বাজারে ইরি ও বোরো ধানের নতুন চাল আসায় অনেক দিন পর নিম্নমুখী হয়েছে চালের দাম। খুচরা পর্যায়ে প্রায় সব জাতের চালের দাম কেজিপ্রতি দুই থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত কমেছে। অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আগের মতো উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল আছে।
শুক্রবার (২ মে) রাজধানীর নিউ মার্কেট ও কারওয়ান বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে চালের সরবরাহ ভালো থাকায় দাম কিছুটা নিম্নমুখী। এখন বাজারে ডায়মন্ড ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকায়। রশিদ ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৭৮ টাকায়, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৭৬ টাকায়। নাজিরশাইল চাল ৮০ থেকে ৯৫ টাকা, ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ চাল ৬০ টাকা, স্বর্ণা চাল ৫৫ টাকা এবং চিনিগুঁড়া পোলাও চাল মানভেদে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে সবজির দাম প্রায় অপরিবর্তিত আছে। প্রতি কেজি বেগুন মানভেদে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, গাজর ৬০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, দেশি শশা ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, সজনের ডাটা ১২০ টাকা, প্রতি পিস লাউ ৫০ টাকা এবং জালি কুমড়া ৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০ টাকায়। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, দেশি রসুন ১০০ থেকে ১১০ টাকা এবং দেশি আদা ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নদীতে মাছ কম ধরা পড়ায় বাজারে মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে। এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। প্রতি কেজি চাষের পাঙাস ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ টাকা, কৈ ২২০ টাকা, শিং ৬০০ টাকা, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এখন প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায়। সোনালি জাতের মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাদা লেয়ার ২৮০ টাকা এবং লাল লেয়ার ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজিতে।
রাজধানীর সালেক গার্ডেন কাঁচাবাজারে কেনাকাটা করতে আসা গৃহিণী ফাতেমা বেগম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেছেন, এখন বাজারে সবকিছুর দাম বাড়তি। শীতের সময় সবজির দাম কিছুটা কম ছিল কিন্তু, এখন সবজির দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। এর ফলে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষরা চাহিদামতো প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারছেন না। মাছের দাম গত সপ্তাহ থেকে বাড়তি। দাম শুনে চলে যাচ্ছি, আজকে আর মাছ কিনব না।
রাজধানীর নিউ মার্কেটের মুদি ব্যবসায়ী নাজমুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেছেন, সুখবর হলো—দীর্ঘদিন পর চালের দাম কমেছে। তবে, গত দুই সপ্তাহের তুলনায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। বাজারে এখন সয়াবিন তেলের কোনো সংকট নেই। দাম বাড়ানোর পর কোম্পানিগুলো ঠিকমতো সরবরাহ করছে। অন্যান্য মুদিপণ্যের দাম অপরিবর্তিত আছে।
ঢাকা/রায়হান/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ৮০ ট ক ৮০ থ ক ৬০ ট ক
এছাড়াও পড়ুন:
গাজার উদ্দেশে ত্রাণ নিয়ে যাত্রা করা জাহাজে বোমা হামলা
মানবিক সহায়তা নিয়ে ফিলিস্তিনের গাজার অভিমুখে থাকা একটি জাহাজে ড্রোন দিয়ে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। মাল্টা উপকূলে আন্তর্জাতিক জলসীমায় এ হামলায় জাহাজটি বিকল হয়ে গেছে।
আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে ওই মানবিক সহায়তা আয়োজনকারী সংগঠন ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে সংগঠনটি বলছে, নিরস্ত্র বেসামরিক জাহাজটির সম্মুখভাগে সশস্ত্র ড্রোন দিয়ে দুইবার হামলা চালানো হয়েছে। এতে জাহাজটিতে আগুন ধরে যায় এবং এর কাঠামোয় বড় ধরনের ফাটল দেখা দেয়।
তবে এ বিষয়ে এখনো ইসরায়েল কোনো মন্তব্য করেনি।
ত্রাণবাহী জাহাজটি বর্তমানে মাল্টা উপকূল থেকে ১৪ নটিক্যাল মাইল (২৫ কিলোমিটার) দূরে অবস্থান করছে। জাহাজে গাজাবাসীর জন্য মানবিক সহায়তার পাশাপাশি অধিকারকর্মীরা ছিলেন। তাঁরা জানিয়েছেন, শুক্রবার ভোরে জাহাজের জেনারেটর লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। এতে সেটি বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে এবং ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের পোস্ট করা ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, জাহাজের ওপর আগুন জ্বলছে ও বিস্ফোরণ ঘটছে।
জাহাজে ১২ জন নাবিক ও ৪ জন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন জানিয়ে মাল্টা সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাঁরা সবাই সুস্থ আছেন। জাহাজটিকে সহায়তা করতে কাছাকাছি থাকা একটি টাগ বোটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও মাল্টা সরকারের ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন জানিয়েছে, ২১টি দেশের অধিকারকর্মীরা জাহাজটিতে ছিলেন। ইসরায়েলের বেআইনিভাবে গাজা অবরোধ করে সেখানে হত্যাযজ্ঞ চালানোর প্রতিবাদ এবং গাজাবাসীর জীবন রক্ষার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তাঁরা যাত্রা করেছিলেন।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গাজায় চলমান অবরোধ এবং আন্তর্জাতিক জলসীমায় আমাদের বেসামরিক জাহাজে বোমা হামলাসহ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জবাব চাইতে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতদের অবশ্যই তলব করতে হবে।’
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গত মার্চের মাঝামাঝি থেকে গাজায় আবার সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এরপর দুই মাস ধরে উপত্যকাটি কঠোরভাবে অবরোধ করেছে দেশটি। গাজায় তারা কোনো খাবার, জ্বালানি, ওষুধসহ জীবনরক্ষাকারী অন্যান্য জিনিসপত্রও নিতে দিচ্ছে না।
গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংগঠনগুলো বলেছে, তারা এর মধ্যে তাদের মজুদ করা খাদ্যপণ্যের শেষভাগটাও বিতরণ করে ফেলেছে। ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের এই উপত্যকার কর্মকর্তারা শুক্রবার বলেছেন, গাজায় দুর্গতদের খাবার সরবরাহ করা রান্নাঘরগুলো আগামী এক সপ্তাহ বা ১০ দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে।
গাজা অবরোধ করে রাখার পেছনে যুক্তি হিসেবে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলে আসছেন, গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছালে তা হামাস সদস্যরা চুরি করে নিয়ে তাঁদের যোদ্ধাদের সরবরাহ করেন বা বিক্রি করে দেন। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে গাজায় বড় ধরনের ত্রাণ চুরি হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এই কাজে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা।
এর আগে ২০১০ সালেও তুরস্ক থেকে ত্রাণ নিয়ে গাজার উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন ফ্রিডম ফ্লোটিলার কর্মীরা। মাভি মারমারা নামের ওই জাহাজে একপর্যায়ে হামলা চালিয়েছিলেন ইসরায়েলি সেনারা। তাতে ১০ জন নিহত এবং ২৮ জন আহত হয়েছিলেন।
গত বছরের অক্টোবরে গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের সদস্যরা ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ঢুকে সশস্ত্র হামলা চালান। এতে প্রায় এক হাজার মানুষ নিহত হন। এরপর ওই দিন থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা চালায় ইসরায়েল। মাঝে কিছুদিন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও মার্চের মাঝামাঝিতে আবার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তাদের এই দফার হামলার অন্তত ২ হাজার ৩২৬ জন নিহত হয়েছেন, যাতে গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫২ হাজার ৪১৮ জনে পৌঁছেছে।