দেশে প্রাদেশিক সরকার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে নতুন করে বিভাগ ঘোষণা করার পক্ষে মত দিয়েছে দলটি।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এনসিপির সঙ্গে ‘বর্ধিত আলোচনায়’ বসে। আলোচনার বিরতিতে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার।

জেলা পরিষদ ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ বাতিলের বিপক্ষে এনসিপি মত দিয়েছে উল্লেখ করে সারোয়ার তুষার বলেন, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার বিষয়টিতে তাঁরা জোর দিয়েছেন। কমিশন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের ভোটে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনের কথা বলেছে, কিন্তু এনসিপি জনগণের সরাসরি ভোটে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনের বিধান করার কথা বলেছেন।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহারের বিপক্ষে এনসিপির অবস্থান জানিয়ে সারোয়ার তুষার বলেন, এর ফলে স্থানীয় পর্যায়ে অনেক সহিংসতা ও অনিয়ম সংঘটিত হয়। এই নিয়ম আওয়ামী ফ্যাসিবাদ তাদের স্বার্থে চালু করেছিল, যেটা সমাজে ভয়াবহ সাংস্কৃতিক বিপর্যয় ঘটিয়েছে। দলীয় প্রতীক না থাকলে সমাজের ভালো মানুষগুলো জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন।

নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে সেটা তদন্ত করার প্রস্তাব দেয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এনসিপি এই প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত জানায়। সারোয়ার তুষার বলেন, ‘আমরা মনে করি, সংসদীয় কমিটির কাছে এই ক্ষমতা দেওয়া হলে রাজনীতিকীকরণ হতে পারে; বরং নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে সেটি তদন্ত করা যেতে পারে।’

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে এনসিপি আগে অর্থ বিল এবং অনাস্থা ভোট ছাড়া অন্য যেকোনো প্রস্তাবে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতার পক্ষে মত দেয়। আজকের আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংবিধান সংশোধনীর ক্ষেত্রে এনসিপির অবস্থানকে পুনরায় বিবেচনা করার আহ্বান জানায়।

সারোয়ার তুষার বলেন, ‘আমরা কমিশনকে জানিয়েছি, সংবিধান সংশোধনীর ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতার পক্ষে আমরা এখনো অনড় রয়েছি। তবে এই অবস্থানের বিষয়ে আমরা পরবর্তী সময়ে আলোচনা করব।’

সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রধান হিসেবে বিরোধী দলের সদস্যকে রাখার প্রস্তাব দিয়েছে এনসিপি। সারোয়ার তুষার বলেন, সব মন্ত্রণালয় না হলেও জনপ্রশাসন, সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু দায়িত্বে বিরোধী দলের সদস্যদের রাখতে আলোচনা হয়েছে।

সংবিধান সংশোধনীর ক্ষেত্রে গণভোটের প্রসঙ্গে সারোয়ার তুষার বলেন, এনসিপি এই প্রস্তাবের পক্ষে। তবে রাষ্ট্রের ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট এবং জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়া সংবিধানের ছোট সংশোধনীর ক্ষেত্রে গণভোটের আয়োজন করার বাধ্যবাধকতা রাখার প্রয়োজন নেই। কোন ধারায় গণভোটের বাধ্যবাধকতা থাকবে, সেটাও সুনির্দিষ্ট হতে হবে।

জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের পক্ষে মত দেয় জাতীয় নাগরিক পার্টি। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঐকমত্য কমিশন সংসদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের সদস্যদের ভোটের কথা বলেছে। এনসিপি এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। সারোয়ার তুষার বলেন, ভোটারের আওতা আরও বাড়ানো জরুরি। সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি জেলা পরিষদ এবং স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদেরও ভোটার হিসেবে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।

এনসিপির পক্ষ থেকে বৈঠকে যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার ছাড়াও অংশ নেন দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, জাবেদ রাসিন ও আরমান হোসাইন। এর আগে সকালে বৈঠকের শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা তুলে দেন এনসিপির প্রতিনিধিরা।

সকালে শুভেচ্ছা বক্তব্যে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘সংস্কারের পথ উন্মুক্ত করতে এই আলোচনা কার্যকরী হবে বলে আমরা আশাবাদী।’

এনসিপির দেওয়া মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা গ্রহণ করার কথা জানিয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা সেই পথরেখা তৈরি করতে সহায়ক হবে। আশা করছি, এই পথরেখা ধরে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনাও এগিয়ে যাবে।’

ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে বৈঠকে অংশ নেয় কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো.

এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স র য় র ত ষ র বল ন স থ ন য় সরক র প রস ত ব র এনস প র র সদস য কর র প র প রস মত দ য়

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়ার বিষয়ে অধিকাংশ দল একমত: আলী রীয়াজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ গঠনের বিষয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। পাশাপাশি কোনো ব্যক্তি যেন দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারেন, সে বিষয়েও অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আজকের আলোচনা শেষে এ কথা বলেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, বৃহস্পতিবার সংবিধান ও রাষ্ট্রের মূলনীতি, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ও নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ নিয়ে আলোচনার কথা থাকলেও গতকাল রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা অসমাপ্ত থাকায় এ বিষয়ে আবার আলোচনা হয়।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোটার নির্ধারণের জন্য জাতীয় সংসদের ধরন নিয়ে প্রশ্ন থাকায় আজ এ বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে। অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যেহেতু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য সংসদের ধরন নির্ধারণ হওয়া জরুরি, তাই এ বিষয়ে আগে নির্ধারণ হতে হবে। এ প্রসঙ্গে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত যে সংসদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হতে পারে।’

আলোচনা হলেও বৃহস্পতিবার কোনো বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি উল্লেখ করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করতে চাই, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের পক্ষে মত দিয়েছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। কোনো ব্যক্তির দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হতে পারার বিধান রাখার কথা বলেছে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। তবে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হলে আরও আলোচনার প্রয়োজন আছে। আগামী সপ্তাহে অসমাপ্ত বিষয়গুলো নিয়ে আবার আলোচনা হবে।’

আলী রীয়াজ বলেন, ‘যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে না, সেগুলো আমরা জাতীয় সনদে স্বচ্ছতার সঙ্গে উল্লেখ করব। আমরা জানি, সব বিষয়ে ঐকমত্য হবে না। হলে ভালো হতো। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে ঐকমত্য গঠনে সর্বাত্মক সহযোগিতা রয়েছে।’

রাজনৈতিক দলগুলো ভিন্ন ভিন্ন মত দিলেও আলোচনা সৌহার্দ্যপূর্ণ হচ্ছে বলে জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতে কেউ দ্বিধান্বিত নয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এভাবে চলতে থাকলে কেয়ামত পর্যন্ত ঐক্যের সম্ভাবনা নেই : নুরুল হক নুর
  • ১০ বছরের বেশি কারও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পক্ষে নয় জামায়াত
  • রাজনৈতিক দলগুলোকে আরেকটু ছাড়ের জায়গায় আসার আহ্বান আলী রীয়াজের
  • মৌলিক বিষয়ে দলগুলোর দূরত্ব কমেনি
  • একক দলের সঙ্গে বসে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের চেষ্টা বিমাতাসুলভ আচরণ: এনসিপি
  • ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে মান–অভিমান ও সহমত–দ্বিমত
  • ভালো আলোচনা হচ্ছে কিন্তু ঐকমত‍্য হচ্ছে না: এবি পার্টি
  • কিছু দল অতীতের ত্রুটিপূর্ণ ক্ষমতাকাঠামোয় গিয়ে ‘ম্যানিপুলেট’ করার কথা ভাবছে: হাসনাত আবদুল্লাহ
  • ব‍্যাপক আলোচনা চললেও কোনো বিষয়েই ঐকমত‍্য হচ্ছে না: এবি পার্টি
  • দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়ার বিষয়ে অধিকাংশ দল একমত: আলী রীয়াজ