মিরপুরে এখনো ধোঁয়া উড়ছে, তীব্র গন্ধ
Published: 15th, October 2025 GMT
২ / ৯ঘটনাস্থলে উৎসুক মানুষের ভিড়
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কঠিন সময়ে রবের আশ্বাস
‘জীবন ফুলশয্যা নয়’—এই প্রবাদটি জীবনের সত্যতা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে। জীবনকে কোনো শয্যার সঙ্গে তুলনা করা যায় না; বরং এটি একটি বিশাল সমুদ্রের সঙ্গে তুলনীয়। এই সমুদ্র মাঝে মাঝে অত্যন্ত শান্ত হয়—ধীর, স্থির, যেন সাঁতার কাটার জন্য আমন্ত্রণ জানায়।
কিন্তু প্রকৃতির মতো জীবনেও নিম্নচাপের আগমন হয়। মাঝারি বা ভারী নিম্নচাপের ফলে সমুদ্র উত্তাল হয়ে ওঠে, এবং তখনই আসে ভয়াবহ ঝড়—সাইক্লোন বা টর্নেডো।
এই টর্নেডো জীবনের অদৃশ্য ধ্বংস ঘটায়। অনেক কিছু উড়িয়ে নিয়ে যায়, যা অন্যরা দেখতে বা বুঝতে পারে না। শুধু সেই ব্যক্তিই তার গভীরতা উপলব্ধি করে, যার জীবন এতে আক্রান্ত হয়।
ঝড় পেরিয়ে গেলে স্থিরতা ফিরে আসে, কিন্তু কিছু জীবন অশান্ত হয়ে থেকে যায়, কিছু হৃদয় ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়। কেউ সহজেই ধ্বংসাবশেষ সামলে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়, কেউ সময় নিয়ে সেই ঝড়ের ধাক্কা সহ্য করে। অতি সুদক্ষ নাবিকের মতো কেউ জীবনতরিকে বিক্ষুব্ধ সমুদ্র থেকে রক্ষা করে, আবার কারও তরি চিরদিনের জন্য অতলে মিলিয়ে যায়।
জীবনের এই প্রচণ্ড টর্নেডোর মুখোমুখি হয়ে ভরসা করা যায় শুধু পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলার ওপর। তিনি সবকিছু দেখেন, জানেন, শোনেন এবং বোঝেন।আরও পড়ুনরব কখনো ভুলে যান না১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫সেই ভয়াবহ ঝড়ের রাতগুলো কারও কারও কাছে দ্রুত পোহায়, কিন্তু কারও কারও কাছে হয় অসীম দীর্ঘ। তখন মনে হয়, ‘রাত পোহাবার কত দেরি, পাঞ্জেরী?’
জীবনের এই প্রচণ্ড টর্নেডোর মুখোমুখি হয়ে ভরসা করা যায় শুধু পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলার ওপর। তিনি সবকিছু দেখেন, জানেন, শোনেন এবং বোঝেন। তিনি ছাড়া কে আছেন বান্দার দুর্বিপাক উপলব্ধি করার, ভেঙে যাওয়া হৃদয়ের আর্তনাদ শোনার?
তিনি তো আল-লাতিফ (সূক্ষ্ম জ্ঞানী) ও আল-খাবির (সর্বজ্ঞ)—প্রচণ্ড টর্নেডো নয়, বরং বান্দার জীবনের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া হালকা বাতাসের শব্দও তিনি টের পান। তীব্র কষ্টের আঘাতে বের হয়ে আসা প্রতিটি দীর্ঘশ্বাস তাঁর দৃষ্টি এড়ায় না।
তিনিই পারেন উত্তাল সমুদ্রকে আবার শান্ত করতে। সমুদ্রের ঝড় যেমন তাঁর সৃষ্টি, তেমনি জীবনের টর্নেডোও তাঁরই সৃষ্টি—হয়তো কোনো ভুলের ফল, অথবা পরীক্ষা। ইসলামি মনোবিজ্ঞানে এ ধরনের কঠিন সময়কে আধ্যাত্মিক ও মানসিক চাপ মোকাবেলার কৌশল হিসেবে দেখা হয়, যা মুসলিমদের মানসিক স্বাস্থ্যকে শক্তিশালী করে। ধৈর্য (সবর) এবং প্রার্থনা কঠিনতার মুখোমুখি হয়ে সাহায্যের মূল উপায় হিসেবে কোরআন ও সুন্নাহে বর্ণিত।
আরও পড়ুনসকালের সবচেয়ে বরকতময় সময় ব্যবহারের ৭ কৌশল৩১ জুলাই ২০২৫আল্লাহ কঠিন সময়ে ধৈর্য ধরতে বলেছেন, ‘অতএব তোমার রবের চূড়ান্ত ফয়সালা পর্যন্ত ধৈর্যসহ অপেক্ষা করো।’ (সুরা কলম, আয়াত: ৪৮)
কঠিনতর বিপদে এই আয়াতটি উচ্চারণ করতে হয়, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৬)
অতএব তোমার রবের চূড়ান্ত ফয়সালা পর্যন্ত ধৈর্যসহ অপেক্ষা করো।সুরা কলম, আয়াত: ৪৮এর পরের আয়াতে দয়ালু রব আশ্বাস দিয়েছেন ‘যারা, তাদেরকে যখন বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। তাদের ওপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৬)
এই আশ্বাসে মনকে ধৈর্যের বন্ধনে বেঁধে রাখা যায়। ইসলামে এই ধৈর্যকে ঘুরে দাঁড়ানোর মূল চাবিকাঠি হিসেবে দেখা হয়, যা কঠিন সময়ে মানসিক স্থিতিশীলতা প্রদান করে।
একদিন নিশ্চয়ই দয়াময় রবের ইচ্ছায় বিপদে আক্রান্ত জীবনের কঠিন ঝড় থেমে যাবে। ঝোড়ো রাতের নিকষ কালো অন্ধকার পেরিয়ে ভোরের রক্তিম সূর্যের মতো স্বস্তির আলো ফুটবে, ইনশা আল্লাহ।
ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে এই কঠিনতাগুলোকে পরীক্ষা হিসেবে গ্রহণ করে সম্প্রদায়ের সমর্থন এবং আল্লাহর ওপর ভরসা মনে দৃঢ়তা তৈরি করে।
আরও পড়ুনআপনার মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা নিচ্ছেন তো২১ জুন ২০২৫