৮ বছর পর গ্রামের বাড়িতে ড. ইউনূস, পাড়া-প্রতিবেশীদের শোনালেন শ্লোক
Published: 14th, May 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমাবর্তনে অংশ নিতে চট্টগ্রামের হাটহাজারী যান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামে তাঁর বাড়ি। বুধবার সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে গ্রামের বাড়িতে যান প্রধান উপদেষ্টা। পরে জন্মভিটা ঘুরে দেখেন। সরকারপ্রধানকে কাছে পেয়ে স্বজনরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। তাদের কাছে অতীতের স্মৃতিচারণ করেন তিনি।
আগে প্রায় প্রতিবছর গ্রামের বাড়ি যেতেন ড.
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমার ছোটবেলার সব স্মৃতি এই গ্রামে। ছেলেমেয়েরা এখন বড় হয়ে গেছে; তাদের কাউকে আর চিনি না। অনেকে আছে; অনেক দিন তাদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ হয় না।’ এ সময় আঞ্চলিক ভাষায় তিনি বলেন, ছোটবেলায় আমরা ছড়ার মতো বলতাম– ‘আবদুর রশীদ ঠেন্ডলের ঠাট/ নজু মিয়া হাট/ দুলা মিয়ার দাদার বাড়ি/ শোলক মিয়ার মোটরগাড়ি’।
তিনি বলেন, সে সময় আমাদের দাদারা মোটরগাড়ি নিয়ে বাড়ি আসতেন– এ কথা এখন চিন্তা করতেও ভিন্ন অনুভূতি কাজ করে! দেশে তো তখন মোটরগাড়ি কেউ চিনতও না। এখন সেসব কথা মনে পড়ছে। একের পর এক পরিবর্তন হচ্ছে। পরে শুনলাম– ‘নজু মিয়া হাট বলে শ’র অই গেইয়ে। শ’র বলে বিলেত অই গেইয়ে।’ এখন তো নজু মিয়া হাট শহর হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। আপনাদের শহর মনে হচ্ছে, আরও হবে।
গ্রামবাসীর উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে আপনাদের সবাইকে দেখে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন সভায় এসেছিলাম। তাদের বললাম, বাড়ির কাছে এসেছি; কোনো রকমে বাড়ির দিকে নিয়ে যেতে পার কিনা দেখ? এখন তো আমার নড়াচড়া করা মুশকিল, অনেক আয়োজন লাগে। সবার সঙ্গে দেখা হলো। আশা করি, ভবিষ্যতে আরও আসা-যাওয়া হবে। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন।’
ড. ইউনূস ১৯৪০ সালের ২৮ জুন হাটহাজারীর শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামের নজু মিয়া সওদাগর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। সাত ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। জন্মভিটা বাথুয়া হলেও ড. ইউনূসের পরিবারের সদস্যরা অর্ধশতাব্দী ধরে নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন নিরিবিলি নামক একটি ভবনে বসবাস করছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউন স
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে অতিবর্ষণে ভেসে গেছে ১৩৪ কোটি টাকার মাছ
পোনা উৎপাদন ও মাছ চাষে দেশের প্রথম স্থানে রয়েছে যশোরের অবস্থান। জেলাটিতে অতিবর্ষণে এবার মৎস্য খাতে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। টানা ভারি বর্ষণে মাছের ঘের, পুকুর ও বিল তলিয়ে এ ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা মৎস্য অফিস।
মাছ চাষিদের ভাষ্য, গত ৪ দশকের মধ্যে এবার ক্ষতির রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এর ফলে মৎস্য খাতে চাহিদার তুলনায় যশোরে উৎপাদন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিপুল পরিমাণ এই অর্থনৈতিক ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকারের সহযোগিতা দাবি করেছেন তারা।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার আট উপজেলায় ৬ হাজার ২১৯টি মৎস্য খামার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩ হাজার ১২৭টি, অভয়নগরে ৩৪০টি, ঝিকরগাছায় ৩৬০টি, মণিরামপুরে ৫৪০টি, কেশবপুরে ২৬০টি, শার্শায় ১ হাজার ৩২টি, চৌগাছা ও বাঘারপাড়ায় ২৮০টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরো পড়ুন:
স্থগিত হওয়া জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ শুরু ১৮ আগস্ট
মাছ ছিনতাইয়ের মামলায় সাবেক এমপির ছেলে কারাগারে
ক্ষতিগ্রস্ত চাষি রয়েছেন ৫ হাজার ৪০৮ জন। এর মধ্যে সদরে ২ হাজার ৮৯৩ জন, অভয়নগরে ৩১৫ জন, ঝিকরগাছায় ৩৬০ জন, মণিরামপুরে ৫১০ জন, কেশবপুরে ১৯০ জন, শার্শায় ৭৬০ জন, চৌগাছায় ১৬০ জন ও বাঘারপাড়ায় ২২০ জন। ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ৪ হাজার ৭৮১ হেক্টর।
ভারি বর্ষণে পুকুর, ঘের ও বিল তলিয়ে ৫ হাজার ৩৪১ টন মাছ ও ৮৩০ লাখ পোনা ভেসে গেছে। ফলে মাছে ১০৪ কোটি ৮ লাখ ও পোনায় ১৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকার।
বিগত ৪৭ বছরে জেলায় মৎস্য খাতে এমন ক্ষতি কখনো হয়নি বলে জানিয়েছেন ফিরোজ মৎস্য হ্যাচারির সত্ত্বাধিকারী ফিরোজ খান। তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে পর এই প্রথম এমন ভারি বর্ষণের মুখোমুখি হতে হয়েছে কৃষকদের। ফলে ক্ষতির পরিমাণ আমাদের ধারণার বাইরে চলে গেছে। যদি কয়েক বছর এভাবেই চলতে থাকে, তাহলে চাষিরা আর মাছ চাষ করবে না।”
তিনি আরো বলেন, “কৃষিতে সরকার প্রচুর পরিমাণ প্রণোদনা দিলেও মৎস্যখাতে সরকারের কোনো নজর নেই। অথচ আমরাই সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।”
যশোর জেলা মৎস্য চাষি সমিতির সভাপতি জাহিদুর গোলদার বলেন, “একদিকে খাবারের দাম বেশি, অন্যদিকে অতিবৃষ্টি ও অতিরিক্ত খরা। সবমিলিয়ে বিগত ৮ থেকে ১০ বছর চাষিরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।”
তিনি বলেন, “মাছের খাবারের দাম বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। আবার কৃষি থেকে আমাদের শিল্পখাতে উন্নিত করে বিদ্যুৎ বিলের ভার চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। একসময় কৃষি হিসেবে এই খাতে বিদ্যুৎ ছিলো ২ টাকা ৪৫ পয়সা রেট। এখন আমাদের বিল দিতে হয় ১৫ থেকে ২০ টাকা রেটে। এ বছর কৃষকরা যে পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা পুষিয়ে উঠতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
জেলা মৎস্য অফিসার সরকার মুহাম্মদ রফিকুল আলম জানিয়েছেন, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর রেকর্ড পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। ফলে কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে আমরা আবেদন করেছি। তবে এখনো আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। তবে বিদ্যুতের রেট কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
যশোর জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যশোর জেলায় মোট ২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়েছিল। এর বিপরীতে জেলার নিজস্ব চাহিদা ছিল প্রায় ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। ফলে নিজেদের চাহিদা মিটিয়েও জেলায় ১ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি মাছ উদ্বৃত্ত ছিল, যা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হয়েছিল।
ঢাকা/প্রিয়ব্রত/মেহেদী