আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে যা বলেছেন অধ্যাপক ইউনূস
Published: 1st, October 2025 GMT
মেহদি হাসান: বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস—জিটিওতে আমার সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
অধ্যাপক ইউনূস: আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মেহদি হাসান: আমরা শেষবার যখন কথা বলেছিলাম, তারপর থেকে অনেক কিছু ঘটেছে। আমার মনে হয়, আমাদের শেষ কথা হয়েছিল ২০১৭ সালে। তখন আপনি একজন সাধারণ নাগরিক ছিলেন। আপনার পরিচয় ছিল শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী একজন অর্থনীতিবিদ। কিন্তু আপনি তখন একটি দেশ পরিচালনা করছিলেন না। এক বছরের কিছুটা বেশি সময় আগে, বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। প্রায় দুই দশক ধরে তিনি আপনার দেশে কার্যত একজন একনায়ক ছিলেন এবং একাধিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। তাঁর বিদায়ে অনেকেই খুশি হয়েছিলেন। তাঁর সরকারের পতনে আপনার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া কী ছিল? সেই দিন বা রাত সম্পর্কে আপনার কী মনে পড়ে। সেই রাতে আপনার কেমন অনুভব হচ্ছিল—ভয়, আশা, নাকি বিস্ময়?
অধ্যাপক ইউনূস: রোমাঞ্চকর, রোমাঞ্চকর। হ্যাঁ, সত্যিই। অবশেষে এটা ঘটল। এটা ছিল অসাধারণ এক খবর।
মেহদি হাসান: আপনি কি ভেবেছিলেন এমনটা ঘটবে?
মুহাম্মদ ইউনূস: না, এটা ছিল সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। বিক্ষোভ চলছিল, যেমনটা আপনি বাংলাদেশে দেখতে পাবেন। কিন্তু এমন কিছু ঘটবে, তা ভাবিনি। পরিস্থিতি খুবই খারাপ ছিল। তিনি দেশ ছাড়ার আগে কী ঘটেছিল, তার বিস্তারিত আমি তখন জানতাম না। তবে শেষ খবরটা ছিল, তিনি চলে গেছেন। সেটি ছিল রোমাঞ্চকর।
মেহদি হাসান: গত এক বছরে বাংলাদেশের মানুষের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? আপনারা বিপ্লবের এক বছর পূর্তি উদ্যাপন করলেন। মাত্রই প্রথম বার্ষিকী পালন করেছেন। বর্তমানে দেশের পরিস্থিতিটা কেমন? এখনও কি আশাবাদ, রোমাঞ্চ ও আশা রয়েছে নাকি পরিবর্তনের ধীরগতির জন্য হতাশা তৈরি হয়েছে?
অধ্যাপক ইউনূস: সবকিছুই আছে। কিছু ঘটছে এই উত্তেজনার পাশাপাশি সব মিলিয়ে হতাশাও আছে। হতাশা—কারণ, মানুষ অভিযোগ করতে ভালোবাসে। এটা একটি সাধারণ বিষয়। তারা আরও চায়। প্রত্যাশার মাত্রা অনেক বেশি। তারা চায় সব কিছু এখনই হোক, আগামীকাল নয়। তাই যদি আজ কিছু না হয়, তাহলে আপনি ভালো নন। বিষয়গুলো এ ধরনের। তবে এটি একটি ভালো দিক। নেতিবাচক নয়। এটি কেবল উচ্চ প্রত্যাশা।
মেহদি হাসান: হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ছাত্র আন্দোলনকারীরা আপনাকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বেছে নিয়েছিলেন। ওই সিদ্ধান্তে কি আপনি অবাক হয়েছিলেন? আর আপনি কেন মনে করেন, তাঁরা আপনাকে চেয়েছিলেন, একজন অরাজনীতিক, একজন অর্থনীতিবিদ এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে বলছি—আশির কোঠায় থাকা একজন ব্যক্তিকে? তারা কেন আপনাকে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বা প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নিলেন?
