পর্তুগালের অনূর্ধ্ব–১৫ দলে ডাক পেলেন রোনালদোর ছেলে
Published: 6th, May 2025 GMT
কিছুদিন ধরে জাতীয় দল হিসেবে কোন দেশকে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ছেলে ক্রিস্টিয়ানো জুনিয়র বেছে নেবেন তা নিয়ে শোনা যাচ্ছিল নানা আলোচনা। বিভিন্ন কারণে পাঁচটি দেশে খেলার সুযোগ ছিল তার। তবে ১৪ বছর বয়সী রোনালদো পুত্র পিতৃভূমির হয়েই গড়তে যাচ্ছেন নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। প্রথমবারের মতো তাকে দলে ডেকেছে পর্তুগাল অনূর্ধ্ব-১৫ দল।
ক্রিস্টিয়ানো দস সান্তোস যিনি ক্রিস্টিয়ানো জুনিয়র নামেই পরিচিত বর্তমানে খেলছে সৌদি ক্লাব আল নাসরের বয়সের ভিত্তিক দলে। এর আগে বাবার সাবেক দুই ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং জুভেন্টাসের বয়সভিত্তিক দলেও খেলেছিল রোনালদোপুত্র।
পর্তুগালের বয়সভিত্তিক দলের ক্রিস্টিয়ানো জুনিয়র খেলবে ভ্লাটকো মারকোভিচ টুর্নামেন্টে। ক্রোয়েশিয়ায় এই টুর্নামেন্টটি অনুষ্ঠিত হবে ১৩ মে থেকে ১৮ মে পর্যন্ত। যেখানে পর্তুগালের যুব দল খেলবে জাপান, গ্রিস এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
সাম্প্রতিক সময়ে আল নাসরের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে পারফর্ম করে আলোচনায় এসেছিলেন ক্রিস্টিয়ানো জুনিয়র। কদিন আগে গোল করে বাবার মতো ‘সিউ’ উদ্যাপন করে হয়েছিলেন সংবাদের শিরোনামও।
আল নাসরের যুব দলে করা পারফরম্যান্সই হয়তো পর্তুগালের বয়সভিত্তিক দলে সুযোগ করে দিয়েছে তাকে। এখন বাবার পথ ধরে দারুণ কিছু করে পর্তুগাল জাতীয় দলে ক্রিস্টিয়ানো জুনিয়র সুযোগ করে নিতে পারে কি না সেটাই দেখার অপেক্ষা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ ত ত ক দল পর ত গ ল র
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাবিতে ‘হাসিনার পলায়নের’ বর্ষপূর্তিতে বিভিন্ন দলের কর্মসূচি
ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসনের অবসান এবং স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পলায়নের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে র্যালি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন ‘সাদা দল’ ও শাখা ছাত্রশিবির।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দুপুর পৌনে ১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে র্যালিটি শুরু করে সাদা দল। পরে রাজু ভাস্কর্য ঘুরে ভিসি চত্বরে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
এর আগে, জুলাই অভ্যুত্থান ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুর্ঘটনায় শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় ঢাবির কলা অনুষদের ডিন ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, “গত বছর এই দিনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পেটোয়া বাহিনী ও পুলিশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কারফিউ ভেঙে দাঁড়িয়েছিলাম। শহীদদের স্বপ্ন পূরণের অংশ হিসেবেই আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে। ঢাবি শিক্ষকরা অতীতের মত ভবিষ্যতেও এই অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। আশা করছি, অচিরেই একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। তারাই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি রুখে দেবে।”
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবিএম ওবাইদুল ইসলাম বলেন, “গত বছর ৫ আগস্ট দীর্ঘ ১৭ বছরের দুঃশাসনের পর শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণের আন্দোলনের মুখে পালাতে বাধ্য হয়েছিল। সেদিন কারফিউ উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে নতুন ইতিহাস রচনা করেছে। এর পেছনে রয়েছে জুলাই আন্দোলন ও গত ১৬ বছরের শহীদদের রক্ত, নিপীড়ন ও গুম-খুনের ইতিহাস। তাই বিজয়ের দিন হিসেবে উদযাপনের পাশপাশি স্মরণ করছি আন্দোলনের শহীদদের। আমাদের আনন্দের মাঝেই রয়েছে তাদের ত্যাগের ইতিহাস।”
তিনি বলেন, “৫ আগস্টের বিজয় ছিল অভ্যন্তরীণ এক ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে, যেখানে সরকার নিজ দেশের জনগণের ওপরই দমন চালিয়েছে। এই নিন্দনীয় দমননীতির দ্রুত বিচার আমরা দাবি করছি। বিচার বিলম্ব মানেই অন্যায়কে উৎসাহ দেওয়া, সমাজে অন্যায়কে স্থায়ী করে তোলা।”
