প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা টানা চার বছর ধরে বেড়েছে। দেশে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৪ লাখ। দুর্যোগে বাস্তুচ্যুতির বৈশ্বিক তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। মূলত বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এসব বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে।

গতকাল মঙ্গলবার নরওয়েভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার (আইডিএমসি) প্রকাশিত বৈশ্বিক অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত প্রতিবেদন-২০২৫-এ এসব তথ্য উঠে এসেছে। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২৪ সালে দেশে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ২৪ লাখ। এর আগের বছর (২০২৩ সালে) দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৮ লাখ। ওই বছরও বৈশ্বিক তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পঞ্চম।

প্রতিবেদন অনুযায়ী এক বছরের ব্যবধানে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ বেড়ে ২৪ লাখ হয়েছে। মোট বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যায় এটা দেশে তৃতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৯ সালে বন্যায় এবং ২০২০ সালে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে এর চেয়ে বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত ছিলেন।

দুর্যোগ ছাড়াও দেশে গত বছর সংঘাত ও সহিংসতার কারণে ২ হাজার ৮০০ জন বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বলে আইডিএমসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

আইডিএমসি বলেছে, গত বছরের বর্ষা মৌসুমে সৃষ্ট বন্যায় ১৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বিশেষ করে সিলেট বিভাগে শুধু জুন মাসেই ৭ লাখ ২৩ হাজার জনকে ঘরবাড়ি ছাড়তে হয়। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ভূমির ওপরের অংশের পানি শোষণ করার মতো পর্যাপ্ত অবস্থা না থাকা এবং নালা ও খালে পানিপ্রবাহে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বন্যার তীব্রতা বাড়িয়েছে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণেও বন্যার তীব্রতা বেড়েছিল। একই সময়ে বর্ষা শুরু হলে কয়েকটি নদী দিয়ে একসঙ্গে এত পানি নামার মতো পরিস্থিতি ছিল না।

দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি নিয়ে কাজ করছেন সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রধান নির্বাহী মো.

শামসুদ্দোহা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বাস্তুচ্যুতি হচ্ছে মূলত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের কারণে। যখন জলবায়ুর সৃষ্ট দুর্যোগের কারণে বাস্তুচ্যুতি হচ্ছে, তখন এটা মোকাবিলায় একটা দিকনির্দেশনামূলক নীতিমালা রয়েছে। তিনি বলেন, সামনে এমন দুর্যোগ ও বাস্তুচ্যুতি আরও বাড়বে, শুধু রাষ্ট্র এটা মোকাবিলা করতে পারবে কি না, সেটা বড় প্রশ্ন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তা দরকার। সেটা জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মাধ্যমে হওয়া উচিত।

আইডিএমসি এবার দশম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে বিশ্বে ৮ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যা নজিরবিহীন। এক দশক আগে প্রথম প্রকাশিত বৈশ্বিক অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা সংখ্যার চেয়ে এটি প্রায় দ্বিগুণ। এর মধ্যে ৭ কোটি ৩৫ লাখ মানুষ সংঘাত ও সহিংসতায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যা আগের বছরের (২০২৩) চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। আর দুর্যোগের কারণে ৯৮ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যা আগের বছরের চেয়ে (২০২৩) ২৯ শতাংশ বেশি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ১ কোটি ১০ লাখের মতো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ফিলিপাইনে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৮৯ লাখ ৯৬ হাজার জন। ভারতে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৫৪ লাখ ৩১ হাজার জন বাস্তুচ্যুত হন। চতুর্থ স্থানে থাকা চীনে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৩৯ লাখ ২৬ হাজার জন।

গত বছর সংঘাত-সহিংসতার কারণে সবচেয়ে বেশি ৯১ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন সুদানে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩২ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ফিলিস্তিনে। ইসরায়েলি হামলায় শুধু গাজা উপত্যকার প্রায় ২০ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। অর্থাৎ গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় পুরোটাই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় সর্বোচ্চ ১১ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লেবাননে।

আইডিএমসির প্রধান আলেক্সান্দ্রা বিলাক এক বিবৃতিতে বলেন, সংঘাত, দারিদ্র্য ও জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রভাবকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন অসহায় মানুষ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল খ ম ন ষ ব স ত চ য ত হয় ছ ন হ জ র জন ২৪ ল খ র বছর বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

গণ–অভ্যুত্থানের পরে আনোয়ার ইব্রাহিমের বাংলাদেশ সফর আমাদের প্রেরণা জুগিয়েছিল: অধ্যাপক ইউনূস

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের গত বছরের ঢাকা সফর সদ্য রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে উত্তরণের সময়ে বাংলাদেশকে এক বড় ধরনের মানসিক প্রেরণা জুগিয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

মালয়েশিয়া সফরকালে গতকাল বুধবার দেশটির সরকারি বার্তা সংস্থা বারনামাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আনোয়ার ইব্রাহিমের এই সফর বাংলাদেশের কঠিন সময়ে জাতির মধ্যে আশার সঞ্চার করেছিল।’

বারনামা আজ সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করে। বারনামার প্রধান সম্পাদক আরুল রাজু দুরার রাজের নেতৃত্বে সংস্থাটির একদল সাংবাদিক এই সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন।