অধ্যাপক ইউনূস: আমি অবাক হয়েছিলাম কারণ আমি তাদের চিনি না। কখনো তাদের সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। কখনো তাদের সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি। প্রথমে আমার প্রতিষ্ঠানের সহকর্মীদের কাছে একটি বার্তা আসে যে, ছাত্ররা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে। তারা চায়, আপনি দায়িত্ব গ্রহণ করুন। আমি বললাম, তাদের উপেক্ষা করুন। এই আলোচনায় যুক্ত হয়েন না। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল যে, এমনটা হচ্ছে না। পরদিন তারা সরাসরি আমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে। কারণ, আমার সহকর্মীদের মাধ্যমে তাদের কাজটা হচ্ছিল না। তারা আমাকে কল দিয়ে সবকিছু ব্যাখ্যা করেছিল। আমি বলেছিলাম, না, অন্য কাউকে খোঁজো। আমি এর সঙ্গে জড়াতে চাই না। তিন দিন ধরে এই আলোচনা চলল। আমি এটা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছিলাম। আর তারা বারবার অনুরোধ করছিল।
মেহদি হাসান: তখন কিসের জন্য আপনি এটা করলেন?
অধ্যাপক ইউনূস: অবশেষে তারা পরিস্থিতিটা তুলে ধরল। দেখুন, ছাত্ররা রক্ত দিয়েছে, আত্মত্যাগ করেছে, শিশুদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আরও অনেক কিছু ঘটেছে। তারা চায়, আপনি আসুন। এ সবকিছু বাদ দিন। দেশের কী হবে? তারা খুব করে এটি চেয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে তারা যুক্তি তুলে ধরার চেষ্টা করছিল। অবশেষে আমি বললাম, ঠিক আছে, তোমরা যখন এত আত্মত্যাগ করেছ, তাহলে আমি আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করব। আমি দেখব তোমাদের জন্য কী করতে পারি।
মেহদি হাসান: আপনি আত্মত্যাগ ও রক্তপাতের কথা উল্লেখ করেছেন। ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল যে, গত গ্রীষ্মে ছাত্র আন্দোলনে হাসিনার দমনমূলক পদক্ষেপে আনুমানিক ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়েছিলেন। বাংলাদেশ এখন আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনেছে। অবশ্যই আপনি আমার চেয়ে ভালো জানেন যে, তিনি ভারতে গা ঢাকা দিয়ে আছেন। সেখানে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সুরক্ষায় পালিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁকে বাংলাদেশে ফেরানোর জন্য আপনি বারবার অনুরোধ করেছেন। জবাবদিহির জন্য তাঁকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিতে আপনার আহ্বান মোদি উপেক্ষা করায় আপনি কী করেছেন? আপনি কি বিশ্বাস করেন, ভারত কখনও হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে?
অধ্যাপক ইউনূস: তারা যদি নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সম্ভবত তারা তাঁকে রেখে দেবে। যদি আইনি বাধ্যবাধকতা থেকে থাকে, যা তারা এড়াতে পারবে না, তখন পরিস্থিতিটা ভিন্ন হবে।
মেহদি হাসান: তাঁকে রাখার পেছনে ভারতের স্বার্থ কী?
অধ্যাপক ইউনূস: তারা বরাবরই তাঁকে সমর্থন করে আসছে। যারা তাঁর পেছনে আছে, তারা সম্ভবত এখনও আশা করছে যে তিনি পূর্ণ গৌরবের সঙ্গে বাংলাদেশে ফিরে আসবেন, একজন বিজয়ী নেতা হিসেবে ফিরছেন।
মেহদি হাসান: নিউইয়র্ক টাইমস খবর প্রকাশ করেছে যে, তিনি (শেখ হাসিনা) আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভার্চুয়্যাল বৈঠক করছেন। এটা কি আপনাকে উদ্বিগ্ন করে যে, ভারত তাঁকে ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছে এবং আবার ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টার করছে?
অধ্যাপক ইউনূস: আমি ঠিক এভাবে কথাগুলো বলব না। তবে এ সম্ভাবনা রয়েছে যে, বাইরের কিছু শক্তি তাঁকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে সহায়তা করবে। আমরা সব সময় এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
মেহদি হাসান: আপনি কি মোদির সঙ্গে কথা বলেছেন?
অধ্যাপক ইউনূস: আমি মোদির সঙ্গে কথা বলেছি।
মেহদি হাসান: আপনি যখন তাঁকে (শেখ হাসিনা) বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ফিরিয়ে দিতে বললেন, তখন তিনি (মোদি) কী বলেছিলেন?
অধ্যাপক ইউনূস: দুটি বিষয়। প্রথমত, আমি বলেছিলাম, আপনারা যদি তাঁকে রাখতে চান, তাঁর সঙ্গে কী করবেন তা আমি আপনাকে বলতে পারি না। তবে এটা নিশ্চিত করেন যে, তিনি আমাদের সম্পর্কে কথা বলবেন না। তিনি যেন বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে কথা না বলেন।
মেহদি হাসান: দুঃখিত, মোদি আপনাকে এ কথা বলেছিলেন, নাকি আপনি তাঁকে বলেছিলেন?