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এই দিনটিকে আমরা শুধু বিজয় নয়, গণতন্ত্র ও জনগণের শক্তির প্রতীক হিসেবেও স্মরণ করি। যখনই বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়বে, তখনই আমরা সাধারণ ছাত্র-জনতার পাশে থাকব।”
ঢাবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “আমরা রাস্তায় নেমেছিলাম একটি বৈষম্যহীন ও ইনক্লুসিভ বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে। আশা করছি এখন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ পাবো। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের মালিকানা চলে গিয়েছিল অল্প কয়েকজন মানুষের হাতে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা চাই, ২০২৪ সালের আন্দোলনেও যেন একই ঘটনা পুনরাবৃত্তি না হয়।”
সাদা দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক আব্দুস সালাম বলেন, “গত ১৬-১৭ বছর ধরে দেশকে জিম্মি করে রেখেছিল স্বৈরাচার হাসিনা সরকার। এই সময়ের মধ্যে অসংখ্য জীবন ধ্বংস করেছে। বিশেষ করে গত বছরের জুলাই-আগস্টে শত শত মানুষকে হত্যা করেছে। হেলিকপ্টার থেকে শিশুদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। এই দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে মানুষ জীবন বাজি রেখে রাস্তায় নেমেছিল, শুধু বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা গড়ার জন্য।”
ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচারের বিষয়ে তিনি বলেন, “দেশের দু-এক জায়গায় বিচারের কিছু উদ্যোগ আছে। ঢাবিতে ফ্যাসিস্ট সরকারের পেটোয়া বাহিনী ও দোসর শিক্ষকদের এখন পর্যন্ত বিচারের আওতায় আনা হয়নি। অবিলম্বে যারা ফ্যাসিবাদীদের হাতকে শক্তিশালী করার কাজ করেছেন, তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। যারা দেশের বাইরে পালিয়ে আছেন, তাদের ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনতে হবে।”
এদিকে, ‘ফতহে গণভবন সাইকেল র্যালি’ শীর্ষক গণভবন অভিমুখে সাইকেল র্যালি করেছে ঢাবি শাখা ছাত্রশিবির। মঙ্গলবার সকাল ৬টায় টিএসসি থেকে শুরু করে শাহবাগ,কাওরান বাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণি হয়ে গণভবনের সামনের সড়কে পৌঁছায়। সেখান থেকে র্যালিটি আবার রওনা দিয়ে আসাদগেট, ধানমন্ডি, সাইন্সল্যাব, নীলক্ষেত হয়ে টিএসসিতে এসে শেষ হয়। পুরো পথজুড়ে সাইকেল শোভাযাত্রায় সুশৃঙ্খল, প্রাণবন্ত এবং ব্যতিক্রমী স্লোগান দেখা যায়, যা গণতন্ত্র ও মুক্তির আহ্বানকে তুলে ধরে।
র্যালিতে উপস্থিত ছিলেন, শিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম, দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ, প্রকাশনা সম্পাদক সাদিক কায়েম, ছাত্র অধিকার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম, ঢাবি শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ, সেক্রেটারি মহিউদ্দিন খানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী।
র্যালির শুরুতে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে বিশেষ টিশার্ট বিতরণ করা হয়, যাতে লেখা ছিল-‘৩৬ শে জুলাই, আমরা থামব না’। বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকাও ছিল সবার সাইকেলে সাইকেলে।
র্যালি শেষে টিএসসিতে উপস্থিত সবাইকে প্রাতঃরাশ সরবরাহ করা হয় এবং সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাপনী বক্তব্যে ছাত্রশিবিরের নেতারা বাংলাদেশের ছাত্রসমাজকে অধিকার সচেতন, নৈতিক এবং গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের সাহসী সৈনিক হিসেবে গড়ে ওঠার আহ্বান জানান।
এ সময় নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, “আজ থেকে ১ বছর আগে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বিজয়ী হয়েছিলেন দেশের আপামর জনগণ। আজকের র্যালির মাধ্যমে আমরা সেই বিজয়ের চেতনা ও অঙ্গীকারকে নতুনভাবে ধারণ করছি। ছাত্রসমাজের শক্তিই ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের মূল চালিকাশক্তি।”
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী