জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআরে) ভেঙে দুই ভাগ করা নিয়ে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারদের মধ্যে। রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা আলাদা করা সংক্রান্ত অধ্যাদেশের চূড়ান্ত খসড়ায় তাদের দেওয়া মতামত না রাখায় এই উত্তেজনা দেখা দেয়। মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার বিভিন্ন কার্যালয় থেকে এই দুই ক্যাডারের শতাধিক কর্মকর্তা এনবিআর ভবনে এসে অবস্থান নেন সংস্থার চেয়ারম্যান মো.

আবদুর রহমান খানের দপ্তরের সামনে। এর ধারাবাহিকতায় বুধবার বিকেলেও তারা অবস্থান নেবেন। 

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের থেকে’ রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব নিয়োগ হবে- এমন প্রস্তাব দিয়েছেন বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন ও বিসিএস (কর) অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা। কিন্তু অধ্যাদেশের খসড়ায় তাদের সেই মতামত রাখা হয়নি। চূড়ান্ত খসড়ায় ‘উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন যে কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে’ রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব বা সিনিয়র সচিব নিযুক্ত করার বিধান রাখা হয়েছে। এতে মাঠ কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। অধ্যাদেশ জারির আগেই তা সংশোধন করার দাবি তুলছেন তারা। 

বর্তমানে রাজস্ব আহরণ ও নীতি প্রণয়নসহ রাজস্বসংক্রান্ত বেশির ভাগ দায়িত্বে রয়েছেন এ দুই ক্যাডারের কর্মকর্তারা। দুই ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দাবি, অধ্যাদেশ জারি হলে রাজস্ব আহরণ, নীতি ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞতা না থাকা বা কম অভিজ্ঞদের কাছে রাজস্ব নীতি বিভাগ চলে যাবে। এতে অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা বঞ্চিত হবেন। 

সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে বিসিএস অ্যাসোসিয়েশন বিষয়টি নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। অন্যদিকে আয়কর ক্যাডারদের অ্যাসোসিয়েশন আগামী শনিবার বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) আহ্বান করেছে। এরই মধ্যে এনবিআর চেয়ারম্যান আইএমএফের প্রোগ্রাম শেষ করে আমেরিকা থেকে দেশে এসে অধ্যাদেশের খসড়ার ভেটিং সম্পন্ন করার চেষ্টা করছেন- এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেন কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে চেয়ারম্যান এনবিআরে পৌঁছালে ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে তার দপ্তরের সামনে জড়ো হন আয়কর ও শুল্ক বিভাগের ক্যাডাররা। তারা এক ঘণ্টার বেশি ধরে সেখানে অবস্থান করেন। পরে এনবিআর চেয়ারম্যান দুই ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনকে নিয়ে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বুধবার বিকেল ৩টায় এনবিআর ভবনে এই বৈঠক হওয়া কথা রয়েছে। বৈঠক ঘিরে ঢাকা ও এর আশপাশ থেকে এই দুই বিভাগের কর্মকর্তারা এনবিআরে জড়ো হবেন। 

বৈঠকের বিষয়ে এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আল-আমিন শেখ সমকালকে বলেন, কর্মকর্তাদের আপত্তির বিষয়ে চেয়ারম্যান স্যার তাদের সবাইকে নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানে আয়কর ও শুল্ক দুই ক্যাডারের সংগঠনের নেতারাও ছিলেন। এ বিষয়ে আরও আলোচনা হবে-এমন কথাবার্তা হয়েছে। 

এ বিষয়ে বিসিএস কর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকী বলেন, একটি স্বাধীন ও সক্ষম রাজস্ব বোর্ড তৈরি হোক এটা কর্মকর্তাদের চাওয়া। কিন্তু অভিজ্ঞদের দিয়ে রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালিত না হলে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসা কর্মকর্তাদের মধ্যে অনীহা তৈরি হতে পারে। একটি সুসংগঠিত এনবিআর গড়ার লক্ষ্যও ব্যাহত হতে পারে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনব আর কর মকর ত দ র র কর মকর ত কর মকর ত র অবস থ ন ব স এস

এছাড়াও পড়ুন:

সাগরে ইলিশ মিলছে কম, চড়া দাম আড়তে

নিষেধাজ্ঞা শেষে দীর্ঘ বিরতির পর আবারও সরগরম হয়ে উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম সামুদ্রিক মৎস্য আড়ত কেবি বাজার। সাগরে প্রায় দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় আবারও সরগরম হয়ে উঠেছে বাগেরহাটের ভৈরবতীরের এ মাছ বাজার। 

সাগরে মাছ আহরণ শেষে শুক্রবার ভোরে কেবি বাজার ঘাটে দুটি ট্রলার ভেড়ে। তবে মাছের পরিমাণ চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ব্যবসায়ীরা জানান, ৫৮ দিনের অবরোধ শেষে সাগর থেকে এই প্রথম দুটি ট্রলার এসেছে। তবে এসব ট্রলারে মাছের পরিমান খুবই কম। ফলে দাম অনেক বেশি। 

জেলে রুহুল জানান, তাদের ট্রলার সাগরে যাওয়ার পরে মাত্র কয়েকবার জাল ফেলতে পেরেছেন। এতে অল্প কিছু ইলিশসহ নানা ধরনের মাছ পেয়েছেন। পরে ট্রলারে সমস্যা হওয়ায় চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন। 

শুক্রবার বাজারে ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আধা কেজি থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশ ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজি এবং এক কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার থেকে ২৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

এ ছাড়া রূপচাঁদা আকার ভেদে প্রতিকেজি ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা, কঙ্কন, তুলারডাটি, ঢেলা চ্যালা, ভেটকি, লইট্টা, ছুরি, জাবা, বিড়াল জাবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ একশ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সাগর থেকে বেশি করে ট্রলারের আগমন ও মাছের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে দাম কমবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। 

মোরেলগঞ্জ থেকে মাছ কিনতে আসা তৈয়ব মুন্সি বলেন, সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা চলাকালে তিনি বাজারে আসেননি। অনেক দিন পরে আজই বাজারে এসেছেন, তবে দাম অনেক বেশি। তারপরও কিছু মাছ কিনেছেন। বেশি দামে মাছ কিনে এলাকায় বিক্রি করে লোকসানের শঙ্কা জানান তিনি। 

কেবি বাজার আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক অনুপ কুমার বিশ্বাস বলেন, নিষেধাজ্ঞার পর শুক্রবার প্রথমবারে সাগর থেকে ট্রলার এসেছে। জেলেরা তেমন মাছ পায়নি। তবে বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক পাইকার আসছে। যার কারণে দাম কিছুটা বেশি। সাগরে বেশি পরিমাণ মাছ ধরা পড়লে দাম কিছুটা কমবে বলে জানান তিনি।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবার ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত সাগরে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ ছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশে ১৪ দিনে এল ১১৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স
  • জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংস্কার যেভাবে হলে ভালো হয়
  • সাগরে ইলিশ মিলছে কম, চড়া দাম আড়তে