পুলওয়ামা–কাণ্ডের ঠিক ১২ দিনের মাথায়, ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি, পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বালাকোটে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ করেছিল ভারতের বিমানবাহিনী। ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগাম–কাণ্ডের পর দুই সপ্তাহ অতিক্রান্ত। ভারত এখনো প্রত্যাঘাত করেনি। তবে দেশব্যাপী ‘যুদ্ধ যুদ্ধ’ আবহে যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি সেরে রাখার মহড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আগামীকাল বুধবার বিভিন্ন রাজ্য সরকারকে এই মহড়া চালানোর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাজ্যের মুখ্য সচিবদের এই বার্তা পাঠানো হয়েছে। যুদ্ধ বাধলে নাগরিকদের প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে কী কী করণীয়, সেসবই ওই বার্তায় বলা হয়েছে।

১৯৭১ সালের পর কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রথমবার এ ধরনের মহড়ার নির্দেশ দিল। নির্দেশ কার্যকর করতে হবে প্রধানত সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোকে। কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা অনুযায়ী, দেশের ২৪৪ জেলায় এই মহড়া চালানো হবে। মহড়া দিতে হবে গ্রামীণ এলাকাগুলোতেও।

এই মহড়ায় মূলত দেখা হবে শত্রুদেশের বিমান হামলার সময় সতর্কতামূলক সাইরেন–ব্যবস্থা ঠিক আছে কি না, কিংবা রাতে হামলার আশঙ্কা রুখতে ‘ব্ল্যাক আউট’–ব্যবস্থা কার্যকর অবস্থায় রয়েছে কি না। বিমান হামলা থেকে বাঁচতে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় তৈরি বাংকারগুলো তৈরি রাখা হচ্ছে কি না ইত্যাদি।

বিমান হানা রুখতে ‘ব্ল্যাক আউট’ একটা কার্যকর ব্যবস্থা। শত্রুবিমানের আক্রমণের লক্ষ্য আড়াল করতে এলাকা নিষ্প্রদীপ রাখাই এ ব্যবস্থার উদ্দেশ্য, যাতে বিমানচালককে বিভ্রান্ত করা যায়। পাঞ্জাব সীমান্তের ফিরোজপুরে গত রোববার রাতে আচমকাই এই ‘ব্ল্যাক আউট’ মহড়া চালানো হয়। প্রস্তুতি হিসেবে সেতু, বিমানবন্দর, জাহাজবন্দর, তেলের ডিপো, বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা ঢেকে রাখার কর্মসূচিও নেওয়া হয়, যাতে আকাশ থেকে তা দৃশ্যমান না হয়। সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোকে এসব কাজ দ্রুত সেরে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মহড়ার আরও এক উদ্দেশ্য যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলায় বেসামরিক নাগরিকদের শিক্ষিত করে তোলা। রাজ্যে রাজ্যে গঠিত সিভিল ডিফেন্স এই দায়িত্ব পালন করে। স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে এনসিসি ক্যাডেটদেরও এই বিষয়ে প্রশিক্ষিত করা হয়। লক্ষ্য, বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা সম্পর্কে সজাগ ও সচকিত রাখা। এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে রাজ্য সরকারকে বলা হয়েছে। শত্রু হানায় হতাহত ব্যক্তিদের কত দ্রুত উদ্ধার করা যায়, সেটাও এই মহড়ার একটা অঙ্গ। সেই কাজে হেলিকপ্টারও ব্যবহার করা হয়।

পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে অতীতে সব সময় জম্মু–কাশ্মীর ও পাঞ্জাবের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় আগে থেকেই বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়। ১০ দিন ধরেই জম্মু–কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর অঞ্চলে তৈরি হওয়া বাংকারগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া বিশেষত পাঞ্জাবের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের কৃষকদের দ্রুত ফসল কাটার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুটি কাজই স্থানীয় মানুষ ও প্রশাসন যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে করছে। সীমান্তবর্তী এলাকার সড়ক মেরামতের দিকেও নজর দেওয়া হয়েছে। নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর খাদ্য ও পানীয় মজুতের দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।

ভারত ও পাকিস্তানের সংঘাত নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক শুরুর আগে গতকাল সোমবার রাতে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এক যুদ্ধবিরোধী বার্তায় বলেন, ভুল করেও যুদ্ধের পথে এগনো ঠিক নয়। যেকোনো সময় তা হাতের বাইরে চলে যেতে পারে। ভারত ও পাকিস্তান—দুই দেশের উদ্দেশে তিনি বলেন, কোনো ভুল নয়। সামরিক ব্যবস্থা সমাধানের উপায় নয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ম ন তবর ত ব যবস থ মহড় র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতে যুদ্ধকালীন তৎপরতার মহড়ার জন্য বিভিন্ন রাজ্যকে নির্দেশ

