পশ্চিমাঞ্চল রেলে ভয়াবহ দুর্নীতি, সাবেক ২ জিএমসহ আসামি ১৮ জন
Published: 15th, October 2025 GMT
বাজারে একটি তালার দাম ১৭৩ টাকা, কিন্তু সেটি কেনা হয়েছে ৫ হাজার ৫৯০ টাকায়। ২৬০ টাকার বালতি কেনা হয়েছে ১ হাজার ৮৯০ টাকায়, ৬৫ টাকার বাঁশির জন্য দেওয়া হয়েছে ৪১৫ টাকা, আর ৯৮ টাকার ঝাড়ু কেনা হয়েছে ১ হাজার ৪৪০ টাকায়। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের কেনাকাটায় এমন ভয়াবহ দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এ ঘটনায় বুধবার (১৫ অক্টোবর) মামলা করেছে দুদক। মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৮ জনকে। এর মধ্যে পশ্চিম রেলের সাবেক দুই মহাব্যবস্থাপকও (জিএম) রয়েছেন।
দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো.
এতে আসামিদের বিরুদ্ধে কেনাকাটায় মোট দুই কোটি ১৮ লাখ ১৪ হাজার ১৯৬ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আসামিরা হলেন- অবসরে যাওয়া সাবেক মহাব্যবস্থাপক খোন্দকার শহিদুল ইসলাম ও মজিবুর রহমান, সাবেক সিওসি খায়রুল আলম ও বেলাল হোসেন সরকার, সাবেক এসিওএস জাহিদ কাওছার, তৎকালীন ডেপুটি সিসিএম ফুয়াদ হোসেন আনন্দ, তৎকালীন ডিএফএ শ্যামলী রাণী রায়, তৎকালীন উচ্চমান সহকারী আলামিন তালুকদার, সাবেক ডিএফএ (অর্থ) আলমগীর হোসেন;
তৎকালীন সিওপিএস এএমএম শাহনেওয়াজ, তৎকালীন এফএ অ্যান্ড সিএও শরিফুল ইসলাম, তৎকালীন ডেপুটি সিওপিএস হাসিনা খাতুন, সাবেক এফএ অ্যান্ড সিএও মসিহ উল হাসান, সাবেক এসিসিএম শেখ আব্দুল জব্বার, সাবেক অতিরিক্ত এফএ অ্যান্ড সিএও গোলাম রব্বানী, তৎকালীন অতিরিক্ত এফএ অ্যান্ড সিও গোলাম রহমান, সাবেক এফএ অ্যান্ড সিও সরোজ কান্তি দেব এবং সাবেক সিসিএম মিহির কান্তি গুহ।
দুদক জানিয়েছে, এই কর্মকর্তারা বিভিন্ন পণ্য কেনার ক্ষেত্রে বাজারদরের চেয়ে ১৫ থেকে ৩৩ গুণ বেশি দাম পরিশোধ করেছেন। রেলের অভ্যন্তরীণ তদন্তেই এসব অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়। তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ভুবন চন্দ্র বিশ্বাস।
দুদকের এনফোর্সমেন্ট অভিযানে দেখা যায়- একটি তালা কিনতে ঠিকাদারকে পরিশোধ করা হয়েছে ৫ হাজার ৫৯০ টাকা। যেখানে ভ্যাট, আয়কর ও মুনাফাসহ বাস্তবিক মূল্য ছিল মাত্র ১৭৩ টাকা। শুধু তালা কেনাতেই দুর্নীতি হয়েছে ১০ লাখ ৮৩ হাজার ৪০০ টাকার।
অন্যদিকে, ২৬০ টাকার বালতি ১ হাজার ৮৯০ টাকায়, ৬৫ টাকার বাঁশি ৪১৫ টাকায় এবং ৯৮ টাকার ঝাড়ু ১ হাজার ৪৪০ টাকায় কিনে লুট করা হয়েছে ১৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা।
একইভাবে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে অফিসে ৫০টি ভিআইপি পর্দা কিনতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৪৪ লাখ ৪১ হাজার ৩০০ টাকা, লাগেজ ফিতাসহ ওয়াগন কার্ড কেনায় ২৬ লাখ ৩৭ হাজার ২৫০ টাকা এবং ভিজিটিং চেয়ার, পেডাল ডাস্টবিন, লাগেজ ট্রলি, পাপোশ, ফটোকপিয়ার, স্টিল ফ্রেম চেয়ার, লেদার ক্যাশ ব্যাগসহ আরো ১৩ ধরনের পণ্য কেনায় ১ কোটি ২৮ লাখ ৫৩ হাজার ৪৪৬ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
মোট চারটি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ১৭ ধরনের পণ্য কেনাকাটায় আত্মসাতের পরিমাণ দাঁড়ায় দুই কোটি ১৮ লাখ ১৪ হাজার ১৯৬ টাকা।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাক্কলন কমিটি বাজারদর যাচাই না করেই প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ১৫ থেকে ৩৩ গুণ পর্যন্ত বেশি দর নির্ধারণ করে দরপত্র আহ্বান করে। ১৬৬টি তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৬টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয় এবং তারাই কার্যাদেশ পায়। মূল্যায়ন কমিটি বাজারদর যাচাই না করেই ইচ্ছাকৃতভাবে অধিক মূল্যের দর গ্রহণ করে।