অধ্যাপক ইউনূস: আমি মোদিকে বলেছিলাম। বলেছিলাম যে অনুগ্রহ করে নিশ্চিত করেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য আপন পর স থ ত বল ছ ল ম কর ছ ন আম র স য গ কর আপন র করছ ল আপন ক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সংবেদনশীল না হলে কেউ ভালো শিল্পী হতে পারে না: জুয়েল আইচ
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রায়ই তরুণদের দেখা যায় সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে ভুগতে। ফলে অনেক সময় যথেষ্ট মেধা, আগ্রহ ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা ক্যারিয়ারে ভালো করতে পারেন না। তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা জোগাতে প্রথম আলো ডটকম ও প্রাইম ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পডকাস্ট শো ‘লিগ্যাসি উইথ এমআরএইচ’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ রিদওয়ানুল হকের সঞ্চালনায় একাদশতম পর্বে অতিথি হিসেবে অংশ নেন বিশ্বখ্যাত জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ। আলোচনার বিষয় ছিল ‘শিল্প, মুক্তিযুদ্ধ এবং মানবতার সংমিশ্রণে গঠিত এক অনন্য লিগ্যাসি’।
‘মানুষ তার আশার সমান সুন্দর, বিশ্বাসের সমান বড় এবং কাজের সমান সফল। কাজই মুক্তি। তবে আশাও বড় রাখতে হবে। আশা না থাকলে কাজ হবে না।’ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তরুণদের উদ্দেশে কথাগুলো বলেন জুয়েল আইচ। পডকাস্ট শোর এ পর্ব প্রচারিত হয় গতকাল শনিবার প্রথম আলোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে।
পডকাস্টের শুরুতেই সঞ্চালক জানতে চান, মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে প্রথম যেদিন জাদু দেখালেন, সেই অনুভূতি কেমন ছিল?
উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সব বাদ দিয়ে যুদ্ধে যোগ দিই। আমরাই খুব সম্ভবত প্রথম পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করি। আমি শৈশব থেকেই জাদু দেখাই। তবে মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে জাদু দেখানোর সেই অনুভূতিটি ছিল একেবারেই ম্যাজিক্যাল।’
প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, শিল্পকে সাহস করে অস্ত্রতে পরিণত করার এই আত্মবিশ্বাস কোথা থেকে এল?
জুয়েল আইচ বলেন, ‘এটা আত্মবিশ্বাস নয়। আমি অসম্মান সহ্য করতে পারি না। আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখছিলাম, তারা (পাকিস্তান) আমাদের বিভিন্নভাবে অসম্মান করে আসছে। কখনো গানে, কখনো ছবি এঁকে কিংবা কবিতার ভাষায় আমরা সব সময় এর প্রতিবাদ করে এসেছি। এভাবে করেই শেষ পর্যন্ত আমরা মুক্তিযুদ্ধে নেমে গেলাম।’
জুয়েল আইচকে কেউ বলেন ম্যাজিশিয়ান, আবার কেউ বলেন মিউজিশিয়ান। তবে জুয়েল আইচ একজন দার্শনিকও বটে। জাদুর মোহনীয়তা আর বাস্তবতার যে রূঢ় চিত্র—এই দুটো আপনার জীবনে কেমন প্রভাব ফেলেছে?
সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘বাস্তবতাকে আমরা বলে থাকি “কঠিন” আর স্বপ্ন তো আমরা আকাশসমান ভাবতে পারি। একদম রংধনুর মতো সাত রং। এই দুটোকে যদি কেউ আয়ত্ত না করতে পারে, তবে তার জীবন কিন্তু সেখানেই শেষ। সে বেঁচে থাকবে কিন্তু মরার মতো।’ তিনি বলেন, ‘সে জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দরকার। যেমন আপনি কোনোভাবেই আমাকে দুঃখী বানাতে পারবেন না। আমি দুঃখ পাই না, তবে বারবার আমাকে খ্যাপাতে থাকলে আমি রুখে দাঁড়াই।’
জুয়েল আইচ কখনোই পরিপূর্ণ প্রস্তুতি ছাড়া স্টেজে ওঠেন না। সঞ্চালক জানতে চান, এর পেছনে কারণ কী?
জুয়েল আইচ বলেন, প্রস্তুতি ছাড়া কোনো কাজ সুন্দরমতো হয় না। প্রস্তুতি ছাড়া যদি কেউ কিছু করে, তবে সেগুলো অনেক নিম্নমানের হবে। তিনি বলেন, ‘আমি একটি বাঁশি দিয়ে সব রাগ বাজাতে পারি। এটা কি এক দিনেই সম্ভব!’