২০২৪ সালের ৮ আগস্ট থেকে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ইউনূস সাক্ষাৎকারে ছাত্র–জনতার নেতৃত্বে কীভাবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয় এবং স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন, তা স্মরণ করেন। এ সময় বাংলাদেশ যে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়েছিল, তা তুলে ধরেন তিনি।

এই পরিস্থিতিকে ‘ম্যাগনিচিউড ৯ ভূমিকম্পে আঘাত হানা’ অবস্থার সঙ্গে তুলনা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সবকিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, ভীষণ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি, কিছুই চলছিল না—শুধু ক্ষোভ ফুঁসে উঠছিল।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের এমন এক কঠিন সময়ে দেশ চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, এটা ছিল অত্যন্ত কঠিন কাজ। শুধু বিশৃঙ্খলা দূর করাই নয়, সবকিছু নতুন করে গড়ে তুলতে হয়েছে। আমরা তখন পথ খুঁজছিলাম, কীভাবে এগোব—এমন সময়ে সুখবর এল, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশে সফরে আসছেন।’

সাক্ষাৎকারে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূস আনোয়ার ইব্রাহিমের সেই সফর নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন। আনোয়ার ইব্রাহিম ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ সফর করেন। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার দেশ পুনর্গঠনের দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র দুই মাসের মাথায় তিনিই প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি নেতা হিসেবে বাংলাদেশ সফর করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘তিনি আমাদের আশা দিয়েছিলেন। তাঁর সফর জনগণের মধ্যে বিপুল উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করেছিল। মালয়েশিয়া বাংলাদেশের মানুষের কাছে খুব পরিচিত একটি দেশ, কারণ এখানে বহু বাংলাদেশি বসবাস করেন এবং তাঁদের পরিবারও এখানে রয়েছে।’

অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, এটি কোনো অজানা-অচেনা দেশ নয়। তাই মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এসে বললেন, ‘হ্যাঁ, আমরা তোমাদের পাশে আছি—এটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য অনেক অর্থবহ ছিল। তাঁর উপস্থিতি খুবই উৎসাহব্যঞ্জক ও অনুপ্রেরণাদায়ক ছিল।’

৮৫ বছর বয়সী অধ্যাপক ইউনূস একজন অর্থনীতিবিদ ও সামাজিক উদ্যোক্তা। তিনি ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশে দরিদ্র বিশেষত নারীদের জন্য জামানতবিহীন ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের লক্ষ্যে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন।

মালয়েশিয়া বাংলাদেশের বাইরে প্রথম দেশ হিসেবে আমানাহ ইখতিয়ার মালয়েশিয়া প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক মডেল গ্রহণ করে।

অধ্যাপক ইউনূস ১১ থেকে ১৩ আগস্ট মালয়েশিয়ায় তিন দিনের সরকারি সফর করেন। এ সময় তিনি মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি বিশেষ করে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শ্রম, শিক্ষা, পর্যটন ও প্রতিরক্ষা খাত এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করতে আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে বৈঠক করেন।

তিনি দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে দেশটির বিভিন্ন খাতের নেতাদের এবং বড় বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমি বলতে পারি, আমাদের সফরটি দারুণ ও অত্যন্ত সফল হয়েছে। আমরা এই সফর নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট। সবাই তাঁদের সময় নিয়ে খুব উদার ছিলেন। আমরা যেসব কর্মকর্তা, নেতা ও ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম—সবাই এগিয়ে এসেছেন।’

অধ্যাপক ইউনূস আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, এই সফর দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করবে এবং পারস্পরিক উপকারী ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা সম্প্রসারিত করবে, যা ১৯৭২ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘এটি অবশ্যই আরও শক্তিশালী হবে।’

দক্ষিণ এশিয়ায় মালয়েশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার ও রপ্তানি গন্তব্য বাংলাদেশ। এর প্রধান রপ্তানি পণ্য হলো পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য, পাম তেল ও রাসায়নিক দ্রব্য, আর আমদানি পণ্য হলো টেক্সটাইল, জুতা, পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য ও প্রস্তুত পণ্য।

২০২৪ সালে মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ বাণিজ্য ৫ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন রিঙ্গিত (২ দশমিক ৯২) বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে হামলা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা
  • গণ–অভ্যুত্থানের পরে আনোয়ার ইব্রাহিমের বাংলাদেশ সফর আমাদের প্রেরণা জুগিয়েছিল: অধ্যাপক ইউনূস
  • র‍্যাগিংয়ের অভিযোগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কার
  • কুবিতে র‍্যাগিং: ২ শিক্ষার্থী বহিষ্কারসহ বিভাগীয় প্রধান ও ছাত্র উ
  • খনিজ ও তেল–গ্যাস অনুসন্ধানে পাকিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে যুক্তরাষ্ট্র
  • নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রকল্পে অর্থায়ন রয়েছে প্রাইম ব্যাংকের
  • আবারো গ্রেপ্তার টিকটকার প্রিন্স মামুন
  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়াল
  • নেতানিয়াহু পথ হারিয়ে ফেলেছেন: নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী
  • ভোট পর্যবেক্ষণ করতে ৩১৮ সংস্থার আবেদন