দুদক বলছে, অনুমোদনকারী কর্মকর্তা দরপত্র বাতিল বা পুনরায় আহ্বান করার ক্ষমতা থাকলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে অনিয়মিতভাবে দরপত্র অনুমোদন দেন এবং ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। প্রাক্কলন কমিটি, মূল্যায়ন কমিটি, অনুমোদনকারী কর্মকর্তা ও ঠিকাদাররা পরস্পর যোগসাজশে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এ কারণেই সংশ্লিষ্ট সবাইকে আসামি করা হয়েছে।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বলেন, ‘‘মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এখন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে, এরপর পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে।’’
ঢাকা/কেয়া/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এফএ অ য ন ড স কর মকর ত তৎক ল ন দরপত র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
টোল আদায়ে অনিয়মের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায়ের কাজে চুক্তিগত অনিয়ম, দরপত্রে কারসাজি ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ রোববার সংস্থাটির ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১–এ দুদকের সহকারী পরিচালক তানজিল হাসান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) এ তথ্য জানান।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে ‘কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম লিমিটেড’কে (সিএনএস) উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। টাকার অঙ্কে কাজের মূল্য নির্ধারণ না করে বরং মোট আদায়কৃত টোলের ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করা হয়। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি মোট ৪৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বিল তুলেছে। দুদক বলছে, এ প্রক্রিয়ায় সরকারের প্রায় ৩০৯ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ওবায়দুল কাদের ও আনিসুল হককে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া সাবেক প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক সচিব এম এ এন ছিদ্দিক, অতিরিক্ত সচিব ফারুক জলিল, উপসচিব মোহাম্মদ শফিকুল করিম, প্রধান প্রকৌশলী ফিরোজ ইকবাল ও ইবনে আলম হাসান, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আফতাব হোসেন খান ও আবদুস সালাম এবং সিএনএস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনীর উজ জামান চৌধুরী, পরিচালক সেলিনা চৌধুরী ও ইকরাম ইকবালকেও আসামি করা হয়েছে।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, যা দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
আরও পড়ুনমেঘনা–গোমতী, শাহ আমানতসহ সওজের ২৬ সেতুতে ব্যয়ের বহুগুণ আয়, তবু টোল ০৯ নভেম্বর ২০২৪দুদকের মামলায় বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে সিএনএসকে টোল আদায়ের দায়িত্ব দিতে আগের দরপত্র ‘ইচ্ছাকৃতভাবে বাতিল’ করা হয়। এরপর ‘একক উৎসভিত্তিক’ দরপত্র আহ্বান করে কেবল সিএনএসের সঙ্গে আলোচনা করে পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি করা হয়। টাকার অঙ্ক নির্ধারণের পরিবর্তে মোট টোল আদায়ের ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে (ভ্যাট ও আয়কর বাদে) সার্ভিস চার্জ ধার্য করা হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, ২০১০-১৫ মেয়াদে একই সেতুর টোল আদায়ের দায়িত্বে ছিল এমবিইএল-এটিটি। তারা টোল আদায়ের কাজটির জন্য মাত্র ১৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা নিয়েছিল। এরপর সিএনএসের পর ২০২২-২৫ মেয়াদে ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে ৬৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকায় টোল আদায়ের কাজটি দেওয়া হয়, যা পাঁচ বছরে রূপান্তর করলে দাঁড়ায় ১১২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
এর তুলনায় সিএনএস একই মেয়াদের জন্য প্রায় পাঁচ গুণ বেশি বিল তোলে এবং তথাকথিত ‘নতুন প্রযুক্তি স্থাপন ও অবকাঠামো ব্যয়’ বাবদ আরও ৬৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা দাবি করে। দুদক বলছে, এভাবেই সরকারের মোট আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
আরও পড়ুনআনিসুলের প্রভাব, কাদেরের আশীর্বাদে টোল আদায়ে ব্যবসা সিএনএসের১১ নভেম্বর ২০২৪