সংস্কৃতিচর্চার পরিসর আরও সংকুচিত হলো
Published: 3rd, May 2025 GMT
ময়মনসিংহ শহরে জয়নুল আবেদিন উদ্যান এলাকায় ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চে কয়েক দশক ধরে শিল্প–সাহিত্যের চর্চা হয়ে আসছে। শহরটির সাংস্কৃতিক চর্চার অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল জায়গাটি। অথচ জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন বুলডোজার দিয়ে মুক্তমঞ্চটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। যে যুক্তি দেখিয়ে সেটি ভাঙা হলো, তা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাই।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানে মুক্তমঞ্চটি ভেঙে দেওয়া হয়। এ সময় পাশের নির্মাণাধীন আরেকটি স্থাপনা ভাঙতে গেলে কবি ও সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতিবাদের মুখে তা রক্ষা পায়। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, অবৈধভাবে এ জায়গা দখল করে রাখা হয়েছিল। ওই এলাকা মাদকের আখড়া হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। অভিযানের সময় এসে যাঁরা বাধা দিয়েছেন, তাঁদের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সাহিত্য সংসদ আবেদন করলে অন্য জায়গা ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যান এলাকায় ১৯৯৩ সালের দিকে তৎকালীন জেলা প্রশাসন সাড়ে ছয় শতক জমি সাহিত্য সংসদকে বরাদ্দ দেন। সে জমিতেই প্রশাসন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। এখানে কোনো অসামাজিক কাজ হয় না। এখানে মানুষের কল্যাণ ও কবিতা নিয়েই আলোচনা হয়। কিন্তু কেন ভাঙা হলো, কী অপরাধ, তার কিছুই জানতে পারলাম না।’
কয়েক দশক আগে থেকে শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত দুই সহস্রাধিক সাহিত্য আড্ডা হয়েছে মুক্তমঞ্চটিতে। বদরুদ্দীন উমর, সৈয়দ আলী আহসান, যতীন সরকার, হুমায়ুন আজাদ, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আল মাহমুদ, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, হুমায়ূন আহমেদ, আবদুল মান্নান সৈয়দ, রফিক আজাদ, হেলাল হাফিজসহ দেশের স্বনামধন্য কবি–সাহিত্যিক–বুদ্ধিজীবীরা সেখানে অতিথি হয়ে গেছেন। শিল্প–সাহিত্যের এই ধারাবাহিক চর্চা ময়মনসিংহ শহরের গৌরবের বিষয় হয়ে থাকারই কথা। প্রশাসন যেখানে এমন চর্চাকে পৃষ্ঠপোষকতা দেবে, সেখানে উল্টো বিমাতাসুলভ আচরণ করল।
একসময় জেলা প্রশাসনই যে জমি বরাদ্দ দিয়েছিল, কিসের ভিত্তিতে সেখানে এমন উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হলো? এ অঞ্চলে রাতবিরাতে মাদকসেবীরা ঘুরে বেড়ায় বলে সেটির দায় কোনোভাবে সাহিত্য সংসদের কর্মীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদ করায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়া বিষয়টিও ক্ষমতাচর্চারই বহিঃপ্রকাশ। গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় আমরা প্রশাসন থেকে এমন আচরণ কোনোভাবেই আশা করি না।
এ ঘটনায় ময়মনসিংহের কবি-লেখক-সংস্কৃতিকর্মীরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছেন। তাঁরা এ ঘটনায় প্রশাসনের কাছ থেকে জবাবদিহি চেয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, প্রশাসনের এমন কর্মকাণ্ড শিল্প–সাহিত্যের স্বার্থবিরোধী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমনিতেই সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা দৃশ্যমানভাবে হ্রাস পেয়েছে। এ ধরনের ঘটনা নিশ্চিতভাবে সংস্কৃতিচর্চার পরিসরকে আরও সংকুচিত করবে।
আমরা আশা করব, প্রশাসনের সুমতি হবে এবং মুক্তমঞ্চটি নতুন করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে অটোরিকশার ধাক্কা, নিহত ২
নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে ধাক্কা লেগে সিএনজিচালিত অটোরিকশার দুই যাত্রী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন দুজন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১০টার দিকে উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসংলগ্ন এলাকার নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানার চায়নার মোড় এলাকার আবদুল জলিল (৪৫) ও নেত্রকোনা সদর উপজেলার গ্রামের পসর আলীর ছেলে শহীদ মিয়া (৪২)। অন্যদিকে আহত ব্যক্তিরা হলেন শহীদ মিয়ার স্ত্রী রেজিয়া আক্তার (৩৩) ও একজন অজ্ঞাতপরিচয় নারী। তাঁরা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাতে ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ সেতু এলাকা থেকে একটি অটোরিকশায় করে ওই চার যাত্রী নেত্রকোনার উদ্দেশে রওনা হন। নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ সড়কের নারান্দিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা বালুভর্তি একটি ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দেয় অটোরিকশাটি। এ সময় অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হন।
শ্যামগঞ্জ হাইওয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নান্নু খান বলেন, নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ উদ্ধার করে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।