ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ১৭ একরের ধান চিটা
Published: 27th, April 2025 GMT
রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় পুড়ে অন্তত ১৭ একর জমির ধান চিটা হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে অন্তত ৩০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ইটভাটার কারণে পাঁচ বছর ধরে এলাকার গাছে ফল ধরছে না বলেও অভিযোগ করছেন স্থানীয় লোকজন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা এর প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
উপজেলার অন্নদা নগর ইউনিয়নের বামন সর্দার গ্রামে রয়েছে এমএসবি ব্রিকস নামের ইটভাটাটি। এর উত্তর পাশের জমিতে এমন অবস্থা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষক। তারা বলছেন, সদ্য বের হওয়া বোরো ধানের শীষ ঝলসে চিটা হয়ে গেছে। এতে উৎপাদন কম হওয়ায় লোকসান গুনতে হবে তাদের।
সরেজমিন বামন সর্দার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কিছু ধানের ক্ষেত সোনালি রং ধারণ করেছে। দূর থেকে দেখে পাকা ধান মনে হলেও কাছে গিয়ে দেখা যায়, সব চিটায় পরিণত হয়েছে। যেসব ক্ষেতে এখনও শীষ বের হয়নি, সেগুলোও পুড়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে।
স্থানীয় কৃষক বাদশা মিয়া বলেন, ‘তিন বছর ধরে ঘরের ধানের ভাত খেতে পারি না। ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় সব শেষ হয়ে যায়। এবারও একই অবস্থা হওয়ায় চিন্তায় আছি।’ কৃষক মদন চন্দ্র, সুরেশ চন্দ্র, ইউসুফ আলী ও রওশন আলীর ভাষ্য, তারা ক্ষতিপূরণ চান না। সমস্যার স্থায়ী সমাধান চান। প্রতি বছর ধান পুড়ে যাবে, আর তারা ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেবে, তা হতে পারে না।
এমএসবি ব্রিকস ইটভাটার মালিক মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘যদি আমার ইটভাটার কারণে ধানের ক্ষতি হয়ে থাকে, তাহলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’ ইটভাটার কারণেই জমিগুলোর এমন অবস্থা হয়েছে বলে ধারণা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের। তিনি বলেন, সরেজমিন তদন্তের পর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইন অনুযায়ী ইটভাটাটি বন্ধ থাকার কথা বলে জানান পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল হক সুমন। তিনি বলেন, কৃষক ক্ষতির বিষয়ে আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে রংপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অফিস প্রধান) কমল কুমার বর্মন বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ইটভাটার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে অধিদপ্তর।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ধ নক ষ ত ইটভ ট র ব ষ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
শিশু শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত, থানায় অভিযোগ করায় নানাকে কুপিয়ে হত্যা
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনায় কয়েক বখাটের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন তার স্বজন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ছাত্রীর নানা আজগর আলীকে (৬০) কুপিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয়ভাবে বখাটে হিসেবে পরিচিত আল-আমিন নামে এক যুবক ও তার সহযোগীরা। গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার জয়মন্টপ ইউনিয়নের রায়দক্ষিণ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আজগর আলী রায়দক্ষিণ গ্রামে একটি চায়ের দোকান চালাতেন। অভিযুক্ত আল-আমিন একই গ্রামের মৃত কালু প্রামাণিকের ছেলে।
পুলিশ, নিহতের পরিবার এবং স্থানীয় সূত্র জানায়, যে শিশুটিকে উত্ত্যক্ত করত বখাটেরা, তার মা পাঁচ বছর আগে মারা যান। মেয়েটি নানা আজগর আলীর বাড়িতে থেকে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে পড়ত। বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে শিশুটিকে প্রায় উত্ত্যক্ত এবং অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করত আল-আমিন। এ নিয়ে আজগর আলীসহ মেয়েটির স্বজন বেশ কয়েকবার প্রতিবাদ করলেও কোনো কাজ হয়নি। গত সোমবার মেয়েটির নানা আজগর আলী সিংগাইর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। মঙ্গলবার অভিযোগটি তদন্ত করার পর তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয় আল-আমিন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আল-আমিন চার থেকে পাঁচটি মোটরসাইকেলে করে সহযোগীদের নিয়ে আজগর আলীর চায়ের দোকানে যায়। তারা বৃদ্ধ আজগর আলীকে দোকান থেকে বের করে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও লাটিসোঠা দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। হামলাকারীরা চলে গেলে স্বজন ও প্রতিবেশীরা আজগর আলীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে রাতেই তাঁকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা আজগর আলীকে মৃত ঘোষণা করেন।
আজগর আলীর শ্যালক নজরুল ইসলাম জানান, মাদক সেবন, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িত বখাটে আল-আমিন।
সিংগাইর থানার ওসি তৌফিক আজম বলেন, নিহতের বড় ছেলে আইয়ুব খান বুধবার আল-আমিনকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। ঘটনার পর থেকে আল-আমিন ও তার সহযোগীরা পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।