জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারার বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া ছবি, ভিডিও, ফটোকার্ড তৈরি করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এর নেপথ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কর্মী–সর্মথকদের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেয়েছে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাব। চলতি বছরের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ৬২টি পোস্ট বিশ্লেষণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি পোস্ট আওয়ামী লীগের কর্মী–সমর্থকদের ফেসবুক প্রোফাইল ও পেজ থেকে করা হয়েছে।

ডিসিমিসল্যাব বলছে, সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ৬২টি পোস্টের ভুয়া ছবি, মূলধারার গণমাধ্যমের আদলে বানানো বিভ্রান্তিকর ফটোকার্ড এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–নির্মিত ভিডিও ও অডিও ব্যবহার করে তাসনিম জারাকে টার্গেট করা হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভাষা ছিল আক্রমণাত্মক, অবমাননাকর ও যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ, যা ফেসবুকের নীতিমালার সরাসরি লঙ্ঘন। কিছু পোস্টে এমনকি জারার ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করা হয়েছে যৌনবাহিত রোগের ওষুধের ভুয়া বিজ্ঞাপনে।

পোস্টগুলো মোট ২৯ হাজার ৬৯৩ বার শেয়ার হয়েছে এবং ৭৪ লাখ ৩২ হাজার ৯০০ বার দেখা হয়েছে। এগুলোতে মোট ৪ লাখ ৭৮ হাজার ৬৩৪টি প্রতিক্রিয়া এবং ৩৪ হাজার ৯৫৭টি মন্তব্য এসেছে। যার বেশির ভাগই ছিল অবমাননাকর ও যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ।

ডিসমিসল্যাব অনুসন্ধান করে দেখেছে, পোস্টকারীদের মধ্যে তাসনীম জারার বিকৃত ছবি সবচেয়ে বেশি শেয়ার করেছেন মো.

সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। চলতি বছরের ২ মে থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত তিনি অন্তত ২০টি ছবি শেয়ার করেন, যার মধ্যে ১৮টিই বিকৃত। বাকি দুটি আসল ছবি হলেও সেগুলো ব্যবহার করা হয়েছে জারার বিরুদ্ধে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর জন্য। ফেসবুক প্রোফাইলের বায়োতে (পরিচয়) সাইফুল নিজেকে বর্ণনা করেছেন ‘জয় বাংলার সৈনিক’ হিসেবে, আর কভার ফটোতে রেখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি।

ডিসমিসল্যাবের অনুসন্ধান থেকে আরও জানা গেছে, অন্যান্য যেসব ফেসবুক পেজ ও প্রোফাইল থেকে তাসনীম জারার বিকৃত কনটেন্ট ছড়ানো হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, আওয়ামী লীগ ২৩, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, বাংলাদেশ আওয়ামী মুজিবাবাদী লীগ বা স্বঘোষিত ‘মুজিব সৈনিক’। এরমধ্যে একটি হলো ব্যঙ্গাত্মক পেজ, তিনটি পেজ নিজেদের সংবাদমাধ্যম বলে দাবি করেছে এবং ১৪টি পেইজ ব্যবসায়িক বিজ্ঞাপন ছড়াচ্ছিল। বাকি দুটি অ্যাকাউন্টের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা তাদের নাম বা প্রোফাইল থেকে বোঝা যায়নি। অ্যাকাউন্টগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনোটি খোলা হয়েছিল ২০০৯ সালের ১৯ জুলাই। আর সবচেয়ে নতুনটি তৈরি হয়েছে চলতি বছরের ২৮ আগস্ট।

ডিসমিসল্যাবের অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, মোট ৬২টি পেজ ও প্রোফাইলের মধ্যে ৫৭টি পরিচালনা করছিলেন ১৩৩ জন অ্যাডমিন। যাদের মধ্যে ১০২ জনই বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন। এছাড়া মালয়েশিয়ায় রয়েছে ২২ জন, যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবে ৩ জন করে ও ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পর্তুগালে ১ জন করে।

এ বিষয়ে তাসনিম জারা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে কীভাবে হয়রানি করা হচ্ছে তা এই রিপোর্টে উঠে এসেছে। তবে এ অভিজ্ঞতা শুধু আমার নয়, রাজনীতিতে সম্পৃক্ত প্রায় সব নারীই এর মুখোমুখি হন। এটা রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ কম থাকার প্রধান একটি কারণ।’

ফেসবুকে কোনো ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করে ভুয়া বিজ্ঞাপন চালানো এই প্ল্যাটফর্মের নিজস্ব নীতিমালারও লঙ্ঘন উল্লেখ করে তাসনিম জারা বলেন, ‘কিন্তু ফেসবুক এখানে দায় এড়িয়ে চলে, কোনো পদক্ষেপ নেয় না। আমাদের সরকারের উচিত এই বিষয়ে টেক কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনা।’

নারীর বিরুদ্ধে অনলাইন সহিংসতা বন্ধে দলমত–নির্বিশেষে একটি সাধারণ আচরণবিধি এবং দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত করার পদ্ধতি বের করার বিষয়ে ঐকমত্য গড়ে তোলার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত সন ম জ র র ব যবহ র কর ফ সব ক র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির

ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম পর্বত ‘আমা দাবলাম’ জয় করছেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির (২৭)। গত ৪ নভেম্বর নেপাল সময় দুপর ১টার দিকে ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার এই পর্বতের চূড়া স্পর্শ করেন তিনি। 

পর্বতারোহণ বিষয়ক অর্গানাইজেশন রোপ ফোরের পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে এই অভিযানটি পরিচালিত হয়। তার এই অভিযানে সঙ্গী হিসাবে ছিলেন রোপ ফোরের আরেকজন তরুণ পর্বতারোহী আবরারুল আমিন অর্ণব।

