গাজায় যুদ্ধবিরতির পরও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইসিজেতে মামলা চালিয়ে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা
Published: 15th, October 2025 GMT
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেছেন, গাজার যুদ্ধবিরতি হলেও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাঁর দেশের দায়ের করা মামলার ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। গতকাল মঙ্গলবার কেপটাউনের পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
গাজায় জাতিগত নিধনের অভিযোগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলাটি করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ থামানোর লক্ষ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চলছে। তবে তা সত্ত্বেও দক্ষিণ আফ্রিকা ২০২৩ সালে শুরু করা মামলাটি চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় সংকল্পে অটল রয়েছে।
পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তব্যে রামাফোসা বলেন, ‘যে শান্তিচুক্তি হয়েছে, সেটিকে আমরা স্বাগত জানাই। এটা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে চলমান মামলার ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।’
দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মামলাটি দায়ের করে। দেশটির অভিযোগ, গাজায় জাতিগত নিধন চালাচ্ছে ইসরায়েল।
আরও পড়ুনইসরায়েলের আরও ৪ জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করল হামাস৬ ঘণ্টা আগে২০২৪ সালের অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার ৫০০ পৃষ্ঠার একটি বিস্তারিত আবেদন দাখিল করে। ইসরায়েলের পাল্টা যুক্তি জমা দেওয়ার শেষ সময় ২০২৬ সালের ১২ জানুয়ারি। ২০২৭ সালে মৌখিক শুনানি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২৭ সালের শেষ দিকে বা ২০২৮ সালের শুরুতে চূড়ান্ত রায় প্রকাশ করা হতে পারে।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত তিনটি অস্থায়ী নির্দেশ জারি করেছে। এর আওতায় ইসরায়েলকে জাতিগত নিধন বন্ধ ও গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর সুযোগ দিতে বলা হয়েছে। তবে ইসরায়েল অনেকাংশেই এই নির্দেশগুলো মানতে ব্যর্থ হয়েছে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলেছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
২০২৪ সালের অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার ৫০০ পৃষ্ঠার একটি বিস্তারিত আবেদন দাখিল করে। ইসরায়েলের পাল্টা যুক্তি জমা দেওয়ার শেষ সময় ২০২৬ সালের ১২ জানুয়ারি। ২০২৭ সালে মৌখিক শুনানি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২৭ সালের শেষ দিকে বা ২০২৮ সালের শুরুতে চূড়ান্ত রায় প্রকাশ করা হতে পারে।মামলা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে রামাফোসা যে ঘোষণা দিয়েছেন তা নিয়ে জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার ফ্রান্সেসকা আলবানিজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধা, ক্ষতিপূরণ এবং পুনরাবৃত্তি রোধের নিশ্চয়তা ছাড়া কোনো শান্তিই টেকসই নয়।’
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো স্যানশেজ ইসরায়েলের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত। তিনিও একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। স্প্যানিশ রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘যুদ্ধবিরতির মানে ইসরায়েলের দায়মুক্তি হতে পারে না। এখানে দায়মুক্তির সুযোগ নেই।’
আরও পড়ুনট্রাম্পের ওপর কেন হামাস এতটা আস্থা রাখছে২১ ঘণ্টা আগেস্যানশেজ মনে করেন, জাতিগত নিধনের ঘটনায় মূল দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ কিছু মানবাধিকার সংস্থা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় জাতিগত নিধন চালানোর অভিযোগ করেছে। গত মাসে জাতিসংঘ সমর্থিত একটি তদন্ত কমিশন বলেছে, গাজায় ইসরায়েল জাতিগত নিধন চালিয়েছে।
তবে গাজায় জাতিগত নিধন চালানোর অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল।
স্পেন, আয়ারল্যান্ড, তুরস্ক ও কলম্বিয়াসহ কিছু দেশ ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক আদালতের মামলায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে সমর্থন দিয়েছে বা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা দ্য হেগ গ্রুপ নামের একটি জোটে সহসভাপতিত্ব করছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে গঠিত এই জোটটি আইনি, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে ইসরায়েলকে জবাবদিহির আওতায় আনার চেষ্টা করছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ২০২৭ স ল ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে ৬ ফিলিস্তিনি নিহত
উত্তর গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে ছয় ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির মধ্যেই আজ মঙ্গলবার ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়।
ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের সেনাবাহিনীর কাছাকাছি এসেছিলেন কয়েকজন। সন্দেহভাজন হিসেবে তাঁদের গুলি করা হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ছয়জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। হামাসের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় করা যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে ইসরায়েলি সেনারা নির্ধারিত সীমায় অবস্থান করছেন। সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা ওই সীমা অতিক্রম করেছিলেন, যা যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন। গাজার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজ গাজা উপত্যকার দুটি পৃথক ঘটনায় ইসরায়েলি সেনারা ছয়জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছেন।
সোমবার হামাস গাজা থেকে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেয় এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনি বন্দীদের ফেরত দেয় ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই বছর ধরে চলা গাজা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫১ জন জিম্মি হয়েছিলেন। এর জবাবে দুই বছরের ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে গাজার প্রায় ৬৮ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। হাজারো মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।
চার জিম্মির মরদেহ শনাক্তইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, হামাসের কাছ থেকে ফেরত পাওয়া চার জিম্মির মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন নেপালের শিক্ষার্থীও রয়েছেন। সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে জানানো হয়, নিহতদের মধ্যে দুজনের নাম গাই ইলুজ (ইসরায়েলি নাগরিক) এবং বিপিন জোশি (নেপালের শিক্ষার্থী)। অন্য দুই জিম্মির নাম তাঁদের পরিবারের অনুরোধে প্রকাশ করা হয়নি।
২৬ বছর বয়সী গাই ইলুজ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-নেতৃত্বাধীন হামলার সময় নোভা মিউজিক ফেস্টিভ্যালে অংশ নিচ্ছিলেন। হামলার পর তিনি একটি জিপে করে পালানোর চেষ্টা করেন এবং পরে এক গাছে লুকিয়ে পড়েন। সেখান থেকেই তিনি শেষবারের মতো পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, এরপরই তাঁকে ধরে গাজা উপত্যকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
২২ বছর বয়সী বিপিন জোশি নেপালের কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির একজন সদস্য ছিলেন। হামাস হামলার তিন সপ্তাহ আগে তিনি ইসরায়েলে পৌঁছেছিলেন। তাঁকে কিবুটজ আলুমিম এলাকা থেকে অপহরণ করা হয়। হামলাকারীরা আসার কিছুক্ষণ আগে তাঁকে থাই শ্রমিকদের সঙ্গে আশ্রয় নিতে দেখা যায়।
সোমবার হামাস এই চার মরদেহ ফেরত দেয়। এখনো হামাস যোদ্ধাদের কাছে ২৪ জন জিম্মির মরদেহ রয়েছে, যেগুলো যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ফেরত দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গাজা পুনর্গঠনে উদ্যোগজাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন আরব ও ইউরোপীয় দেশ গাজা পুনর্গঠনের জন্য প্রস্তাবিত ৭০ বিলিয়ন ডলার তহবিলে সহযোগিতা করতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
ইউএনডিপির কর্মকর্তা জ্যাকো সিলিয়ার্স আজ জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে বেশ ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছি।’ তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি। সিলিয়ার্সের হিসাবে, দুই বছরব্যাপী ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের ফলে গাজায় অন্তত ৫৫ মিলিয়ন টন ধ্বংসাবশেষ তৈরি হয়েছে, যা পুনর্গঠনের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
মধ্যপ্রাচ্য সম্মেলন ‘প্রতীকী’ট্রাম্প সোমবার মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে ২০টির বেশি দেশের নেতাদের সঙ্গে যে সম্মেলন করেছেন, বিশ্লেষকদের মতে তা ছিল ‘প্রতীকী’। বাস্তব কোনো অগ্রগতি হয়নি। অবশ্য সম্মেলনে ট্রাম্প নতুন কিছু তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি জানান, গাজা নিয়ে তাঁর ২০ দফা পরিকল্পনার অবশিষ্ট অংশ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে সেই আলোচনা কোথায়, কীভাবে এবং কবে অনুষ্ঠিত হবে, সে সম্পর্কে কোনো বিস্তারিত তথ্য দেননি।
সম্মেলনে ইসরায়েল বা হামাস—কোনো পক্ষের প্রতিনিধিই উপস্থিত ছিলেন না। ফলে এই বৈঠকে বাস্তব কোনো সমঝোতা বা অগ্রগতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। আলোচনার প্রধান বাধা হিসেবে রয়ে গেছে তিনটি বড় প্রশ্ন। এগুলো হলো হামাসের ভবিষ্যৎ কী হবে, ইসরায়েলি সেনা কবে গাজা থেকে সরে যাবেন এবং যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা কে শাসন করবে?
এসব ইস্যু সমাধানে দীর্ঘ ও জটিল আলোচনার প্রয়োজন হবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা। ট্রাম্প সম্মেলনে সফলতা দাবি করলেও লক্ষণীয় বিষয় হলো, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, যা এই অঞ্চলের দীর্ঘদিনের সংঘাতের মূল কেন্দ্রবিন্দু—সে বিষয়ে একটিও শব্দ উচ্চারণ করেননি তিনি।