পুলওয়ামা–কাণ্ডের ঠিক ১২ দিনের মাথায়, ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি, পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বালাকোটে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ করেছিল ভারতের বিমানবাহিনী। ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগাম–কাণ্ডের পর দুই সপ্তাহ অতিক্রান্ত। ভারত এখনো প্রত্যাঘাত করেনি। তবে দেশব্যাপী ‘যুদ্ধ যুদ্ধ’ আবহে যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি সেরে রাখার মহড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আগামীকাল বুধবার বিভিন্ন রাজ্য সরকারকে এই মহড়া চালানোর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাজ্যের মুখ্য সচিবদের এই বার্তা পাঠানো হয়েছে। যুদ্ধ বাধলে নাগরিকদের প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে কী কী করণীয়, সেসবই ওই বার্তায় বলা হয়েছে।

১৯৭১ সালের পর কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রথমবার এ ধরনের মহড়ার নির্দেশ দিল। নির্দেশ কার্যকর করতে হবে প্রধানত সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোকে। কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা অনুযায়ী, দেশের ২৪৪ জেলায় এই মহড়া চালানো হবে। মহড়া দিতে হবে গ্রামীণ এলাকাগুলোতেও।

এই মহড়ায় মূলত দেখা হবে শত্রুদেশের বিমান হামলার সময় সতর্কতামূলক সাইরেন–ব্যবস্থা ঠিক আছে কি না, কিংবা রাতে হামলার আশঙ্কা রুখতে ‘ব্ল্যাক আউট’–ব্যবস্থা কার্যকর অবস্থায় রয়েছে কি না। বিমান হামলা থেকে বাঁচতে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় তৈরি বাংকারগুলো তৈরি রাখা হচ্ছে কি না ইত্যাদি।

বিমান হানা রুখতে ‘ব্ল্যাক আউট’ একটা কার্যকর ব্যবস্থা। শত্রুবিমানের আক্রমণের লক্ষ্য আড়াল করতে এলাকা নিষ্প্রদীপ রাখাই এ ব্যবস্থার উদ্দেশ্য, যাতে বিমানচালককে বিভ্রান্ত করা যায়। পাঞ্জাব সীমান্তের ফিরোজপুরে গত রোববার রাতে আচমকাই এই ‘ব্ল্যাক আউট’ মহড়া চালানো হয়। প্রস্তুতি হিসেবে সেতু, বিমানবন্দর, জাহাজবন্দর, তেলের ডিপো, বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা ঢেকে রাখার কর্মসূচিও নেওয়া হয়, যাতে আকাশ থেকে তা দৃশ্যমান না হয়। সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোকে এসব কাজ দ্রুত সেরে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মহড়ার আরও এক উদ্দেশ্য যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলায় বেসামরিক নাগরিকদের শিক্ষিত করে তোলা। রাজ্যে রাজ্যে গঠিত সিভিল ডিফেন্স এই দায়িত্ব পালন করে। স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে এনসিসি ক্যাডেটদেরও এই বিষয়ে প্রশিক্ষিত করা হয়। লক্ষ্য, বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা সম্পর্কে সজাগ ও সচকিত রাখা। এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে রাজ্য সরকারকে বলা হয়েছে। শত্রু হানায় হতাহত ব্যক্তিদের কত দ্রুত উদ্ধার করা যায়, সেটাও এই মহড়ার একটা অঙ্গ। সেই কাজে হেলিকপ্টারও ব্যবহার করা হয়।

পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে অতীতে সব সময় জম্মু–কাশ্মীর ও পাঞ্জাবের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় আগে থেকেই বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়। ১০ দিন ধরেই জম্মু–কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর অঞ্চলে তৈরি হওয়া বাংকারগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া বিশেষত পাঞ্জাবের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের কৃষকদের দ্রুত ফসল কাটার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুটি কাজই স্থানীয় মানুষ ও প্রশাসন যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে করছে। সীমান্তবর্তী এলাকার সড়ক মেরামতের দিকেও নজর দেওয়া হয়েছে। নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর খাদ্য ও পানীয় মজুতের দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।

ভারত ও পাকিস্তানের সংঘাত নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক শুরুর আগে গতকাল সোমবার রাতে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এক যুদ্ধবিরোধী বার্তায় বলেন, ভুল করেও যুদ্ধের পথে এগনো ঠিক নয়। যেকোনো সময় তা হাতের বাইরে চলে যেতে পারে। ভারত ও পাকিস্তান—দুই দেশের উদ্দেশে তিনি বলেন, কোনো ভুল নয়। সামরিক ব্যবস্থা সমাধানের উপায় নয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