দেশে দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষ ২৪ লাখ
Published: 14th, May 2025 GMT
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা টানা চার বছর ধরে বেড়েছে। দেশে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৪ লাখ। দুর্যোগে বাস্তুচ্যুতির বৈশ্বিক তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। মূলত বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এসব বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল মঙ্গলবার নরওয়েভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার (আইডিএমসি) প্রকাশিত বৈশ্বিক অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত প্রতিবেদন-২০২৫-এ এসব তথ্য উঠে এসেছে। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২৪ সালে দেশে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ২৪ লাখ। এর আগের বছর (২০২৩ সালে) দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৮ লাখ। ওই বছরও বৈশ্বিক তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পঞ্চম।
প্রতিবেদন অনুযায়ী এক বছরের ব্যবধানে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ বেড়ে ২৪ লাখ হয়েছে। মোট বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যায় এটা দেশে তৃতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৯ সালে বন্যায় এবং ২০২০ সালে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে এর চেয়ে বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত ছিলেন।
দুর্যোগ ছাড়াও দেশে গত বছর সংঘাত ও সহিংসতার কারণে ২ হাজার ৮০০ জন বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বলে আইডিএমসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইডিএমসি বলেছে, গত বছরের বর্ষা মৌসুমে সৃষ্ট বন্যায় ১৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বিশেষ করে সিলেট বিভাগে শুধু জুন মাসেই ৭ লাখ ২৩ হাজার জনকে ঘরবাড়ি ছাড়তে হয়। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ভূমির ওপরের অংশের পানি শোষণ করার মতো পর্যাপ্ত অবস্থা না থাকা এবং নালা ও খালে পানিপ্রবাহে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বন্যার তীব্রতা বাড়িয়েছে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণেও বন্যার তীব্রতা বেড়েছিল। একই সময়ে বর্ষা শুরু হলে কয়েকটি নদী দিয়ে একসঙ্গে এত পানি নামার মতো পরিস্থিতি ছিল না।
দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি নিয়ে কাজ করছেন সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রধান নির্বাহী মো.
আইডিএমসি এবার দশম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে বিশ্বে ৮ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যা নজিরবিহীন। এক দশক আগে প্রথম প্রকাশিত বৈশ্বিক অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা সংখ্যার চেয়ে এটি প্রায় দ্বিগুণ। এর মধ্যে ৭ কোটি ৩৫ লাখ মানুষ সংঘাত ও সহিংসতায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যা আগের বছরের (২০২৩) চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। আর দুর্যোগের কারণে ৯৮ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যা আগের বছরের চেয়ে (২০২৩) ২৯ শতাংশ বেশি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ১ কোটি ১০ লাখের মতো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ফিলিপাইনে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৮৯ লাখ ৯৬ হাজার জন। ভারতে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৫৪ লাখ ৩১ হাজার জন বাস্তুচ্যুত হন। চতুর্থ স্থানে থাকা চীনে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৩৯ লাখ ২৬ হাজার জন।
গত বছর সংঘাত-সহিংসতার কারণে সবচেয়ে বেশি ৯১ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন সুদানে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩২ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ফিলিস্তিনে। ইসরায়েলি হামলায় শুধু গাজা উপত্যকার প্রায় ২০ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। অর্থাৎ গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় পুরোটাই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় সর্বোচ্চ ১১ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লেবাননে।
আইডিএমসির প্রধান আলেক্সান্দ্রা বিলাক এক বিবৃতিতে বলেন, সংঘাত, দারিদ্র্য ও জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রভাবকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন অসহায় মানুষ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল খ ম ন ষ ব স ত চ য ত হয় ছ ন হ জ র জন ২৪ ল খ র বছর বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
রিজার্ভ ৩১.৩১ বিলিয়ন ডলার
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ আরও বেড়ে ৩১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারে ঠেকেছে। গত ২৮ মাসের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। সর্বশেষ ২০২৩ সালের মার্চের শুরুতে রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছিল। এরপর ওই মাসের ১৫ তারিখ সর্বোচ্চ ৩১ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার হয়। এছাড়া সব সময়ই এখনকার চেয়ে রিজার্ভ কম ছিল বলে জানা গেছে।
গ্রস রিজার্ভ বৃদ্ধির পাশাপাশি আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ বেড়ে ২৬ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি মেনে হিসাব প্রকাশের পর থেকে যা সর্বোচ্চ। ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে গ্রস রিজার্ভের পাশাপাশি বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
২০২৩ সালের জুনে আইএমএফের হিসাব পদ্ধতিতে রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। আর গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে প্রথমবারের মতো ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। সেখান থেকে ধারাবাহিকভাবে কমে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে গত জুলাই শেষে নেমে যায় ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে এখন বাড়ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান. রিজার্ভ বৃদ্ধির মূল কারণ অর্থ পাচারে কঠোর নিয়ন্ত্রণ। যে কারণে চলতি অর্থবছরের দুই দিন বাকি থাকতেই প্রথমবারের মতো রেমিট্যান্স ৩০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়েছে। আবার আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন উৎস থেকে সরকার ৫ বিলিয়ন ডলারের মতো ঋণ পেয়েছে।