের কবরের পাশেই মেয়েটিকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে।  

সরেজমিনে দেখা গেছে, জসিমের গ্রামের বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে গেছে। মেয়েটির মা বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। বোনও অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন একটু পর পর। দাদা-দাদি, আত্মীয়-স্বজনের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে গ্রামের বাতাস। স্থানীয়রাও তাদের চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না। 

স্থানীয় বাসিন্দা মো.

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাবা জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছে। মেয়েটা কয়েকদিন আগে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। গতকাল আত্মহত্যা করেছে মেয়েটি। শহীদ কন্যার এই আত্মহত্যার সঠিক কারণ তদন্তের মাধ্যমে উদঘাটন করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।

তিনি বলেন, ‘এই দেশে একজন শহীদের মেয়েরও জীবনের নিরাপত্তা নেই। ধিক্কার জানানো ছাড়া আর কিছুই করার নেই।’   

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রানা হাওলাদার বলেন, ‘ধর্ষকদের কঠিন বিচার চাই। যাতে এ ধরনের জঘন্য কাজ আর কেউ করার সাহস না পায়।’

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

মার্চে নির্যাতনের শিকার ৪৪২ নারী

গত মার্চে ৪৪২ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণ করা হয়েছে ১২৫ কন্যাসহ ১৬৩ জনকে। ১৮ কন্যাসহ ৩৬ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। দুই কন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। দুই কন্যা ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছে। এছাড়া ৫৫ কন্যাসহ ৭০ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।

সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সাম্প্রতিক নারীর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ তথ্য জানান। এর আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে মোট ১৮৯ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৩০ কন্যাসহ ৪৮ জন। তার মধ্যে তিন কন্যাসহ ১১ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এক কন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। 
জানুয়ারিতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে মোট ২০৫ নারী ও কন্যাশিশু। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩৩ কন্যাসহ ৪৯ জন। তার মধ্যে ১৪ কন্যাসহ ২০ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এক কন্যাসহ দুইজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া দুইজনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।

মডারেটরের বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৫ নম্বর ধারা জেন্ডার সমতা। এটি উপেক্ষা করা কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয়।

সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, নারী আন্দোলনের অন্যতম দাবি অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন, রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ, সংসদে এক-তৃতীয়াংশ আসন ও সরাসরি নির্বাচন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় অ্যাডভোকেসি ও নেটওয়ার্কিং পরিচালক জনা গোস্বামী।

পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মার্চে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৫৪টি। এর আগে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চে ১৩২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানায়, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২৯৯ কন্যাশিশু।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সারা দেশে ধর্ষণের ঘটনায় মহিলা পরিষদের উদ্বেগ-ক্ষোভ
  • মার্চে নির্যাতনের শিকার ৪৪২ নারী