আপনার পারফরম্যান্সের সময় আপনি মাঝেমধ্যে নিঃশব্দ হয়ে যান। যেখানে কোনো উদ্যম নেই। এই ‘সাইলেন্স’-এর কারণটা কী?
সঞ্চালক জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, শব্দের চেয়ে নিঃশব্দের ভাষা বেশি গভীর। একটি পেইন্টিং, যেখানে কোনো শব্দ থাকে না কিন্তু কত কিছু বলে দেয়! দেখবেন কেউ অনেক খেপে গেলে নীরব হয়ে যায়। আসলে শব্দে যা বলা যায়, নিঃশব্দে তার চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব।
বর্তমানের এই ডিজিটাল যুগে সবকিছুই হাতের নাগালে, এমনকি জাদুও। জাদু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে আসার পর এর আবেদন কিছুটা কমে যাচ্ছে কি না? জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, খালি চোখে দেখলে তা আসলেই কমে যাচ্ছে। কারণ, এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে যে জাদুগুলো দেখানো হচ্ছে, তা দেখে মানুষ বিস্মিত। তিনি বলেন, ‘তারা ভাবছে, আমরা আগে যেসব জাদু দেখেছি, এগুলো তো তার থেকেও বিস্ময়কর। কিন্তু তারা হয়তো বুঝতে পারছে না, এখন সবকিছুর সঙ্গে মিশে গেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।’
সঞ্চালক এরপর প্রশ্ন করেন, আপনি একসময় ‘পালস স্টপিং’ ধরনের ইলিউশন বন্ধ করেছিলেন। এর পেছনে উদ্দেশ্য কী ছিল?
জুয়েল আইচ বলেন, ‘এই পালস স্টপিংয়ের মাধ্যমে আমি পুরো দেশজুড়ে এক বিস্ময় সৃষ্টি করেছিলাম। দলে দলে মানুষ এটি দেখতে আসত। কিন্তু এসব দেখে মানুষ অনেক বেশি আতঙ্কিত হতো, অনেক মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়ত। একবার একজন অনেক বড় পালোয়ান এটি দেখতে এসে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। সেদিন শো শেষ করেই আমি আমার টিমকে বলি, এই ম্যাজিক আর হবে না। কারণ, এই ম্যাজিক এত এত মানুষকে ডেকে আনছে বটে কিন্তু এটি মাত্রা অতিক্রম করে ফেলছে। যা মোটেও ঠিক নয়।’
প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, তাহলে কি একজন শিল্পীকে সংবেদনশীলও হতে হয়?
‘অবশ্যই।’ জুয়েল আইচ বলেন, একজন শিল্পীকে অবশ্যই সংবেদনশীল হতে হবে। সংবেদনশীল না হলে তিনি ভালো শিল্পী হতে পারবেন না।
আপনি যেমন বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতাদের সামনে পারফর্ম করেছেন, তেমনি এমন শিশুদের জন্যও জাদু দেখিয়েছেন, যারা কখনো টিকিট কিনে শো দেখতে পারে না। আপনার চোখে আসল মর্যাদা কোথায়—বৃহৎ মঞ্চে, নাকি একটিমাত্র বিস্মিত মুখে?
সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে জুয়েল আইচ বলেন, ‘আসলে মঞ্চ ব্যাপার নয়। আমি আমার জাদুতে বিস্মিত এবং মুগ্ধ হয়ে থাকা দেখতে ভালোবাসি। শুধু বিস্ময় নয়, বিস্ময়ের সঙ্গে মুগ্ধতা আমার ভালো লাগে।’
আরও পড়ুননীতি আর মূল্যবোধ শক্ত থাকলে কেউ থামাতে পারবে না: রুবাবা দৌলা১২ অক্টোবর ২০২৫পডকাস্টের শেষ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান, আমরা আরেকজন জুয়েল আইচ কবে পাব?
মুচকি হেসে জুয়েল আইচ বলেন, ‘যখন সেই উদ্যম নিয়ে কেউ কাজ করবে, ঠিক তখন। সে হয়তো আমাকেও ছাড়িয়ে যাবে। শুধু ম্যাজিকে নয়, সব দিক দিয়েই।’
আরও পড়ুনবাবা প্রথমে আমাকে অফিস সহকারীর কাজ দিয়েছিলেন: হাতিলের চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমান০৫ অক্টোবর ২০২৫