ভারত-পাকিস্তানের অত্যাধুনিক সমরসজ্জা সংঘাতের শঙ্কা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে
Published: 6th, May 2025 GMT
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ২০১৯ সালে মুখোমুখি সংঘাতের পর পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ দুটি উল্লেখযোগ্যভাবে সামরিক সক্ষমতা বাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক উত্তেজনার মধ্যে এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) সীমিত সংঘাত হয়েছে। তবে সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, বর্তমান পরিস্থিতি যেকোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয়ের দিকে চলে যেতে পারে।
গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের প্রায় সবাই পর্যটক। নয়াদিল্লির দাবি, এই হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তবে ইসলামাবাদ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে। এর পর থেকে উভয় দেশ পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে। উত্তেজনা বাড়ছে।
সামরিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, কোনো পক্ষই দেয়ালে পিঠ না ঠেকা পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা ভাববে না। তবে সীমিত সংঘাত অতর্কিতে বড় সংঘাতে রূপ নিতে পারে।ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হামলার সঙ্গে জড়িতদের ‘কল্পনাতীত’ শাস্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মোদি এরই মধ্যে দেশটির সামরিক বাহিনীকে ‘অভিযান পরিচালনার পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন, যেন তারা পেহেলগাম হামলার জবাব দিতে পারে।
পাকিস্তানের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ভারত তাঁদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভারত শিগগিরই পাকিস্তানে হামলা চালাতে পারে বলে তাঁদের হাতে ‘বিশ্বাসযোগ্য তথ্য’ রয়েছে। দেশটি নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর এলাকায় সামরিক মহড়া চালিয়েছে। গত শনিবারের পর গতকাল সোমবারও ক্ষেপণাস্ত্রের প্রশিক্ষণমূলক উৎক্ষেপণ করেছে পাকিস্তান। দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরসহ দেশটির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা বলেছেন, ভারত হামলা চালালে তাৎক্ষণিকভাবে শক্ত জবাব দেওয়া হবে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনীর ৪০ জন সদস্য নিহত হন। হামলার দায় স্বীকার করে পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ। হামলার পর ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলা চালিয়ে কথিত জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করার দাবি করে। পাকিস্তান পাল্টা বিমান হামলা চালায় এবং একটি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করে। দুই দিন ধরে টান টান উত্তেজনার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।
কাশ্মীরে ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার ঘটনার বর্ষপূর্তিতে ‘অপারেশন সুইফট রিটর্ট’–এর স্মরণে আয়োজিত বিমান প্রদর্শনী দেখছে মানুষ। করাচিতে, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পাকিস্তানের সঙ্গে কাশ্মীর সীমান্তে গোলাগুলির খবর, ভারতীয় সেনাবাহিনীর অস্বীকার
ভারতের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাশ্মীরের পুঞ্চ এলাকায় নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর গোলাগুলির খবর প্রচার করা হয়েছে। দাবি করা হচ্ছে, সীমান্তে গুলি ছুড়ে পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে।
তবে এ খবর অস্বীকার করে ভারতীয় সেনাবাহিনী গতকাল মঙ্গলবার বিবৃতি দিয়েছে। তারা বলেছে, নিয়ন্ত্রণরেখায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এলওসির মাধ্যমে কাশ্মীরকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভাগ করা হয়েছে।
এই বিবৃতির আগে হিন্দুস্তান টাইমস, পিটিআইসহ ভারতীয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে কর্মকর্তাদের বরাতে বলা হয়, ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের পুঞ্চ জেলার কৃষ্ণাঘাটি সেক্টরে পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জবাবে পাল্টা হামলা চালায় ভারতীয় সেনাবাহিনী। উভয় পক্ষের মধ্যে অন্তত ১৫ মিনিট ধরে গোলাগুলি চলে। তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
পরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কয়েকটি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুঞ্চ এলাকায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে জানানো যাচ্ছে যে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর কোনো যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয়ে জানতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স থেকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল, কিন্তু তারা এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
গত এপ্রিলে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে ২৬ ভারতীয় পর্যটককে গুলি করে হত্যার ঘটনার জেরে মে মাসে দুই প্রতিবেশী দেশ সংঘাতে জড়িয়েছিল। চার দিন ধরে চলা সংঘাতে উভয় পক্ষেই বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের ডাকে উভয় পক্ষ একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।
আরও পড়ুনভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ষষ্ঠ দিনের মতো গোলাগুলি৩০ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনকীভাবে ভারত–পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখা বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক সীমান্ত হয়ে উঠল১৯ মে ২০২৫