আরো পড়ুন:

রঙ হারাচ্ছে অদম্য মেধাবীর ভবিষ্যতের স্বপ্ন

উপজেলায় এইচএসসিতে একমাত্র জিপিএ-৫ পেলেন অনুরাগ

আমা দাবলাম খাড়া বরফ দেয়াল, গভীর ক্রেভাস, ঝুলন্ত বরফ খণ্ড এবং কঠিন আবহাওয়ার জন্য পৃথিবীর অন্যতম চ্যালেঞ্জিং পর্বত হিসেবে পরিচিত। তৌকিরের এই অভিযানটি ছিল বাংলাদেশি পর্বতারোহণ ইতিহাসে এক গৌরবময় সংযোজন।

চূড়ায় পৌঁছার প্রতিক্রিয়ায় তৌকির বলেন, “আমা দাবলাম আমার কাছে শুধু একটা পর্বত নয়, এটা ছিল নিজের সীমা পরীক্ষা করার যাত্রা। পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এই পর্বতের চূড়ায় দাঁড়িয়ে যখন লাল-সবুজ পতাকাটা তুলে ধরলাম, মনে হলো এটি শুধু আমার সফলতা নয়, এটি বাংলাদেশের সব তরুণের স্বপ্নের স্পন্দন।”

তিনি বলেন, “আমার এই অভিযানটা ছিল পৃথিবীর সব বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য, যাদের জীবনটা কেটে যায় অন্যের ওপর ডিপেন্ড (নির্ভর) করে এবং চার দেয়ালের আলোতে পৃথিবী দেখে। আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে আসা সব প্রাণী শক্তিশালী। আসুন, ডিপেন্ডেবল এই মানুষগুলোর ওপর আরো বিনয়ী হই, ভালোবাসা এবং সাহায্যে তৈরি করি তাদের নতুন পৃথিবী।”

যেভাবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
গত ১২ অক্টোবর দুঃসাহসিক এই অভিযানের জন্য দেশ ছাড়েন তৌকির। এরপর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে শুরু হয় তার মূল অভিযান। হিমালয়ের পাহাড়ি বন্ধুর পথ ধরে ট্রেকিং করে তিনি বেস ক্যাম্পে পৌঁছান ২২ অক্টোবর। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে তৌকির শুরু করেন উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ায় কৌশল। যা এক্লিমাটাইজ রোটেশন নামে পরিচিত। 

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের ২৯ অক্টোবর সামিটের কথা থাকলেও ২৭ অক্টোবর থেকে হিমালয়ের শুরু হয় তীব্র তুষার পাত। এই তুষার পাতের মধ্যেই তৌকির অবস্থান করেন আমা দাবলাম ক্যাম্প-১ এ। যার উচ্চতা প্রায় ১৯ হাজার ফিট। ২৮ অক্টোবর আবহাওয়া আরো খারাপ হলে তাদের শেরপা লিডার সিদ্ধান্ত নেন বেস ক্যাম্পে ফিরে যাবার। তীব্র এই তুষার ঝড়ের মধ্যে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে তাদের দল বেস ক্যাম্পে পৌঁছায়। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে শুরু হয় নতুন দুশ্চিন্তার কারণ।

৬৮১২ মিটার উচ্চতার আমা দাবলাম পর্বত

তুষার পাতের কারণে ফিক্সড রোপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবহাওয়া ভালো হতে শুরু করলেও নতুন রুট ওপেন না করা পর্যন্ত সামিট পুশ সম্ভব হচ্ছিল না। এভাবেই কেটে যায় পাঁচদিন। তরপর সুখবর আসে রুট ওপেন হবার। নভেম্বরের ২ তারিখ শুরু হয় আবার সামিট বিট। এইদিনে তৌকির পৌঁছে যান ১৯ হাজার ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-১ এ। এরপর ৩ তারিখ ইয়োলো টাওয়ার খ্যাত ১৯ হাজার ৬৮৫ ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-২ এ পৌঁছান। বিশ্রাম নিয়ে শুরু করেন সামিট পুশ। তীব্র বাতাস, ফিক্সড রোপে অতিরিক্ত ট্রাফিক এবং আইস ফলকে উপেক্ষা করে ৪ নভেম্বর ২২ হাজার ৩৪৯ ফিট উচ্চতার ‘আমা দাবালাম’ চূড়ায় পৌছান তিনি।

তৌকির বিশ্বাস করেন, ‍“স্বপ্ন যদি সত্যিকার অর্থে জ্বলে, তবে পাহাড়ও নত হয়। প্রতিটি শিখর আমাদের শেখায়, সীমা কেবল মনেই থাকে, সফলতায় নয়।”

তরুণ এই পর্বতারোহী এবারের স্বপ্ন পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া ‘মাউন্ট এভারেস্ট’। এই লক্ষ্য নিয়েই তিনি এগোচ্ছেন। এখন প্রয়োজন তার সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তৌকির ২০২৬ সালেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় আবারো উড়াতে চান বাংলাদেশের পতাকা।

এর আগে, গত বছরের অক্টোবরে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নেপালের তিনটি ছয় হাজার মিটার পর্বত চূড়া স্পর্শ করেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির। ২৭ দিনের অভিযানে গিয়ে কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই পর্বতগুলো আরোহণ করেন তিনি। পর্বতগুলো হলো ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক, ৬১৬৫ মিটার উচ্চতার আইল্যান্ড পিক ও ৬৪৬১ মিটার উচ্চতার মেরা পিক।

তারও আগে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে তৌকির খুম্বু রিজিওনের ৫০৭৬ মিটার উচ্চতার নাগা অর্জুন এবং ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন।

তৌকির পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার আকরাম হোসেন সাবু-সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতি ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট তিনি। চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল-ই তে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