ময়মনসিংহ শহরে জয়নুল আবেদিন উদ্যান এলাকায় ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চে কয়েক দশক ধরে শিল্প–সাহিত্যের চর্চা হয়ে আসছে। শহরটির সাংস্কৃতিক চর্চার অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল জায়গাটি। অথচ জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন বুলডোজার দিয়ে মুক্তমঞ্চটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। যে যুক্তি দেখিয়ে সেটি ভাঙা হলো, তা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাই।   

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানে মুক্তমঞ্চটি ভেঙে দেওয়া হয়। এ সময় পাশের নির্মাণাধীন আরেকটি স্থাপনা ভাঙতে গেলে কবি ও সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতিবাদের মুখে তা রক্ষা পায়। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, অবৈধভাবে এ জায়গা দখল করে রাখা হয়েছিল। ওই এলাকা মাদকের আখড়া হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। অভিযানের সময় এসে যাঁরা বাধা দিয়েছেন, তাঁদের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সাহিত্য সংসদ আবেদন করলে অন্য জায়গা ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। 

সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যান এলাকায় ১৯৯৩ সালের দিকে তৎকালীন জেলা প্রশাসন সাড়ে ছয় শতক জমি সাহিত্য সংসদকে বরাদ্দ দেন। সে জমিতেই প্রশাসন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। এখানে কোনো অসামাজিক কাজ হয় না। এখানে মানুষের কল্যাণ ও কবিতা নিয়েই আলোচনা হয়। কিন্তু কেন ভাঙা হলো, কী অপরাধ, তার কিছুই জানতে পারলাম না।’ 

কয়েক দশক আগে থেকে শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত দুই সহস্রাধিক সাহিত্য আড্ডা হয়েছে মুক্তমঞ্চটিতে। বদরুদ্দীন উমর, সৈয়দ আলী আহসান, যতীন সরকার, হুমায়ুন আজাদ, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আল মাহমুদ, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, হুমায়ূন আহমেদ, আবদুল মান্নান সৈয়দ, রফিক আজাদ, হেলাল হাফিজসহ দেশের স্বনামধন্য কবি–সাহিত্যিক–বুদ্ধিজীবীরা সেখানে অতিথি হয়ে গেছেন। শিল্প–সাহিত্যের এই ধারাবাহিক চর্চা ময়মনসিংহ শহরের গৌরবের বিষয় হয়ে থাকারই কথা। প্রশাসন যেখানে এমন চর্চাকে পৃষ্ঠপোষকতা দেবে, সেখানে উল্টো বিমাতাসুলভ আচরণ করল।

একসময় জেলা প্রশাসনই যে জমি বরাদ্দ দিয়েছিল, কিসের ভিত্তিতে সেখানে এমন উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হলো? এ অঞ্চলে রাতবিরাতে মাদকসেবীরা ঘুরে বেড়ায় বলে সেটির দায় কোনোভাবে সাহিত্য সংসদের কর্মীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদ করায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়া বিষয়টিও ক্ষমতাচর্চারই বহিঃপ্রকাশ। গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় আমরা প্রশাসন থেকে এমন আচরণ কোনোভাবেই আশা করি না। 

এ ঘটনায় ময়মনসিংহের কবি-লেখক-সংস্কৃতিকর্মীরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছেন। তাঁরা এ ঘটনায় প্রশাসনের কাছ থেকে জবাবদিহি চেয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, প্রশাসনের এমন কর্মকাণ্ড শিল্প–সাহিত্যের স্বার্থবিরোধী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমনিতেই সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা দৃশ্যমানভাবে হ্রাস পেয়েছে। এ ধরনের ঘটনা নিশ্চিতভাবে সংস্কৃতিচর্চার পরিসরকে আরও সংকুচিত করবে। 

আমরা আশা করব, প্রশাসনের সুমতি হবে এবং মুক্তমঞ্চটি নতুন করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ক তমঞ চ চর চ র

এছাড়াও পড়ুন:

কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ ধসে ১০ শ্রমিক আহত

ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ ধসে অন্তত ১০ শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাঁদের উদ্ধার করে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ‘বিদ্রোহী’ ছাত্রাবাসের পাশে একটি ১০ তলা ছাত্রাবাস নির্মিত হচ্ছে। নির্মাণাধীন ছাত্রাবাসের নিচতলায় একটি বারান্দার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ করছিলেন শ্রমিকেরা। আজ সকাল থেকে ঢালাইয়ের কাজ চলতে থাকে। কিন্তু বিকেল সোয়া চারটার দিকে বিকট শব্দে ধসে পড়ে পুরো ছাদ। এ সময় সেখানে কাজ করা অন্তত ১০ শ্রমিক আহত হন। তাঁদের উদ্ধার করে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে একজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) এস এম জিয়াউল বারী বলেন, আহত অবস্থায় ১০ শ্রমিককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। তাঁদের মধ্যে একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, আজ দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। ছাদ ঢালাই দেওয়ার জন্য খুঁটিগুলো ছিল দুর্বল। অনেক স্থানে লোহার পাইপের পরিবর্তে খুঁটি হিসেবে বাঁশ ও পাটের দড়ি ব্যবহার করা হয়। দুর্বল কাঠামোর কারণেই ছাদ ধসে যেতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাহবুবুর রহমান বলেন, ১০ তলা ভবনের নিচে বারান্দার অংশের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছিল। নির্মাণকাজ করছিল সিএসআই নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ছাদ ধসে কয়েকজন শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হওয়ায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কী কারণে ধসে পড়ল, কারও গাফিলতি আছে কি না, তা তদন্তে দেখা হবে। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসরায়েলি কূটনীতিকদের আরব আমিরাত ছাড়ার নির্দেশ
  • গাজায় ত্রাণ নেওয়ার কয়েক মিনিট পর হত্যা করা হয় ক্ষুধার্ত শিশুটিকে: সাবেক মার্কিন সেনা কর্মকর্তা
  • এক্সপ্রেসওয়েতে বাসের পেছনে ট্রাকের ধাক্কা, নিহত ১, আহত ৬
  • থানা হোক ন্যায়বিচারের প্রথম ঠিকানা: আইজিপি
  • থানায় হয়রানিমুক্ত সেবা দেওয়ার আহ্বান আইজিপির
  • কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ ধসে ১০ শ্রমিক আহত
  • ট্রাম্পবিরোধী স্লোগান দিয়ে উড়োজাহাজে গ্রেপ্তার ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক
  • শিক্ষার গতিপথ ও উন্নয়ন নিয়ে ঢাবিতে সেমিনার
  • শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা 
  • ‘আমি কী অপরাধ করেছি’— সবাই জানেন শিরোনামটা...