বঞ্চিত শিশুদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী
Published: 29th, April 2025 GMT
শৈশব শেষের আগেই অধিকারবঞ্চিত অনেক শিশুর জীবন সমাজের মূলস্রোত থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়। অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, সামাজিক বৈষম্য আর নানামুখী বাধায় তাদের শিক্ষাজীবন থমকে যায় মাঝপথে। এমন বাস্তবতায় এই শিশুদের ঝরে পড়া ঠেকাতে এগিয়ে এসেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল তরুণ-তরুণী। ‘পদাতিক’ নামের একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে তাঁরা চালু করেছেন সাপ্তাহিক পাঠদান কর্মসূচি ‘আমরা করব জয়’।
নগরের কীর্তনখোলা নদীতীরের চাঁনমারি এলাকায় কলোনিতে (বস্তি) এই পাঠশালার সূচনা। শতাধিক শিশুকে নিয়মিত পাঠদান করাছেন তাঁরা। এখানে শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে এই পাঠ সীমাবদ্ধ নয়, শিশুদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহী ও আনন্দময় করতে শেখানো হয় গান, কবিতা ও গল্প। গান, গল্প, কবিতা বলার মাধ্যমে চলে পাঠদান।
প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে ‘আমরা করব জয়’ পাঠশালার এই ব্যতিক্রমী পাঠদান কার্যক্রম। শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হয় প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ, যা সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের হাত খরচ বাঁচিয়ে সংগ্রহ করেছেন।
পদাতিকের সভাপতি ভূমিকা সরকার প্রথম আলোকে বললেন, ‘আমরা স্বপ্ন দেখি একটি সমৃদ্ধ দেশের। সুনাগরিকের শান্তিময় দেশ। এ জন্য সবার আগের সব মানুষের শিক্ষা প্রয়োজন। কিন্তু সামাজিক বৈষম্য, অর্থনৈতিক দৈন্য, অজ্ঞতা আমাদের শিশুদের সেই অধিকার নিশ্চিতের পথে বড় প্রতিবন্ধক। কিন্তু আমরা যারা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছি, তারা যদি যে যার জায়গা থেকে এই অন্ধকার উত্তরণে সামান্য ভূমিকা নিই, তাহলে ছোট এই উদ্যোগে দেশটা আলোয় আলোকিত হতে পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীর এমন উদ্যোগে আশা জেগেছে এই কলোনির বাসিন্দাদের মধ্যে। তাঁরা অর্থনৈতিক দৈন্যের মধ্যে কঠিন জীবনসংগ্রাম করছেন। এ দিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ করতেই দম আটকে যাওয়ার অবস্থা। তাই বাধ্য হয়ে অনেকেই শিশুদের পড়ালেখার ব্যয় বহন করতে না পেরে তাদের কাজে পাঠান। এভাবেই শিক্ষাক্ষেত্র থেকে ঝরে পড়ছে নিম্নবিত্তের এই শিশুরা।
অধিকারবঞ্চিত শিশুদের জন্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ‘আমরা করব জয়’ পাঠশালায় চলছে শিশুদের পাঠদান। গত শনিবার বিকেলে তোলা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনায় আওয়ামী লীগ নেতাকে বেধড়ক পেটানোর পর পুলিশে সোপর্দ
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বেগ লিয়াকত আলীকে (৭২) পেটানোর পর পুলিশে দিয়েছেন একদল লোক। আজ শনিবার বেলা একটার দিকে নগরের ফুলবাড়ি গেট বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেগ লিয়াকত আলীর বাড়ি খান জাহান আলী থানার বাদামতলা এলাকার পুলিশ প্রশিক্ষণকেন্দ্রের সামনে। তিনি খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং ফুলবাড়িগেট বাজার বণিক সমিতির সভাপতি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেগ লিয়াকত আলী সমিতির কার্যালয়ে বসে বিএনপি ও অন্য রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের নাম সংগ্রহ করে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করতেন। ব্যবসায়ীদের কাছে তিনি নিয়মিত চাঁদাও আদায় করতেন বলে অভিযোগ। একটি মামলায় ঈদের কয়েক দিন আগে তিনি কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন। আজ শনিবার নিজের বাড়ি থেকে ফুলবাড়ি গেট বাজারে মুঠোফোন মেরামতের জন্য এলে সেখানে একদল লোক তাঁকে ঘিরে ফেলেন ও বেধড়ক মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন বেগ লিয়াকত আলী। তাঁর বিরুদ্ধে দৌলতপুর, দিঘলিয়া, খান জাহান আলী এবং সাভার থানার কয়েকটি মামলা আছে। তাঁর বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করা একটি অভিযোগও আছে। কিছুদিন আগে তিনি একটি মামলায় জামিনে মুক্ত হন।
খানজাহান আলী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সনজিৎ কুমার ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, বেগ লিয়াকত আলীকে স্থানীয় জনগণ পুলিশে সোপর্দ করেছিলেন। তিনি বেশ আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি পুলিশি হেফাজতে আছেন। চিকিৎসার জন্য তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।